তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে এলেন জনা চল্লিশেক কর্মী। মঙ্গলবার খড়্গপুরে।—নিজস্ব চিত্র।
বছর ঘুরলেই রেলশহরে পুরভোট। তার আগে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের ‘দলবদলে’র জল্পনাকে নস্যাৎ করে ‘ঘর’ অটুট রাখার বার্তা দিলেন দলীয় নেতৃত্ব। মঙ্গলবার ১৫ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করল কংগ্রেস। অনাস্থা ভোটে দিতে খড়্গপুর পুরসভার ক্ষমতা দখলের প্রথম বর্ষপূর্তিতে শহরের রামমন্দিরে এক সভাগৃহে ওই বৈঠকে গত পুর নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন এমন এক নেতা-সহ ৪০ জন কর্মীর হাতে দলীয় পতাকাও তুলে দিলেন শহর কংগ্রেস নেতৃত্ব।
খড়্গপুরে পুরবোর্ডের দখল নিতে সম্প্রতি তৎপর হয়েছে তৃণমূল। রেলশহরের কাউন্সিলর তৈমুর আলি খান অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন বলে কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছে। তৈমুর গত পুরভোটে সিপিআইয়ের প্রতীকে জেতেন। পরে অবশ্য দলবিরোধী কাজের অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিআই। গত শুক্রবার মেদিনীপুরে এসে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের যোগদানের ইচ্ছেপ্রকাশ করেন তৈমুর। তৈমুর এলে তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা বেড়ে হবে ১৫। অন্য দিকে, ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সমর্থনেও কাউন্সিলর রয়েছে ১৫ জন। এই পরিস্থিতিতে এ দিন কংগ্রেসের তরফে ঐক্যের বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যময় বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, তৃণমূলের ‘ঘর’ ভাঙার বার্তা দিয়ে প্রতিপক্ষকে কংগ্রেস পাল্টা চাল দিল বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেসের পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে এ দিন বলেন, “ওরা (তৃণমূল) বারবার গুজব ছড়িয়ে বাজিমাত করছে। আর আমরা করে দেখিয়ে দিলাম।”
বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পালের নির্বাচনী কেন্দ্র খড়্গপুর বরাবর কংগ্রেসের খাসতালুক। যদিও ২০১০ সালের পুরভোটে ৩৫টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে জিতে তৃণমূল পুরসভা দখল করে। কংগ্রেস পেয়েছিল ১২টি আসন, বামেরা ৬টি, বিজেপি একটি ও নির্দল একটি। প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে অবশ্য কংগ্রেসই এগিয়ে ছিল। ২০১৩ সালের ৫ অগস্ট অনাস্থা ভোটে ১৬-১৪ ব্যবধানে তৃণমূলকে হারিয়ে ফের পুরবোর্ড দখল করে কংগ্রেস। গত লোকসভা নির্বাচনের ফল অবশ্য কংগ্রেসের অনুকূলে যায়নি। রেলশহরে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আর চতুর্থ স্থানে রয়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের এই কোণঠাসা অবস্থায় জল্পনা ছড়ায় খড়্গপুরে দলের চার কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। কংগ্রেসের পাশে থাকা নির্দল কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মাও তৃণমূলে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন চলছিল। এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস শিবিরের ১৫ জন কাউন্সিলরের একত্র উপস্থিতি অবশ্য সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে। পুরপ্রধান তথা কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির সদস্য রবিশঙ্কর পাণ্ডে, শহর সভাপতি অমল দাসের সঙ্গেই এ দিন বসে থাকতে দেখা যায় ১৫ জন কংগ্রেস কাউন্সিলরকে। সঙ্গে ছিলেন নির্দল কাউন্সিলর সত্যেদেও শর্মাও। অমলবাবু বলেন, “২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রবিশঙ্কর পাণ্ডের নেতৃত্বে বোর্ড গঠন করবো আমরা। আমাদের সঙ্গে নির্দল কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মা ও বিজেপির বেলারানি অধিকারীর সহযোগিতা আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনই রয়েছে।”
সাংবাদিক বৈঠকের মাঝেই গত পুর-নির্বাচনে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পি প্রসাদ রাও-সহ জনা চল্লিশেক কর্মী দলবদল করে কংগ্রেসে যোগ দেন। রবিশঙ্করবাবু বলেন, “রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলে যাওয়ার হিড়িক চলছে। খড়্গপুর তার ব্যতিক্রম। এ দিন তার উদাহরন দিলাম। আগামীতে আরও অনেকে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে আসবেন।” এ দিন যিনি কংগ্রেসে যোগ দিলেন সেই পি প্রসাদ রাও তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর অনুগামী হিসেবেই তৃণমূলের অন্দরে পরিচিত ছিলেন। গত পুরভোটে সিপিএম প্রার্থী অনিতবরণ মণ্ডলের কাছে সামান্য ব্যবধানে হেরেছিলেন প্রসাদ রাও। এ দিন প্রসাদ রাও বলেন, “এলাকায় তৃণমূলের মধ্যে লড়াই চলছে। আমাদের এলাকার লোক মার খাচ্ছে, অথচ দল সাহায্য করছে না। তাই দলবদল করলাম।” যদিও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর দাবি, “পুরসভা নির্বাচনের পরে পি প্রসাদ রাও অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাই আমরা চার বছর আগেই ওঁকে বহিষ্কার করেছি।” ওঁকে দলে নিয়ে কংগ্রেস লাভবান হবে না বলেও দাবি তাঁর। তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের কথা মানেননি প্রসাদ রাও।
এ দিন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে পুরসভার নানা বিষয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস পুরপ্রধান। অসহযোগিতা চললে কাউন্সিলরদের নিয়ে নবান্নে যাওয়ার কথা জানান রবিশঙ্করবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy