Advertisement
E-Paper

মমতার সভা পিছোল, হিমঘরে গেল আলু-ডিম

আলু এসে গিয়েছে। ভ্যান থেকে সাবধানে নামানো হচ্ছে টোম্যাটোর বস্তা। শিল্পতালুকের খোলা মাঠে মঞ্চ বাঁধার তদারকির ফাঁকে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি দীনেন রায় পাশে দাঁড়ানো দলীয় কর্মীর কাছে জেনে নিচ্ছেন, “হ্যাঁরে, ডিম আর বাঁধা কপির বায়না হয়ে গেছে তো?” ফোনটা এল তখনই। একটু বিরক্তি নিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে স্ক্রিনে চোখ পড়তেই গলা নেমে এল দীনেনবাবুর“বলুন দাদা?” ও প্রান্ত থেকে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির বার্তা এল, ‘জরুরি কাজে আটকে পড়েছেন দলনেত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৫
খড়্গপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় দলীয় নেতা কর্মীদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য মজুত করা সব্জি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

খড়্গপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় দলীয় নেতা কর্মীদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য মজুত করা সব্জি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

আলু এসে গিয়েছে। ভ্যান থেকে সাবধানে নামানো হচ্ছে টোম্যাটোর বস্তা। শিল্পতালুকের খোলা মাঠে মঞ্চ বাঁধার তদারকির ফাঁকে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি দীনেন রায় পাশে দাঁড়ানো দলীয় কর্মীর কাছে জেনে নিচ্ছেন, “হ্যাঁরে, ডিম আর বাঁধা কপির বায়না হয়ে গেছে তো?”

ফোনটা এল তখনই। একটু বিরক্তি নিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে স্ক্রিনে চোখ পড়তেই গলা নেমে এল দীনেনবাবুর“বলুন দাদা?” ও প্রান্ত থেকে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির বার্তা এল, ‘জরুরি কাজে আটকে পড়েছেন দলনেত্রী। শনিবার নয়, সভা পিছিয়ে যাচ্ছে,

৩০ ডিসেম্বর।’

ম্যারাপ বাঁধা শেষ। রঙিন কাপড়ে ঢেকে দেওয়ার কাজটুকুর অপেক্ষা। আনাজের বস্তা আসতে শুরু করেছে। বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে জায়েন্ট এলইডি স্ক্রিনের। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠিক এই অবস্থায় থমকে গেল মুখ্যমন্ত্রীর খড়্গপুর সফর। কেন?

দীনেনবাবুর ব্যাজার মুখে ব্যাখ্যা, “দলনেত্রীর জরুরি কিছু কাজ পড়ে গিয়েছে।” মঞ্চে অনর্গল পেরেক ঠোকার শব্দে সেই ব্যাখ্যা যেন ধামাচাপা পড়ে গেল।

হাজার পঞ্চাশ লোকের পাত পেড়ে খাওয়া, চাড্ডিখানি কথা তো নয়! মেনুতে ভাত, ডাল, বাঁধাকপির ঘন্ট, ডিমের ডালনা আর শেষপাতে চাটনি। রূপনারায়ণপুর মৌজার বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের এক কোনে ত্রিপল খাটিয়ে অস্থায়ী রান্না ও ভাঁড়ার ঘরে ইতিমধ্যেই মজুত হয়েছে, ৮০ কুইন্টাল বাঁধাকপি, ৮০ বস্তা আলু, ২০ কুইন্টাল টোম্যাটো। খড়্গপুর শহর থেকে ৬০ হাজার ডিম বোঝাই ট্রাকও রওনা দিয়েছিল। এলইডি-র বরাত পেয়েছিলেন মেদিনীপুরের ডেকরেটার সুবীর সামন্ত। বিরক্তি লুকোচ্ছেন না তিনি, “সব কাজ এগিয়ে রেখেছিলাম। শুধু ‘ফিট’ করা বাকি। এখন ঝামেলা সামলাও!”

ঝামেলা কি আর দলীয় কর্মীদের পিছু তাড়া করছে না?

জেলার কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত ঘোষ অবশ্য বলছেন, “না না ঝামেলার কী আছে, এ সব আনাজপাতি তো ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। কাঁচামাল হিমঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।”কিন্তু বাঁধা মঞ্চের বাড়তি দশ দিনের ভাড়া তো গুনতে হবে? দীনেনবাবুর জবাব, “বাড়তি ব্যয় কর্মীরাই ভাগ করে নেব।” ডেকরেটরের ভাড়া? জেলা পরিষদের দলনেতা অজিত মাইতি অবশ্য ডেকরেটরকে ‘দলীয় কর্মী’ হিসেবে চিনিয়ে দিচ্ছেন। বলছেন, “ওঁরা তো দলের ঘনিষ্ঠ। বাড়তি ভাড়া কি নেবে?”

সভার আয়োজন সম্পূর্ণ, অথচ আচমকাই মমতা পিছিয়ে দিয়েছেন তাঁর সফর। এ ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। বছর দুয়েক আগে নদিয়ার হরিণঘাটায় প্রশাসনিক সভার জন্য কৃষি দফতরের ফার্ম হাউসের মাঠে মঞ্চ বাঁধা থেকে পুলিশি আয়োজন, সবই হয়ে গিয়েছিল। তবে সে বারেও ‘জরুরি’ কাজে উত্তরবঙ্গে চলে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সভা পিছিয়ে গিয়েছিল দশ দিন। তবে সে ক্ষেত্রে দল নয়, দশ দিন ধরে পুলিশি আয়োজন এমনকী রাতভর জেনারেটর চালিয়ে সভাস্থল আগলে রেখেছিল জেলা পুলিশ।

আর এ বার?

এ দিন মমতার কর্মিসভার প্রস্তুতি দেখে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “সভা পিছিয়ে গেলেও পুলিশকর্মীরা যেমন আছেন, তেমনই মোতায়েন থাকবেন।”

কিন্তু সভা পিছিয়ে দেওয়া কি খুব জরুরি ছিল?

প্রদ্যোতবাবু বলছেন, “যা শুনেছি, দিদির এখনই দিল্লি থেকে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তাই কর্মিসভা পিছোন হল।” দলেরই একটি সূত্রে অবশ্য সে কথা মানছে না। দলের অন্দরের খবর, ২৯ ডিসেম্বর জেলা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত জঙ্গলমহল কাপের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রীর। মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। রাতে সার্কিট হাউসে থেকে পরের দিন, ৩০ ডিসেম্বর রূপনারায়ণপুরে সাংগঠনিক সভা করবেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষও বলছেন, “২৯ ডিসেম্বর জঙ্গলমহল কাপের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর আসার কথা।”

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানান, দশ দিনের মধ্যে দু-দু’বার পশ্চিম মেদিনীপুর সফর চাইছেন না দলনেত্রী। তাই বছরের শেষ দিকে এসে, পুলিশের অনুষ্ঠান এবং কর্মিসভা এক সঙ্গেই সেরে নিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এক জেলা নেতার কথায়, ২৪ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে আসছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ওই সভায় রাহুল কী বলেন, তা শুনে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্যই দশ দিন পরে কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘দিদি’।

mamata potato kharagpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy