E-Paper

সংগঠিত লুট দেখছে বিরোধীরা, হিংসা ‘নামমাত্র’, ভোট হয়েছে উৎসবের মেজাজেই, দাবি তৃণমূলের

রাজনৈতিক তরজা, আইনি লড়াই এবং তার ভিত্তিতে গৃহীত পদক্ষেপের পরেও নির্বাচন ঘিরে অশান্তি ঠেকানো গেল না। এ দিন ভোট শেষের পর থেকে সেই অশান্তি নিয়ে নতুন করে তরজা শুরু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩ ০৮:৫১
ভোট দিতে পারছেন না— এই অভিযোগে লাঠি হাতে ভাঙড়ের কাশীপুরের বাঁশতলায় রাস্তা অবরোধ করলেন গ্রামবাসী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ভোট দিতে পারছেন না— এই অভিযোগে লাঠি হাতে ভাঙড়ের কাশীপুরের বাঁশতলায় রাস্তা অবরোধ করলেন গ্রামবাসী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট উৎসবের মেজাজে সম্পন্ন হয়েছে বলেই দাবি করল তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার ভোটের দিন ১৮ জনের মৃত্যু, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের পরেও দলের এই দাবির পক্ষে তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, যে অশান্তির কথা বলা হচ্ছে, তা সামগ্রিকতার নিরিখে এক শতাংশেরও কম জায়গায় হয়েছে। বিরোধীরা অবশ্য একযোগে ভোটলুঠের অভিযোগে সরব হয়েছে। এই অভিযোগে এ দিন রাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দফতরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

রাজনৈতিক তরজা, আইনি লড়াই এবং তার ভিত্তিতে গৃহীত পদক্ষেপের পরেও নির্বাচন ঘিরে অশান্তি ঠেকানো গেল না। এ দিন ভোট শেষের পর থেকে সেই অশান্তি নিয়ে নতুন করে তরজা শুরু হয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে শাসক তৃণমূল। ভোট শেষের পরই দলের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে বলা হয়েছে, ভোট হয়েছে নির্বঘ্নে। রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শশী পাঁজা এবং রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, ৬১ হাজার ৫৩৯ টি বুথে ভোট গ্রহণ হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৬০ টি জায়গার অশান্তি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে বিরোধীরা। কুণালের কথায়, ‘‘আটটি জায়গা ছাড়া সবই ছোটখাটো অশান্তি।’’

বিরোধীরা অবশ্য এ দজিনের নির্বাচন নিয়ে কাঠগড়ায় তুলেছে শাসক শিবিরকে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘‘বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ভোট হয়নি। লুঠ হয়েছে। হাই কোর্টে যাব।’’ সেই সঙ্গেই রাজ্যে ৩৫৫ বা ৩৫৬ জারির দাবিও তুলেছেন তিনি। এ দিন বেশির ভাগ জায়গায় তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেসের। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ভোটের দিন যা হল, তার দায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের। তবে এত হুমকি, মারধর, গুলি, বোমার সামনেও বাংলার মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।’’ আর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘দিদি, আপনি জিতে গিয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন! রাতেই ব্যালট বুথের বাইরে চলে গিয়েছে। ছাপ্পা মেরে তা আবার বুথে নিয়ে এসেছে। নির্বাচনের নামে এইরকম নোংরামি বাংলার ইতিহাসে কখনও হয়নি।’’

ভোট পর্ব ঘিরে যে হিংসা ও উত্তেজনা হয়েছে, তাকে খুবই সামান্য বলে উল্লেখ করলেও তার জন্য বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রশ্ন, ‘‘দিনহাটায় ভোটের বাক্সে জল ঢালল কারা? রানিনগর, রেজিনগরে মারা গেল কারা? বাদুড়িয়ায় ছাপ্পা ভোট দিল কারা?’’ তাঁর পাশে বসে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণালের অভিযোগ, ‘‘ভোট হয়েছে উৎসবের মেজাজে। তৃণমূল ও বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল বিরোধীরা। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস ও আইএসএফ মিলে পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ করেছে তৃণমূলকে। মৃতদের অধিকাংশই তৃণমূল।’’ এই সূত্রেই রাজ্যপালকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল এ সবে উস্কানি দিয়েছেন। প্ররোচনা দিয়েছেন।’’ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় ছিল? কী করছিল?’’

সকালে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামে ভোট দেওয়ার পরই রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় অশান্তির খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনারকে নিশানা করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘"দিল্লিতে কে, কী ভাববেন বা অন্যরা কে, কী ভাবছেন জানি না। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে বাংলাকে পরিত্রাণ দিতে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে এসেছিলাম। বাংলার গণতন্ত্রকে বাঁচাতে প্রয়োজনে পতাকা ছাড়া অথবা পতাকা নিয়ে লড়ব।" এ দিন সন্ধ্যায় নির্বাচনী হিংসা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্যের সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষ ৩৫৬ ধারা চাইছেন।’’

এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেন, “নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য পুলিশের সহযোগিতায় শাসক দলের সমাজবিরোধীরা ভোটে অসংখ্য হত্যা করেছে। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে।” সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দাবি, ভোট গ্রহনের দিন ৩৫ জন রাজনৈতিক কর্মী ও গ্রামীণ ভোটারের প্রাণহানিতে নির্বাচন মৃত্যুর ‘মহোৎসব’-এ পরিণত হল।

বিরোধীদের অভিযোগ ও কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি নস্যাৎ করে কুণালের জবাব, ‘‘কারা বলছে এ সব কথা! এখানে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের আগে তা মণিপুরে কাযর্কর করুক। আসলে পরাজয়ের আশঙ্কায় বিরোধী চূড়ান্ত অবসাদে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসা প্রয়োজন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 TMC BJP Congress

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy