এক বছর হতে চলল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরির কাজ শুরুই করা যায়নি। বিধায়কদের মাধ্যমে বাড়ি তৈরির প্রকল্প ‘অধিকার’-এর এমনই দশা পশ্চিম মেদিনীপুরে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও আলোচনা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে বিধায়কদের। অন্য দিকে, প্রকল্প রূপায়ণে বিধায়কেরা ব্যর্থ হওয়ায় এ বার এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে জেলা পরিষদকে। চলতি আর্থিক বছরে জেলা পরিষদকে অধিকার প্রকল্পে ১৪০৬টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ ব্যাপারে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ অবশ্য বলেন, “মানুষ জেলা পরিষদের কাছ থেকেও তো বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতা চান। তাই জেলা পরিষদও যাতে এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে পারে তা জানিয়ে আবেদন করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বাড়ি তৈরির অনুমতি দিয়েছেন।”
এই প্রকল্পে আগে বাড়ি পিছু ৪৮ হাজার টাকা দেওয়া হত উপভোক্তাকে। এখন তা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। কোনও একটি গ্রামে এই প্রকল্পে ৪৮ হাজার টাকার বাড়ি তৈরি হয়ে থাকলে সেই উপভোক্তা যে ক্ষোভ দেখাবেন তা বলার অপেক্ষা থাকবে না। বিশেষত, যে সব বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়নি বা সবে শুরু হয়েছে এমন ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেবে আরও বেশি। যদি বাড়ি তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে যেত, তাহলে এই বিতর্ক অনেকটাই এড়ানো যেত বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের অভিমত। এক্ষেত্রে যে অনেক ঝক্কি পোয়াতে হবে তা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছেন সকলে। তাই এখন থেকেই এই বিষয়ে মানুষকে বোঝানোর পাশাপাশি বিধায়কেরা যাতে তাঁদের বরাদ্দ অর্ধসমাপ্ত কাজগুলি দ্রুত শেষ করে ফেলেন সে দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে।
তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই অধিকার প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য বিধায়কদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেলার ১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল ৮টিতে জয়লাভ করে। বিধায়কদের তৈরি করা তালিকা মেনে ১৬৮৫টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, এক বছর হতে চললেও এখনও বাড়ি তৈরির কাজ করতে পারেননি বিধায়কেরা। মাত্র ৫৪৬টি বাড়ির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তির টাকা খরচ না করতে পারায় ১১৩৯টি বাড়ির দ্বিতীয় কিস্তির টাকাই ছাড়া হয়নি! কেন বাড়ি তৈরির প্রকল্প শেষ করতে এত দেরি হচ্ছে? গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের সময় দীর্ঘদিন কাজ করা যায়নি। তাই দেরি হচ্ছে। তবে এ বার প্রথম দফার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দফার কাজের জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে।”
বিধায়ক এই যুক্তি দিলেও তা সাধারণ মানুষ অবশ্য তা মানতে নারাজ। অভিযোগ, উদাসীনতার কারণেই প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হচ্ছে। কারণ, যে কোনও চালু প্রকল্প নির্বাচনী বিধিভঙ্গের আওতায় পড়ে না। ওই সময় কেবলমাত্র নতুন করে কাজ করার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ রয়েছে। মূলত, কাদের বাড়ি দেওয়া হবে, তাঁরা দলের প্রকৃত সমর্থক কিনা, এ সব দেখতে গিয়েই দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেওয়ায় প্রকল্প রূপায়ণে দেরি বলে অভিযোগ। তবে জেলা পরিষদ এ বার যে বরাদ্দ পেয়েছে তা রূপায়িত করতে দেরি করা হবে না বলেই নির্দেশ জারি করেছেন জেলা সভাধিপতি। সভাধিপতি বলেন, “ইতিমধ্যেই আমরা ব্লক স্তরে ওই টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। দ্রুত গতিতে তালিকা তৈরি করে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। আমরা চাই, গরিব মানুষ যাতে কোনও ভাবেই বঞ্চিত না হন।” কতদিনে প্রকল্প শেষ হবে তা দেখার পরেই অবশ্য জানা যাবে জেলা পরিষদও এই প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারল কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy