Advertisement
E-Paper

যাওয়া-আসায় ভারসাম্যের সুর সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে, টি-টোয়েন্টি নয়, টেস্ট ম‍্যাচের বার্তা সমাবেশে

সাড়ে তিন দিনের সম্মেলন শেষে মঙ্গলবার ডানকুনি স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে প্রকাশ্য সমাবেশ করে সিপিএম। ভিড় হয়েছিল ঠাসা। কিন্তু ভিতরে, বাইরে সেই প্রশ্নটাই রয়ে গেল— ভোটে এর ছাপ পড়বে কি?

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:২৭
প্রকাশ্য সমাবেশে মহম্মদ সেলিম।

প্রকাশ্য সমাবেশে মহম্মদ সেলিম। ছবি সিপিএমের ফেসবুক পেজ থেকে।

কোনও চমক নেই। বরং নতুনদের অন্তর্ভুক্তি এবং বাদ পড়াদের তালিকা দেখে সিপিএমের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, নতুন রাজ্য কমিটি তৈরি হয়েছে ‘ভারসাম্যের নীতি’ নিয়ে। অর্থাৎ, সাংগঠনিক কাঠামোয় এমন কাউকে যুক্ত করা হল না, যা নিয়ে কোনও জেলার রাজনীতিতে বিতর্কের আঁচ পড়তে পারে। সিপিএমও হয়তো অনুভব করছে, আজ বললে কাল সব কিছু বদলে যাবে না। হতে পারে সে কারণেই রাজ্য সম্মেলন শেষে প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে টি-টোয়েন্টি না খেলে টেস্ট ম্যাচের মতো খেলার বার্তা দিলেন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।

দলে গুঞ্জন ছিলই যে প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন। বাস্তবেও তা-ই হয়েছে। সুশান্তের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে নতুন জেলা সম্পাদক বিজয় পাল রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। আবার যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমগ্নরাজ ভট্টাচার্যকে মধ্য মেয়াদে রাজ্য কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য করেছিল দল। কিন্তু এ বার সর্বসম্মত ভাবে নির্বাচিত রাজ্য কমিটিতে তাঁর জায়গা হয়নি। যা নিয়ে দলে আলোচনা শুরু হয়েছে। তরুণদের ক্ষেত্রে এক বার আমন্ত্রিত সদস্য হলে, পরে তাঁকে স্থায়ী সদস্য করাই সিপিএমে রেওয়াজ। যেমনটা হয়েছে কলকাতার ইন্দ্রজিৎ ঘোষের ক্ষেত্রে। কিন্তু হিমঘ্নকে বাদ দেওয়া হল। এবং তা নিয়ে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে দলের মধ্যেই। হিমঘ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নেতা। ওই জেলার সম্মেলনে বিস্তর কোন্দল হয়েছিল। রাজ্যস্তরে সেই আঁচ পড়ল কি না সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। যদিও সিপিএম সূত্রে খবর, সম্মেলনমঞ্চে বলা হয়েছে দিল্লিতে হিমঘ্নকে বেশি সময় দিতে হবে বলে তাঁকে রাজ্য কমিটিতে রাখা হয়নি। ব্যস্ততা কমলে তাঁকে ফের রাজ্য কমিটিতে আমন্ত্রিত করা হবে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্মেলনেও বিস্তর কোন্দল হয়েছিল। সম্মেলন শেষ করতে হয়েছিল কমিটি গঠন বাদ রেখেই। এক সপ্তাহ পর কমিটি নির্বাচন হলে দেখা যায় বিদায়ী জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী দলের মধ্যেই ভোটে হেরে গিয়েছেন। জেলায় হেরে যাওয়া মৃণালকে ফের রাজ্য কমিটিতে রেখে দেওয়া হয়েছে। যাকে ‘ঝুঁকিহীন’ সিদ্ধান্ত বলছেন সিপিএমের অনেকেই। সিপিএমের সম্মেলনে এই প্রশ্ন আলোচিত হয়েছে যে নেতাদের কাজের মূল্যায়ন সঠিক ভাবে হওয়া উচিত। এক বার কমিটিতে জায়গা করে নিলে কেউ যেন না ভাবেন, তিনি বছরের পর বছর সেখানে থেকেই যাবেন। সেই মানদণ্ডে কয়েক জন নেতানেত্রীর রাজ্য কমিটিতে থেকে যাওয়া নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন। আবার হুগলির তরুণ শ্রমিক নেতা তীর্থঙ্কর রায় এবং দলের তাত্ত্বিক মুখপত্রকে আধুনিক ও সময়োপযোগী করার অন্যতম কারিগর শান্তনু দে-কে রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা কাজের মূল্যায়ন হিসাবেই দেখছেন অনেকে।

সাড়ে তিন দিনের সম্মেলন শেষে মঙ্গলবার ডানকুনি স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে সমাবেশ করে সিপিএম। সেই সমাবেশে ভিড় হয়েছিল ঠাসা। সিপিএম সমাবেশ করলে ভিড় হয়। কিন্তু তার প্রতিফলন ভোটে দেখা যায় না। সে কারণেই মিনাক্ষী থেকে মহম্মদ সেলিমেরা বার্তা দিতে চাইলেন, লড়াইকে ব্লক এবং বুথস্তরে নিয়ে যেতে হবে। মিনাক্ষী বলেন, ‘‘এটা কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নয়। আমরা টেস্ট খেলতে নেমেছি। শেষে খেলা বার করে নেব।’’ ডানকুনি স্পোর্টিং মাঠ ভরে গেলেও সিপিএম মাঠের মাঝখানের ২২ গজ ছেড়ে লাল কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখেছিল। মিনাক্ষী যা বলেছেন, তার মর্মার্থ হল, ‘ক্রিজে’ টিকে থাকতে হবে। তবে ডানকুনির উইকেটে কতটা ঘাস আর কতটা ঘূর্ণি তা পরখ করা যায়নি। ঘটনা হল, মিনাক্ষীর বক্তৃতায় যেমন গ্যালিলিও, ডারউইন ছিলেন, তেমনই ভরপুর ছিল ক্রিকেট। গত রবিবার হয়ে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘বিরাট কোহলি দেখিয়ে দিলেন, ফর্ম টেম্পোরারি। কিন্তু ক্লাস পার্মানেন্ট।’’ মিনাক্ষীর কথার ব্যখ্যা করতে গিয়ে সিপিএমের অনেকে বলছেন, শ্রেণিবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দলকে শ্রেণিমুখী করার বার্তা দিয়েছেন যুবনেত্রী।

রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, ‘‘আগামিকাল ২৬ তারিখ থেকেই ২০২৬ সালের জন্য লড়াই শুরু হবে। সেই লড়াইয়ে কোথাও দাড়ি, কমা, ফুলস্টপ থাকবে না।’’ সেলিম, মিনাক্ষী ছাড়াও বক্তৃতা করেন প্রকাশ কারাট, দেবলীনা হেমব্রম এবং দেবব্রত ঘোষ। সমাবেশ শেষ করেই সেলিম চলে যান চন্দননগরে। রবিবার গভীর রাতে পানাগড়ে যে তরুণী নৃত্যশিল্পীর মৃত্যু হয়েছিল জাতীয় সড়কে, তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেলিমের সঙ্গে ছিলেন মিনাক্ষীও।

সিপিএমের সম্মেলন হল। সমাবেশও হল। তাতে ভিড়ও হল ঠাসা। কিন্তু ২০২৬ সালের ভোটে কী হবে? আপাতত টেস্ট ম্যাচ খেলার বার্তা নিয়ে ঘরে ফিরলেন কর্মী-সমর্থকেরা। অর্থাৎ, পড়ে থাকতে হবে মাটি কামড়ে।

Md Salim Minakshi Mukherjee CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy