সপরিবার পুজো দেখতে বেরিয়ে ভিড়ের মধ্যে ছোট্ট বাচ্চা হাতছাড়া হওয়া নতুন নয়। তখন উদ্বেগের শেষ থাকে না। পুজোর রঙ ফিকে হতে শুরু করে। সমস্যা মোকাবিলায় এ বার বাচ্চাদের জন্য পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করছে পুলিশ। এর ফলে, বাচ্চা হাতছাড়া হলে ফিরে পাওয়া সহজ হবে। কেমন? পুলিশ সূত্রে খবর, বাবা-মায়ের হাত ধরে পুজো দেখতে বেরোনো বাচ্চাদের একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। সেটি বাচ্চাদের গলায় ঝুলবে। তাতে থাকবে শিশুটির নাম, বাবা-মায়ের নাম, বাড়ির ঠিকানা, মোবাইল নম্বর প্রভৃতি। ফলে, বাচ্চা হাতছাড়া হলেও যে কেউই তার নাম-পরিচয় জানতে পারবে। পুলিশেরই এক সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে ৩০ হাজার এমন পরিচয় পত্র ছাপা হয়েছে। ইতিমধ্যে তা বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “মণ্ডপে ভিড় বেশি হলে শিশুদের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সঙ্গে পরিচয়পত্র থাকলে সহজেই শিশুটির পরিচয় জানা সম্ভব। তখন পুলিশ কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষ শিশুটিকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে।”
পুজোর দিনগুলো নির্বিঘ্ন রাখতে আরও কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। যেমন, প্রতিটি থানা এলাকায় অন্তত ৩টি করে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ খোলা হচ্ছে। বুথে সব সময় পুলিশ কর্মীরা থাকবেন। পথে বেরিয়ে কোনও সমস্যা হলে এই বুথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। যানজট সমস্যা এড়াতেও বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুজোর দিনগুলোয় মেদিনীপুর, খড়্গপুরের মতো শহর এবং শহরতলিতে যানজট সমস্যা হয়ই। মেদিনীপুর শহরে শতাধিক সর্বজনীন দুর্গাপুজো হয়। খড়্গপুর শহরেও সর্বজনীন পুজোর সংখ্যা কম নয়। এক সময় বড় বাজেটের পুজোতেই বেশি ভিড় হত। ছবিটা এখন বদলেছে। ভিড় টানার নিরিখে এখন এগিয়ে থাকে ছোট বাজেটের পুজোগুলোও। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মেদিনীপুর, খড়্গপুর শহরে পুজো দেখতে আসেন। অনেকে আসেন গাড়িতে। অনেকে বাইকে। ফলে, দুই শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যানজট সমস্যা দেখা দেয়।
পরিস্থিতি দেখে, পুজোর দিনগুলোয় মেদিনীপুর, খড়্গপুর শহরে গাড়ি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। বেশ কিছু এলাকায় যেমন পার্কিং জোন করা হচ্ছে, তেমন বেশ কিছু এলাকায় নো-এন্ট্রিও করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, মেদিনীপুর শহরে ৫টি পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কালেক্টরেট মোড়, কেরানিতলা, পঞ্চুরচক, রাঙামাটি। খড়্গপুর শহরে ৭টি পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মথুরাকাটি, কৌশল্যা, পুরাতনবাজার, সুভাষপল্লি, মালঞ্চ। মেদিনীপুর শহরের ১০টি বড় পুজো এবং খড়্গপুর শহরের ১১টি বড় পুজোকে চিহ্ণিত করা হয়েছে। যানজট সমস্যা এড়াতে এই সব পুজো মণ্ডপের আশপাশে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে। দুই শহরে সাদা পোষাকের পুলিশও মোতায়েন থাকছে।
জেলার সদর শহরে সব মিলিয়ে ৩৩টি মোড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ৪টি পার্কি জোন থাকছে। প্যারামেডিক্যাল সংলগ্ন মাঠ, কলেজ মাঠ, আমতলা এবং বিএলআরও অফিস সংলগ্ন জামবন মাঠ। পার্কিং জোনে একজন এসআই বা এএসআই থাকবেন। ৪ জন কনস্টেবল বা হোমগার্ড কিংবা এনভিএফ থাকবেন। পুজোর দিনগুলোয় দুই শহরেই লরি, বাস এবং অন্য চার চাকার গাড়ি ঢোকা- বেরোনোর ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মালবাহী ভারী গাড়ি ঢুকবেই না। শালবনি-আনন্দপুর-কেশপুরের দিক থেকে আসা সদর শহরমুখী বাসগুলো আসতে পারে কেরানিচটি দিয়ে জামবন মাঠ পর্যন্ত। খড়্গপুরের দিক থেকে আসা বাসগুলো দাঁড়াবে আমতলায়। ঝাড়গ্রাম-ধেড়ুয়ার দিক থেকে আসা বাসগুলো দাঁড়াবে প্যারামেডিক্যাল সংলগ্ন মাঠে।
খড়্গপুরের দিক থেকে আসা ছোট গাড়িগুলো কেরানিচটি দিয়ে ঢুকে কেরানিতলা-জগন্নাথমন্দির-আমতলা দিয়ে বেরোবে। কেশপুর-আনন্দপুরের দিক থেকে আসা ছোট গাড়িগুলো কেরানিচটি দিয়ে ঢুকে গোলকুঁয়াচক-ধর্মা দিয়ে বেরোবে। শালবনির দিক থেকে আসা ছোট গাড়িগুলো কেরানিচটি দিয়ে ঢুকে সিপাইবাজার-কেরানিচটি দিয়েই বেরোবে। এবং ঝাড়গ্রাম-ধেড়ুয়ার দিক থেকে আসা ছোট গাড়িগুলো রাঙামাটি-কেরানিতলা দিয়ে ঢুকে কলেজ মাঠ পর্যন্ত আসতে পারে।
মেদিনীপুর শহরে ৫টি মোবাইল মোটর বাইকও থাকছে। সদর শহরেই সব মিলিয়ে ৩৬ জন এসআই-এএসআই এবং ২৬৮ জন কনস্টেবল-হোমগার্ড-এনফিএফের বিভিন্ন দায়িত্ব সামলানোর কথা। এ ছাড়া পদস্থ পুলিশ অফিসারেরা তো বিভিন্ন দায়িত্বে থাকছেনই। ইতিমধ্যে পুলিশের উদ্যোগে মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহরের জন্য পৃথক পুজো গাইড ম্যাপ প্রকাশিত হয়েছে। পুজোর দিনগুলো নির্বিঘ্ন রাখতে সোমবার রাতেও মেদিনীপুরে জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের উপস্থিতিতে এক বৈঠক হয়। সেখানেও পুজোর দিনগুলোয় দুই শহরের পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।