ঝাড়গ্রাম আদালতে রমেশ শর্মা (বাঁ দিকে), রোহিত শর্মা (মাঝে), দীনেশ শর্মা (ডান দিকে)। দেবরাজ ঘোষ।
ঝাড়গ্রাম শহরের তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকিকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় এবার মূল অভিযুক্ত অশোক শর্মার আত্মীয়দেরও অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহর থেকে অশোকের বড় দাদা বছর পঞ্চান্নর রমেশ শর্মা-সহ আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রমেশবাবু ছাড়াও রয়েছেন তাঁর ছোট ছেলে বছর চব্বিশের রোহিত শর্মা ও রমেশবাবুর শ্যালক বছর চল্লিশের দীনেশ শর্মা। রমেশবাবু ও রোহিতের বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের বলরামডিহি এলাকায়। দীনেশের বাড়ি শহরের বাছুরডোবায়। ধৃত তিনজনকে বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে তোলা হলে চারদিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত এসপি ভারতী ঘোষ বলেন, “মূল অভিযুক্ত অশোককে জেরা করে এই তিন জনের নাম পাওয়া গিয়েছিল। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই রমেশ, রোহিত ও দীনেশকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এই নিয়ে সৌরভ হত্যাকাণ্ডে মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এর আগে রমেশবাবুর বড় ছেলে সুমিত শর্মা, রমেশবাবুর ভাই পেশায় ঠিকাদার অশোক শর্মা ও অশোকের পরিচারক টোটন রাণাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অশোক, সুমিত ও টোটন এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশ হেফাজত ও জেল হেফাজতে থাকা ৬ অভিযুক্তকেই আগামী সোমবার, ২ জুন ফের আদালতে হাজির করা হবে। মূল অভিযুক্ত অশোক ও তাঁর পরিচারক টোটন রাণার আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী অফিসার। সেই আবেদন এ দিন মঞ্জুর করেছেন বিচারক কৃষ্ণমুরারিপ্রসাদ গুপ্ত। আদালতের নির্দেশে আগামী সোমবার ওই দু’জনের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া সৌরভের বাড়িতে গিয়ে পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন। পরে মানসবাবু বলেন, “সৌরভের হত্যাকারীদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, সেজন্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”
গত ২৫ এপ্রিল ব্যবসায়িক কাজে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান অরণ্যশহরের বলরামডিহির বাসিন্দা বছর পঁচিশের সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকি। সৌরভের বাবা পবনকুমার অগ্রবালের ইমারতি সরঞ্জামের বড়সড় ব্যবসা রয়েছে। বাণিজ্যের স্নাতক সৌরভ তাঁর বাবার ব্যবসার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। পরে ঝাড়গ্রামের সাপধরা এলাকায় নম্বর প্লেট খোলা অবস্থায় রকির বাইকটি পাওয়া যায়। ঝাড়গ্রাম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সৌরভের বাবা পবনকুমার অগ্রবাল। সৌরভকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে অপহরণকারীরা সৌরভের পরিজনদের মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ তিন কোটি দাবি করে। অবশেষে বিশেষ সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে সৌরভ-অপহরণের মূলপাণ্ডা হলেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ঠিকাদার অশোক শর্মা। ৮ মে অশোক ও তাঁর ভাইপো সুমিত শর্মা এবং অশোকের পরিচারক টোটন রাণাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তার আগেই অবশ্য রকিকে খুন করা হয়েছিল। গত ৬ মে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার রম্ভা থানার পুলিশ রকির দেহ উদ্ধার করে। ইতিপূর্বে আদালতের নির্দেশে অশোক, সুমিত ও টোটনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় জেরা করে পুলিশ।
রকির হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন ঝাড়গ্রামবাসী। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর রকি’ নামে একটি গ্রুপ তৈরি করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে প্রবল জনমত গড়ে উঠেছে। শনিবার, ৩১ মে রকির স্মরণে শহরের বাছুরডোবা এলাকার অগ্রসেন ধর্মশালায় একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। ওই শিবিরের আয়োজক ‘সঙ্ঘমিত্র ব্যয়াম সমিতি’ নামে একটি সংগঠন। সমিতির সম্পাদক বিপ্লব মিদ্যা বলেন, “রকিকে বাঁচানো যায় নি। কিন্তু রকির স্মরণে এই উদ্যোগ আরও বহু মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy