Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাফল্যের পুরস্কার, নতুন বাস বিডিওকে

লোকসানের জন্য বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি), বিডিও’র হাতে পড়ে সেই বাস থেকেই প্রতি মাসে লাভ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা! ব্লক প্রশাসনের এই কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে এবার পুরনো বাসটির পরিবর্তে ঝাঁ-চকচকে একটি নতুন বাস দিয়েছে এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। গত দশ মাস ধরে চলা পুরনো বাসটির পরিবর্তে গত ৩ জুলাই থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল ব্লকের মেদিনীপুর-রোহিণী রুটে নতুন বাসটি চলছে।

মেদিনীপুর-রোহিনী রুটে নতুন বাস। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

মেদিনীপুর-রোহিনী রুটে নতুন বাস। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৫
Share: Save:

লোকসানের জন্য বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি), বিডিও’র হাতে পড়ে সেই বাস থেকেই প্রতি মাসে লাভ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা!

ব্লক প্রশাসনের এই কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে এবার পুরনো বাসটির পরিবর্তে ঝাঁ-চকচকে একটি নতুন বাস দিয়েছে এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। গত দশ মাস ধরে চলা পুরনো বাসটির পরিবর্তে গত ৩ জুলাই থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল ব্লকের মেদিনীপুর-রোহিণী রুটে নতুন বাসটি চলছে। এসবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নবকুমার বর্মন বলেন, “গত বছর অগস্ট থেকে ফ্র্যানচাইজি মডেলে বিডিও নিজের দায়িত্বে বাসটি চালিয়ে প্রতি মাসে আমাদের ১৫ হাজার টাকা দিচ্ছেন। পুরনো বাসটির পরিবর্তে ৫৪ আসন বিশিষ্ট একটি নতুন বাস দেওয়া হয়েছে। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখেই ওই রুটে পুরনো বাসটির পরিবর্তে নতুন বাস দেওয়া হয়েছে।” নবকুমারবাবু জানান, রাজ্যে একমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর সাঁকরাইল ব্লকেই বিডিও’র দায়িত্বে এভাবে সরকারি বাস চলছে। জঙ্গলমহলের ব্লক সদরের সঙ্গে জেলা সদরের মধ্যে অন্ততপক্ষে প্রতিটি ব্লক প্রশাসন কর্তৃপক্ষ একটি করে বাস চালানোর দায়িত্ব নিলে যোগাযোগ সমস্যার সুরাহা হত, পাশাপাশি সরকারি বাস চালিয়ে লোকসানের বহরও কমত। তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী, সাঁকরাইলকে দেখে অন্য ব্লকগুলিও উৎসাহিত হবে।

গত বছর ২ অগস্ট মেদিনীপুর-রোহিণী রুটের বাসটি ‘অলাভজনক’ বলে চালানো বন্ধ করে দেন এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। জেলা সদর মেদিনীপুর এবং সাঁকরাইল ব্লক সদর রোহিণীর মধ্যে যাতায়াতকারী বাসটির উপর বহু মানুষ নির্ভরশীল। নিত্যযাত্রীদের কথা ভেবে বাস চালানোর দায়িত্ব নেয় সাঁকরাইলের বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। স্থানীয় যুবকদের দিয়ে ফ্র্যানচাইজি মডেল বাসটি চালানোর ব্যবস্থা হয়। গত বছর ১৪ অগস্ট থেকে ফের পথে নামে মেদিনীপুর-রোহিণী রুটের বাসটি। এক মাস বাদে ওই যুবকেরা লভ্যাংশ রেখে উদ্বৃত্ত নগদ ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন বিডিও’র হাতে। ওই টাকা এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দেন বিডিও। গত দশ বছর ধরে প্রতি মাসে এই ভাবেই টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়।

যে বাস চালিয়ে তেলের খরচও উঠছিল না, সেই বাস থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে কি করে?

এসবিএসটিসি সূত্রের দাবি, সরকারিভাবে বাসটি চালানোর সময় চালক-কর্মীদের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হত। সরকারি নথি অনুযায়ী, ওই বাস চালিয়ে তেলেরও খরচও উঠছিল না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য বক্তব্য, সরকারি বাস কর্মীদের একাংশের মানসিকতার জন্যই বাসটি লোকসানে চলছিল। আর এখন বিডিও’র মাধ্যমে যে স্থানীয় যুবকেরা বাস চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছেন সেই অমিত হাটুই, দুলাল বারিক ও গোপাল মালরা বলছেন, “আলাদা কোনও মন্ত্র নেই। আমরা ঠিকা চালক ও কর্মীদের দিয়ে বাসটি চালাচ্ছি। তাতে নিজেদের লাভ রেখে ব্লক প্রশাসনকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। নতুন বাসটি পেয়ে আমরা খুবই খুশি।” বাসটির নিত্যযাত্রী স্থানীয় ব্লক অফিসের কর্মী রাজেশ মণ্ডল, স্কুল শিক্ষিকা ঊষা মুখোপাধ্যায় স্বাস্থ্যকর্মী ঝর্না হোতরা বলেন, “পুরনো বাসটির চেয়ে নতুন বাসটিতে যাতায়াত করা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের ও আরামদায়ক।”

সাঁকরাইল ব্লকের ‘লাইফলাইন’ এই বাসটি ভোর সাড়ে ৬টায় মেদিনীপুর ছেড়ে ৯টা নাগাদ রোহিণী পৌঁছয়। আবার বিকেল ৫টায় রোহিণী থেকে মেদিনীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। গত বছর বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। স্থানীয় ব্যাঙ্ক, সরকারি অফিসের কর্মী ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওই বাসেই যাতায়াত করেন। নিত্যযাত্রীদের থেকে বিষয়টি জেনে বিডিও সৌরভবাবু এসবিএসটিসি কতৃর্পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, বাসটি বিডিও’কে চালানোর জন্য দেন এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। সরকারি নির্দেশে জানিয়ে দেওয়া হয়, এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ বাসটির কোনও খরচ বহন করবে না। শুধুমাত্র বাসটিকে সরকারি ডিপোতে রাখা যাবে।

সাঁকরাইলের বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিত্যযাত্রীদের সমস্যার সুরহার জন্য বাসটি চালানোর দায়িত্ব নিয়েছি। আলাভজনক বাসটিকে লাভজনক করে দেখাতে পেরেছি। এটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এর ফলে স্থানীয় কয়েক জনের কর্মসংস্থানও করা গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sbstc sankrail kingshuk gupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE