Advertisement
১০ মে ২০২৪

শক্তি যাচাইয়ে পূর্বে বামেদের ৪টি সমাবেশ

লক্ষ্মণ-কাণ্ডে দলীয় চাপান-উতোর থিতিয়ে যাওয়ার আগেই তমলুক ও কাঁথি লোকসভা এলাকায় চারটি সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিল জেলা বামফ্রন্ট। সমাবেশে বক্তা হিসেবে থাকছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ও জেলার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৭:৫৩
Share: Save:

লক্ষ্মণ-কাণ্ডে দলীয় চাপান-উতোর থিতিয়ে যাওয়ার আগেই তমলুক ও কাঁথি লোকসভা এলাকায় চারটি সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিল জেলা বামফ্রন্ট। সমাবেশে বক্তা হিসেবে থাকছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ও জেলার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব। বস্তুত, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি—এই দুই লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণার আগেই যে ভাবে সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তা তাত্‌পর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।

সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের আগে আগামী ৬ মার্চ ও ৮ মার্চ দুটি করে চারটি সমাবেশের সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হচ্ছে।” তাঁর দাবি, প্রাক নির্বাচনী সমাবেশ হিসেবে এই সভায় কেন্দ্রের উদার অর্থনীতির ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের আমলে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন জনবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হবে।

কিন্তু, জেলার দু’টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণার আগেই চারটি সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মত মূলত দু’টি কারণে ওই সভার আয়োজন। প্রথমত, লক্ষ্মণ শেঠ ও তাঁর অনুগামীদের ছাড়াই জেলায় দলের সাংগঠনিক শক্তি যাচাই করে নেওয়া। দ্বিতীয়ত, লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল ফেরানো।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তমলুকের নিমতৌড়িতে ‘লক্ষ্মণ ঘনিষ্ঠদের’ বিরুদ্ধে রাজ্য কমিটির তরফে তদন্তে আসা রবীন দেব, নৃপেন চৌধুরী, মৃদুল দে-সহ একাধিক নেতাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় প্রায় আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছিল পূর্বের সিপিএম। ওই প্রসঙ্গে জেলা পার্টি অফিসে প্রকাশ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রেখেছিলেন লক্ষ্মণ অনুগামী বলে পরিচিত জেলা সম্পাদক কানু সাহু এবং ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছিলেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব। এই অবস্থায় সম্প্রতি বেশ ক’য়েক বার প্রকাশ্যে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হন লক্ষ্মণবাবু। পাশাপাশি নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে আদালতের নির্দেশে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে থাকা প্রাক্তন সাংসদ এখনও জেলায় ঢোকার অনুমতি পাননি। সম্প্রতি ওই মামলায় চার্জগঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের গোটা পরিস্থিতি প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণবাবুর প্রতিকূলে। এই সব কারণে তমলুক কেন্দ্রে লক্ষ্মণবাবুর প্রার্থী হওয়া প্রায় অনিশ্চিত বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। অথচ, হেনস্থার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জেলা সিপিএমের এখনও অনেক নেতাকর্মীই লক্ষ্মণ শিবিরের ঘনিষ্ঠ।

এই প্রেক্ষিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে জেলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ফেরাতে ও নেতাকর্মীদের আভ্যন্তরীণ ‘দ্বন্দ্ব’ চাপা দিতে রাজ্য নেতৃত্বদের দিয়ে সমাবেশের কর্মসূচি বলে মনে করা হচ্ছে। শনিবার জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকে শরিক দল সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, ডিএসপির জেলা নেতৃত্ব ছাড়াও সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কানু সাহু, নির্মল জানা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই ঠিক হয়, আগামী ৬ মার্চ চণ্ডীপুর ও তমলুকের নেতাজী নগরে এবং আগামী ৮ মার্চ পটাশপুরের খাড় ও কাঁথি ৩ ব্লকের মারিশদায় সমাবেশ করা হবে। চারটি সমাবেশেই বক্তা হিসেবে থাকবেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব ও বামফ্রন্টের শরিক দলের জেলা নেতৃত্ব।

সিপিএম সূত্রে খবর, সমাবেশের আগেই আগামী ৫ মার্চ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। লক্ষ্মণ-কাণ্ডের জেরে তমলুক লোকসভা আসনে প্রার্থী বদল হচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিত। পাশাপাশি কাঁথি লোকসভা আসনেও এ বার প্রশান্ত প্রধানকে প্রার্থী করা হচ্ছে না বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election tamluk and contai 4 meetings left front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE