বিরোধী সিপিএম এবং ঝাড়খণ্ড পার্টির সদস্যদের সমর্থন নিয়ে বেলপাহাড়ি ব্লকের কাঁকো গ্রাম পঞ্চায়েতের দলীয় প্রধানকে অপসারণ করল তৃণমূলের কিছু সদস্য।
বুধবার দুপুরে কাঁকো পঞ্চায়েত কার্যালয়ে প্রশাসনের ডাকা তলবি সভায় তৃণমূলের প্রধান কল্পনা বেসরার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা-প্রস্তাব সমর্থন করেন সাত পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁদের মধ্যে দু’জন সিপিএম সদস্য, দু’জন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর সদস্য এবং বাকি ৩ জন তৃণমূলের সদস্য। উল্লেখ্য, তৃণমূলের ক্ষমতাসীন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন তৃণমূল সদস্য-সহ ওই সাত জন সদস্য কল্পনাদেবীর বিরুদ্ধে আনাস্থা-প্রস্তাব এনে বেলপাহাড়ির বিডিও-কে গত ২০ অগস্ট চিঠি দেন।
তার প্রেক্ষিতেই পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী এ দিন কাঁকো গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে তলবি সভা ডাকে প্রশাসন। এ দিন প্রধান কল্পনাদেবী-সহ ১৩ জন সদস্যই সভায় ছিলেন। বেলপাহাড়ির জয়েন্ট বিডিও শ্যামসুন্দর কুইরি-র উপস্থিতিতে তলবি সভায় অনাস্থার পক্ষে ও বিপক্ষে ‘ওপেন ব্যালটে’ ভোটাভুটি হয়। ১৩ জন সদস্যের মধ্যে কল্পনাদেবী-সহ ৬ জন তৃণমূল সদস্য অবশ্য অনাস্থা সমর্থন করেননি। কিন্তু তৃণমূলের অন্য তিন সদস্য, সিপিএমের দু’জন ও ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর দু’জন সদস্য অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন।
এর ফলে প্রধান পদ থেকে অপসারিত হন কল্পনাদেবী। কল্পনাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “সিপিএম-ঝাড়খণ্ডীদের সমর্থন নিয়ে আমাকে সরানো হল। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!” বেলপাহাড়ির বিডিও সর্বোদয় সাহা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে নতুন প্রধান নির্বাচনের জন্য সভা ডাকা হবে। তত দিন ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পঞ্চায়েতের কাজ সামলাবেন।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক’দিন আগেই সিপিএম প্রসঙ্গে রাজনীতিতে কেউই অচ্ছুৎ নয় বলে কার্যত রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এ দিন কাঁকোর প্রধানকে অপসারণের পর জঙ্গলমহলে বিজেপি-কে ঠেকাতে সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, পঞ্চায়েতের দুর্নীতির বিষয়টিকে হাতিয়ার করে বিজেপিও রাজনৈতিক ভাবে মাঠে নামার তোড়জোড় করছিল বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছিল। প্রধানকে অপসারণ করে সেই অভিযোগ ভোঁতা করে দিল তৃণমূল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রধান কল্পনাদেবীকে সামনে রেখে পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজকর্ম চালাচ্ছিলেন তৃণমূলের কাঁকো অঞ্চল সভাপতি বিশ্বজিৎ সেন। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে কল্পনাদেবী ও বিশ্বজিৎবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। দলের অন্দরে বিশ্বজিৎবাবু ও কল্পনাদেবীর বিরুদ্ধে সরব হন স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ। কিন্তু পঞ্চায়েতের ১৩ সদস্যের মধ্যে তিন জন সদস্য কল্পনাদেবীর বিরুদ্ধে আনাস্থাপত্রে স্বাক্ষর করতে সম্মত হন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় এ দিন বলেন, “আমি দলীয় কাজে কলকাতায় এসেছি। স্থানীয় নেতাদের থেকে বিষয়টি জেনে নিন।” তৃণমূলের কাঁকো অঞ্চল সভাপতি বিশ্বজিৎ সেনের প্রতিক্রিয়া, “যা বলার পরে বলব।”
সিপিএমের বেলপাহাড়ি জোনাল সম্পাদক উদ্ধব মাহাতোর দাবি, “সিপিএমের যে দু’জন পঞ্চায়েত সদস্য অনাস্থা সমর্থন করেছেন, সেটা তাঁদের একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। দলের তরফে অনাস্থা আনার বা সমর্থন করার কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।” আর ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদার বক্তব্য, “ওই পঞ্চায়েতে উন্নয়নের টাকা লুঠপাট চলছিল। জনরোষের জেরেই তৃণমূল নিজেদের দলীয় প্রধানকে অপসারণ করতে উদ্যোগী হয়। ওরা আমাদের সমর্থন চেয়েছিল। তাই দুর্নীতে ঠেকাতে আমাদের সদস্যরা অনাস্থা-প্রস্তাব সমর্থন করেছেন।”
এ দিনই আবার জামবনি ব্লকের জামবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কালিপদ মাহাতোও অনাস্থায় ভোটাভুটির জেরে অপসারিত হয়েছেন। তৃণমূল পরিচালিত ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের আট সদস্যের মধ্যে সাত জন তৃণমূলের এবং এক জন সিপিএম সদস্য। এর মধ্যে ছয়জন তৃণমূল সদস্য প্রধান কালিপদবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি অনাস্থা এনেছিলেন। এ দিন জামবনি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে তলবি সভায় অবশ্য অনাস্থা-প্রস্তাব আনা ওই ছ’জনের মধ্যে পাঁচ তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য হাজির ছিলেন। হাজির ছিলেন প্রধান কালিপদবাবুও। এক তৃণমূল ও এক সিপিএম সদস্য অবশ্য অনুপস্থিত ছিলেন। সভায় হাজির পাঁচ তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য অনাস্থা-প্রস্তাব সমর্থন করায় প্রধান পদ থেকে অপসারিত হন কালিপদবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy