Advertisement
E-Paper

রাহুলের সভায় চাঙ্গা কংগ্রেস, জমি ছাড়তে নারাজ তৃণমূলও

কত বছর আগে কংগ্রেসের এত বড় সভা হয়েছে? মাথা চুলকেও মনে করতে পারছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। মাঝে-মধ্যে যে কয়েকটা সভা-সমাবেশ হয়েছিল তাও আটকে ছিল সবংয়ের মধ্যে। যেখানে নানা সময়ে প্রদেশ কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতারা হাজির হয়েছেন।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৪ ০২:০৭

কত বছর আগে কংগ্রেসের এত বড় সভা হয়েছে?

মাথা চুলকেও মনে করতে পারছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। মাঝে-মধ্যে যে কয়েকটা সভা-সমাবেশ হয়েছিল তাও আটকে ছিল সবংয়ের মধ্যে। যেখানে নানা সময়ে প্রদেশ কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতারা হাজির হয়েছেন। কিন্তু রাহুল গাঁধী-সনিয়া গাঁধীর মতো বড় মাপের নেতা-নেত্রীকে বহু বছর দেখেননি এ তল্লাটের মানুষ। মানস ভুঁইয়া ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হওয়ার পর দেখলেন। এবং শুধু দেখলেন তা নয়, কংগ্রেসও যে সবংয়ের বাইরেও সমাবেশ করে মাঠ ভরাতে পারে তা বুঝলেনও। তারই জেরে দোদুল্যমান ভোটার থেকে বসে যাওয়া কংগ্রেস কর্মীরা এতটাই উজ্জীবিত হলেন যে, কংগ্রেস নেতৃত্ব বেজায় খুশি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার কথায়, “দলের ভরা মরসুমে চিত্র তারকা দিয়েও অনেকে মাঠ ভরাতে পারেননি। রাহুল গাঁধীর সভায় মানুষের ঢলই বলে দিল রাজনীতিতে রাজনৈতিক তারকায় বড় কথা। চড়া রোদেও মানুষ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছেন রাজনৈতিক তারকার বক্তব্য শোনার জন্য। এই সাফল্য প্রতিটি এলাকার কর্মী-সমর্থক তো বটেই সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে।”

মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, রাহুল গাঁধী সভা করে যাওয়ার পরই কংগ্রেস এতটাই উজ্জীবীত হয়েছে যে তৃণমূল উত্তেজিত কংগ্রেসকে নানা ভাবে হেনস্থার চেষ্টা করছে। পিংলার পশ্চিমবাড় গ্রামে প্রচারে যাওয়ার সময় কংগ্রেস কর্মীদের আটকে রাখা হয়েছিল বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তারই সঙ্গে কেশপুরের দুষ্কৃতী দিয়ে ডেবরার কয়েকটি এলাকায় রিগিং করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। মানসবাবু বলেন, “হঠাৎ এ সময় কংসাবতী নদীতে জল ছেড়ে দেওয়া হল। ফলে ডেবরা ব্লকের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ডেবরা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কারণ, কঁসাই নদী ডেবরাকে দু’ভাগে ভাগ করেছে। কোনও সেতু পর্যন্ত নেই। এই পরিকল্পনা করে বুথ দখল ও অবাধ ছাপ্পা করা হবে। খবর পেলেও কেশপুর হয়ে ঘুরে সেখানে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লাগবে। কেন এমন করা হল তা প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছি। ডেবরার ওই এলাকাগুলিতে আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলারও দাবি জানিয়েছি।” প্রতিটি বুথে আধা সেনা মোতায়েন ও রুট মার্চেরও দাবি জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, “এখন থেকেই এজেন্টদের নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে লাঠিসোটা নিয়ে মিছিলও করছে তৃণমূল। কড়া নিরাপত্তা ছাড়া অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই আমি মনে করি।”

বৃহস্পতিবার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ডেবরাতে সমাবেশের আয়োজন করেছিল কংগ্রেস। যেখানে প্রধান বক্তা ছিলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। রাহুল গাঁধীকে দেখার জন্য দুপুর ১২টা থেকেই মানুষ মাঠে হাজির হতে থাকেন। রাহুল গাঁধী যখন ঢুকলেন তখন ঘড়িতে ৩ টে ২৪ মিনিট। চড়া রোদ মাথায় নিয়েও সকলে দাঁড়িয়ে। সমাবেশ ছেড়ে কেউ পালাননি। সভা যখন শেষ বলে ঘোষনা করা হল, তখন ৪ টে ৫ মিনিট। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও মানুষের এতটুকু বিরক্তি আসেনি। যতক্ষণ না রাহুল গাঁধীর হেলিকপ্টার আকাশে উড়ল, ততক্ষণ ভিড়ে ঠাসা সব লোকই দাঁড়িয়েছিল রাহুল গাঁধীকে আরও একটু দেখার জন্য, একটু ছোঁয়ার জন্য। কংগ্রেসের এই মরা বাজারে, যেখানে সংগঠন বড্ড দুর্বল, সেই আসরে - এত ভিড়! কথাটা ছড়িয়ে পড়ল আগুনের মতো। চায়ের দোকানে, হাটে বাজারে, আলোচনা শুরু হয়ে গেল কংগ্রেস কী তাহলে আবার জেগে উঠছে। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্বও কী এ রাজ্যে দলের সংগঠনকে মজবুত করতে উদ্যোগী হবেন? এমনই নানা প্রশ্ন। এসব আলোচনায় খুশী কংগ্রেস নেতারা। ডেবরার কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীশ ভট্টাচার্যের কথায়, “বিশ্বাস করবেন না, সভার পর থেকেই রাহল গাঁধী আর কংগ্রেসকে নিয়েই আলোচনা চলছে চারদিকে। বহুদিন এমনটা দেখিনি। কর্মী-সমর্থকেরাও আরও বেশি করে ছুটছে এবার। নেতার মান রাখতে হবে তো। রাহুল গাঁধী আসায় এই সাফল্যটাই মিলেছে।”

এই পরিস্থিতিটাই কিছুটা হলেও চাপে ফেলেছে তৃণমূলকে। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দেব বক্তব্য রাখতে গিয়ে বারেবারেই বলেছেন, যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের দায়িত্ব নিতে হবে। তাই প্রত্যেক যুবক যাতে ভোট দেয় সেই আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। আর যুব সমাজকে রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতেই তিনি রাজনীতির ময়দানে একথাও জানিয়েছেন। দেব অবশ্য লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে রাজনীতিতে। তারপর একথা বলছেন। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই রাহুল গাঁধী ‘ইয়ং ব্রিগেড’ তৈরির কথা বলে আসছেন। সৎ ও পরিচ্ছন্ন যুবক-যুবতীদের সাংগঠনিক নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে আসা নয়, নেতৃত্ব দেওয়ার উপর জোর দিয়েছিলেন। যে কাজ এখনও চলছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, সভায় রাহুল গাঁধীর আসার অর্থই যুব সমাজকে বার্তা দেওয়া। আর তাতে সফল হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাই কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে তৃণমূল। যতই তাঁদের প্রার্থী চিত্র তারকা হন, মানসবাবুও রাজনৈতিক তারকা। প্রকাশ্যে না স্বীকার করলেও এটা সকলেই মানেন। তাই শুক্রবার সবংয়ের গ্রামেগঞ্জে ঘুরেছেন দেব। প্রচার করেছেন। যাতে মানসবাবুর ভোট ব্যাঙ্কে ধাক্কা দিতে পারেন। আজ অর্থাৎ শনিবার দিনভর কেশপুরের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়াবেন তিনি। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে রাহুল গাঁধীর সভার ভিড়কে ততটা গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক আশিস চক্রবর্তী বলেন, “অনেকে রাহল গাঁধীকে দেখার জন্য, হেলিকপ্টার দেখার জন্যও ভিড় করেছিলেন। তাই বলে সকলে কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেবেন এমন নয়। ভোট দেওয়ার সময় সকলে চিন্তাভাবনা করেই দেবেন।” তাহলে তৃণমূলের সভার ভিড় থেকে তৃণমূল নেতৃত্ব উচ্ছ্বসিত হন কেন? সেখানে তো আবার চিত্র তারকাদের ভিড়! এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি।

suman ghosh medinipur rahul gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy