Advertisement
E-Paper

স্কুলে সালোয়ার নয়, ব্যানার টানিয়ে হুঁশিয়ারি শিক্ষিকাদের

ফের পোশাক-ফতোয়ার মুখে পড়লেন শিক্ষিকারা। এ বার পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার এক বালিকা বিদ্যালয়ে। সালোয়ার-কামিজ পরে স্কুলে না আসার জন্য স্কুল গেটের সামনে ব্যানার টাঙিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে শিক্ষিকাদের। ময়নার পরমানন্দপুর গ্রামের ‘বিবেকানন্দ কন্যা বিদ্যাপীঠ’-এর ৩৫ জন শিক্ষিকার মধ্যে দু’জন মৌসুমী পাত্র ও জানিসার খাতুন সালোয়ার কামিজ পরে স্কুলে আসেন। ভূগোলের শিক্ষিকা মৌসুমীদেবীর বাড়ি মেদিনীপুর শহরে, বিজ্ঞানের শিক্ষিকা জানিসার থাকেন পাঁশকুড়ায়।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৫
ময়না বিবেকানন্দ কন্যাবিদ্যাপীঠে মূল ফটকের উল্টো দিকে সেই বিতর্কিত ব্যানার।—নিজস্ব চিত্র।

ময়না বিবেকানন্দ কন্যাবিদ্যাপীঠে মূল ফটকের উল্টো দিকে সেই বিতর্কিত ব্যানার।—নিজস্ব চিত্র।

ফের পোশাক-ফতোয়ার মুখে পড়লেন শিক্ষিকারা। এ বার পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার এক বালিকা বিদ্যালয়ে। সালোয়ার-কামিজ পরে স্কুলে না আসার জন্য স্কুল গেটের সামনে ব্যানার টাঙিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে শিক্ষিকাদের।

ময়নার পরমানন্দপুর গ্রামের ‘বিবেকানন্দ কন্যা বিদ্যাপীঠ’-এর ৩৫ জন শিক্ষিকার মধ্যে দু’জন মৌসুমী পাত্র ও জানিসার খাতুন সালোয়ার কামিজ পরে স্কুলে আসেন। ভূগোলের শিক্ষিকা মৌসুমীদেবীর বাড়ি মেদিনীপুর শহরে, বিজ্ঞানের শিক্ষিকা জানিসার থাকেন পাঁশকুড়ায়। শিক্ষিকারা জানান, যাতায়াতের সুবিধার জন্যই তাঁরা সালোয়ার-কামিজ পরেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার-ব্যানার দেখার পর থেকে তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ, ব্যানারে লেখা ছিল ‘এটা যদি নিছক অনুরোধ ভাবেন তা হলে গ্রামবাসী বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য থাকবে এবং তা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।’

কারা ঘটাল এই কাণ্ড?

স্কুল সূত্রের খবর, গত এপ্রিলে তৃণমূল পরিচালিত স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক তাপস মণ্ডল ও এক সদস্য রবীন্দ্রনাথ সামন্ত বৈঠক ডেকে শিক্ষিকাদের সালোয়ার-কামিজ পরে আসতে বারণ করেছিলেন। তাঁরা তখনই ঘোষণা করেছিলেন, এর পরে গ্রামবাসী কিছু করলে তার দায় তাঁরা নেবেন না। এর পরে গরমের ছুটি পড়ে যায়। ২৬ জুন স্কুল খোলার পরে ওই দুই শিক্ষিকা সালোয়ার-কামিজ পরেই আসছিলেন। গত বুধবার তাঁরা দেখেন, স্কুল গেটের উল্টো দিকে ওই ব্যানার টাঙানো হয়েছে।

জানিসার ও মৌসুমীদেবী জানিয়েছেন, এর পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার মাধ্যমে পরিচালন সমিতির সম্পাদককে সমস্যা-সমাধানের জন্য একটি আবেদনপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শান্তি মাইতি ‘স্কুলের বাইরের বিষয়’ বলে আবেদনপত্র নিতে চাননি। ফোন করা হলে শান্তিদেবীর দাবি, “ওই দুই শিক্ষিকাকেও শাড়ি পরে আসতে বলা হয়েছিল। ওঁরা মানেননি। আর আবেদনপত্র দিতে এসে ওঁরা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।” তাই কি আপনি আবেদনপত্র নেননি? ফোন কেটে দেন শান্তিদেবী। পরে ফোন করা হলেও ধরেননি তিনি।

ব্যানার কারা টাঙিয়েছে, তা জানা নেই বলে দাবি স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক তাপস মণ্ডলের। বিষয়টি ‘অনুচিত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করলেও তাঁর সংযোজন, “আমাদের স্কুল ঐতিহ্যশালী। এখানে বরাবর শাড়ি পরে শিক্ষিকারা আসেন। তাই শিক্ষিকাদের সালোয়ার কামিজের বদলে শাড়ি পরে আসতে অনুরোধ করা হয়েছিল।”

শিক্ষিকাদের সালোয়ার কামিজ পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা নিয়ে এর আগেও রাজ্যে বিতর্ক হয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে হাইকোর্টে। তবে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, স্কুলে কী পোশাক পরে শিক্ষিকারা আসবেন, তা একেবারেই ব্যক্তিগত রুচির ব্যাপার। এর পরেও ছবিটা যে বদলায়নি ময়নার ঘটনাই তার প্রমাণ।

ময়নার ঘটনা শুনে বিস্মিত শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার। তিনি বলেন, “শাড়ির থেকে সালোয়ার-কামিজ অনেক শালীন পোশাক। যাঁরা ঐতিহ্যের কথা বলে আপত্তি করছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করা উচিত সালোয়ার-কেন ঐতিহ্যের পরিপন্থী।” আর রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের মতে, “শিক্ষিকাদের পোশাকের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে যাওয়া বাতুলতা।” ঘটনায় ক্ষুব্ধ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্যও। তিনি বলেন, “এ সব তালিবানি শাসন বরদাস্ত করবো না। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ দিকে, বিতর্কিত ব্যানারে ‘গ্রামবাসীর আবেদন’ লেখা থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ কিন্তু বিষয়টিকে সমর্থন করছেন না। পরমানন্দপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দার বক্তব্য, “স্কুলের শিক্ষিকাদের পোশাক নিয়ে এ ধরনের ব্যানার দেওয়া ঠিক নয়। এটা শুধু শিক্ষিকাদের নয়, আমাদের গ্রামের অপমান।” গ্রামবাসীরা আরও জানালেন, কাছেই আর একটি স্কুলে অনেক শিক্ষিকাই সালোয়ার-কামিজ পরে আসেন। তা নিয়ে গ্রামবাসী কখনও আপত্তি জানাননি।

warning teachers ban on salwar suit school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy