Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ঝাড়গ্রামে ক্ষোভ

লেভেল ক্রসিংয়ের রাস্তা বন্ধের সিদ্ধান্ত

এখানেই পাঁচিল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল।  ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

এখানেই পাঁচিল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০১:২১
Share: Save:

ঝাড়গ্রাম উড়ালপুলের তলায় মেন রেল ক্রসিংয়ে বেআইনি যাতায়াত বন্ধ করতে দু’ধারে পাঁচিল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে রেলের তরফে ওই এলাকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শীঘ্রই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। পাশাপাশি, রেলের তরফে ক্রসিংয়ের রাস্তাটির পরিবর্তে বাসিন্দাদের উড়ালপুলের ফুটপাথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। উড়ালপুলে ধারে ধারে উপরে ওঠার জন্য একাধিক সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। রেল সূত্রের খবর, বন্ধ রেল গেটের তলা দিয়ে বেআইনি যাতায়াত আটকাতে রেল লাইনের দু’পাশে দু’টি রেল গেটের জায়গায় কংক্রিটের উঁচু পাঁচিল তুলে দিয়ে চিরতরে ক্রসিং রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই পাঁচিলের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। রেলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন অরণ্যশহরের বাসিন্দাদের একাংশ। ঝাড়গ্রাম পুর-নাগরিক কমিটিও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগে রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণ ও উত্তর প্রান্তের মধ্যে ভূগর্ভস্থ চলাচলের পথ বা সাবওয়ে তৈরি করতে হবে। তৃণমূল পরিচালিত ঝাড়গ্রাম পুরসভাও রেলের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। আসরে নেমে পড়েছে সিপিএম-সহ বাম রাজনৈতিক দলগুলিও। রেলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শুক্রবার শহর বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে মহকুমাশাসকের কাছে এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষর সমেত স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে।

অরণ্যশহরের সব মহলেরই বক্তব্য, রেল ক্রসিংয়ের রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গেলে সব চেয়ে সমস্যায় পড়বেন বয়স্ক পথচারী ও সাইকেল আরোহীরা। বয়স্কদের ক্ষেত্রে উড়ালপুলের ধারে খাড়া উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উড়ালপুলের ফুটপাথে ওঠা কার্যত অসম্ভব। উড়ালপুলটি যেভাবে চড়াই-উতরাই, তাতে সাইকেল ও সাইকেল রিকশার যাতায়াতেও সমস্যা হচ্ছে। ২০১১ সালের অগস্টে উড়ালপুল তৈরির জন্য শহরের দক্ষিণ ও উত্তর প্রান্তের মধ্যে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় থেকেই মেন রেল ক্রসিংয়ের রেল গেট বন্ধ রয়েছে। গত সাড়ে তিন বছর ধরে ঘুরপথে যানবাহন চলাচল করেছে। তবে বন্ধ রেল গেটের তলা দিয়ে গলে মেন ক্রসিংয়ের রাস্তায় পথচারী, সাইকেল আরোহী ও রিকশার যাতায়াত অব্যহত রয়েছে। বিষয়টি বেআইনি হলেও ঝঞ্ঝাট এড়াতে এটাই নিত্যদিনের দস্তুর। সম্প্রতি উড়ালপুলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে। সে জন্য ক্রসিংয়ের রাস্তাটি চিরতরে বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। আর এতেই বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি উঠেছে।

ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “রেলের এই সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। বয়স্ক পথচারীদের জন্য বিকল্প কিছু ভাবা হোক।” ঝাড়গ্রাম শহর বামফ্রন্টের নেতা পার্থ যাদব বলেন, “রেল ক্রসিংয়ের দু’প্রান্তের পথচারী, সাইকেল ও রিকশার আরোহীদের সহজে যাতায়াতের জন্য আমরা সাবওয়ে তৈরির দাবি করেছি। সাবওয়ে না বানিয়ে ক্রসিং রাস্তা বন্ধ করা হলে আমরা তীব্র বিরোধিতা করব।”

ঝাড়গ্রাম পুর নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন চক্রবর্তী বলেন, “উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্তের অনেক আগে মেন রেল ক্রসিংয়ের দু’প্রান্তের মধ্যে সাবওয়ে তৈরির দাবি উঠেছিল। ২০০৭ সালে বিগত বাম পুর বোর্ডের আমলে সাবওয়ে তৈরির জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে নকশা-সহ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। পথচারীদের স্বার্থে এখানে সাবওয়ে তৈরি করাও জরুরি। সেটা না-করে ক্রসিং রাস্তাটি অবরুদ্ধ করে দেওয়া হলে চরম সমস্যায় পড়বেন দু’প্রান্তের কয়েক হাজার বাসিন্দা। এ ব্যাপারে রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সকলের একযোগে প্রতিবাদ জানানো উচিত।” মেদিনীপুর শহরে রাঙামাটি উড়ালপুলের তলায় থাকা রেলগেটটি স্থায়ী ভাবে বন্ধ থাকলেও সেখানে কিন্তু পাঁচিল তুলে ক্রসিং রাস্তাটি অবরুদ্ধ করা হয় নি। তাহলে কেন ঝাড়গ্রামে ক্রসিং রাস্তাটি চিরতরে অবরুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অরণ্যশহরের বাসিন্দারা।

খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রেলের নিয়ম অনুযায়ী উড়ালপুলের তলায় থাকা রেল গেট স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেদিনীপুর ও খড়্গপুরেও উড়ালপুলের তলায় রেল গেট গুলি স্থায়ী ভাবে বন্ধ রয়েছে। ঝাড়গ্রামে যথেচ্ছ বেআইনি যাতায়াত বন্ধ করতেই রেল ক্রসিংয়ের দু’ধারে পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jhargram level crossing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE