অভাবের সংসার। স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। পড়শিদের কাছে প্রায়ই তিন মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনার কথা বলতেন নন্দীগ্রামের শিমুলকুণ্ডু গ্রামের তাপসী দাস সিংহ (৩০)। শুক্রবার সকালে একই ঘর থেকে তাপসীদেবী এবং তার তিন মেয়েঅঞ্জু (১২), অনুরাধা (৭) এবং অনুপমার (৬) দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। পুলিশের অনুমান, সিন্নি-র সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে তিন মেয়েকে খাইয়ে, তা নিজে খান তাপসীদেবী।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “পারিবারিক সমস্যার কারণেই ওই আত্মহত্যা। ঘর থেকে মেলা খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিমুলকুণ্ডু গ্রামের তাপসীর বিয়ে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা অবতার সিংহের সঙ্গে। পেশায় দিনমজুর অবতার পরিবার নিয়ে বছর আটেক আগে নন্দীগ্রামের শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন। তাপসীর দুই দাদা খোকন দাস এবং শ্রীকৃষ্ণ দাস বলেন, “জামাইবাবু এখানে দিনমজুরি করতেন। মদ্যপ ছিলেন। তা নিয়ে বোনের সঙ্গে প্রায়ই অশান্তি হত। বছর দু’য়েক আগে বোনকে ছেড়ে চলে যান জামাইবাবু।” তাঁরা জানান, তারপর থেকে তিন মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতেন তাপসী। রোজগার বলতে ছিল পরিচারিকার কাজ করে পাওয়া মাসে এক হাজার টাকা। তাঁর তিন মেয়েই স্কুলে পড়ত।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা নারায়ণ দাসের দাবি, “তাপসীর অবস্থা দেখে পঞ্চায়েত থেকে ইন্দিরা আবাসে ওর পরিবারের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।” প্রতিবেশী গৌরী দাস বলেন, “অভাব-অনটনে ক্রমশ ভেঙে পড়ছিল তাপসী। ওর কিছু হলে, মেয়েদের কী হবেতা নিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করত।”বৃহস্পতিবার শিবরাত্রি উপলক্ষে ব্রত করেছিলেন তাপসী। এ দিন বেলা গড়ালেও ঘর থেকে তাঁকে বেরোতে না দেখে তাঁর বউদি পুষ্পরানি দাস তাপসীরই বোন মেনকাকে খোঁজ নিতে পাঠান। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। মেনকা জানলার ফাঁক দিয়ে দেখেন, তিন মেয়েকে নিয়ে তাপসী বিছানায় শুয়ে আছেন। চার জনেরই মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে। খবর পেয়ে পড়শিরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেন। মেঝেয় বাটিতে ফলমূল, সিন্নি রাখা ছিল। কীটনাশকের তীব্র গন্ধ ছিল ঘরে। পরে পুলিশ ঘর থেকে কীটনাশকের মোড়কও উদ্ধার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy