Advertisement
১১ মে ২০২৪

দিল্লির হাসপাতালে তিন দিন স্রেফ পড়ে ছিল নির্যাতিতা

রাজধানীতে এ রাজ্যের কিশোরী আয়েশার (নাম পরিবর্তিত) গণধর্ষণের ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল দিল্লি পুলিশ ও গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

রাজধানীতে এ রাজ্যের কিশোরী আয়েশার (নাম পরিবর্তিত) গণধর্ষণের ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল দিল্লি পুলিশ ও গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল।

আয়েশার পরিবারের অভিযোগ, তিন দিন ধরে তাকে প্রায় বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়েছিল। এমনকী, কিশোরী গণধর্ষণের শিকার জেনেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেননি। পরে মেয়েটির শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে দেখে তার পরিবারের খোঁজ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোনও মতে ওই কিশোরী নিজের দিদির মোবাইল নম্বরটি দেয়। এর পর খবর আসে তার পরিবারের কাছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই কিশোরীর পরিবার সূত্রের খবর, গত সোমবার রাত ১০টা নাগাদ একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে নিগৃহীতার দিদির মোবাইলে। জানতে চাওয়া হয়, আয়েশা তাঁদের কে হন। ওই ফোনের সূত্রেই বছর খানেক ধরে নিখোঁজ বোনের খবর জানতে পারেন আয়েশার দিদি। শনিবার আয়েশার দিদি জানান, তিনি শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। সেই রাতে ফোনে খবর পাওয়ার পরেই ভাইকে নিয়ে ডায়মন্ডহারবার থানায় ছোটেন তিনি। সেই রাতেই খবর পাঠানো হয় দিল্লির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। তত ক্ষণে হাসপাতালের শয্যায় কিশোরীর তিন দিন কেটে গিয়েছে।

দিল্লি পুলিশ এবং হাসপাতালের গাফিলতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। তিনি হাসপাতালে পৌঁছে আয়েশার শারীরিক অবস্থা দেখে তাঁকে ‘কেবিনে’ স্থানান্তর করানোর পরেই চিকিৎসা শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘‘পাচার ও গণধর্ষণের শিকার জেনেও কিশোরীকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডের একটি শয্যায় পুলিশ পাহারা ছাড়াই ফেলে রাখা হয়েছিল। পাচারকারীরা যে কোনও সময়ে মেয়েটির আরও বড় ক্ষতি করতে পারত।’’ স্বাতীদেবী জানান, আসলাম ওরফে জব্বার মেয়েটিকে ফেলে যাওয়ায় তিন দিন পরে মঙ্গলবার ফের হাসপাতালে ঢুকে ঘোরাঘুরি করছিল। সন্দেহজনক ভাবে ঘুরতে দেখে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন তাকে ধরে ফেলেন। আসলামের কথায় অসংলগ্নতা দেখে তখন তাঁরাই ১০০ ডায়াল করে দিল্লি পুলিশকে খবর দেয়। কিন্তু দিল্লি পুলিশ হাসপাতালে এসে অভিযুক্ত জেনেও আসলামকে গ্রেফতার করেনি। উল্টে গাজিয়াবাদ পুলিশের মামলা বলে দায় এড়িয়ে খবর পাঠায় গাজিয়াবাদ পুলিশে। অভিযোগ, গণধর্ষণের শিকার জেনেও হাসপাতালে ভর্তি আয়েশার বয়ানটুকুও নেয়নি তারা। পরে গাজিয়াবাদ পুলিশ এসে ওই সেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে আসলামকে গ্রেফতার করে। এর পরে আয়েশার কেবিনের বাইরে বসানো হয় পুলিশি পাহারা।

যদিও দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, গাজিয়াবাদ পুলিশের কাছে আগে থেকেই অভিযোগ দায়ের করা ছিল। তাই নতুন করে কোনও অভিযোগ দায়ের না-করে গাজিয়াবাদ পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল।

তাদের এই বক্তব্যে বিস্মিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির কর্মীরা। সংস্থার অভিযোগ, মেয়েটিকে এ রাজ্য থেকে পাচার করে প্রথমে দিল্লি ও পরে গাজিয়াবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন রাজ্যে। অপরাধ ওই সব ক’টি জায়গাতেই হয়েছে। ফলে দিল্লি পুলিশের সদিচ্ছা থাকলে নিজেরাই মামলা দায়ের করে আসলামকে গ্রেফতার করতে পারত। কারণ পাচার রোধের জন্য সব রাজ্যে একটি করে ‘অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট’ তৈরি করে পুলিশকে আইনত এই অধিকার দেওয়া রয়েছে। কিন্তু দিল্লি পুলিশ তা করেনি। এমনকী এ রাজ্যের পুলিশকেও কিছু জানায়নি।

মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন অভিযোগ তুললেও হাসপাতালের গাফিলতির বিষয়ে তিনি অবহিত নন বলে জানিয়েছেন দিল্লি সরকারের মুখপাত্র নগেন্দ্র শর্মা। তাঁর দাবি, চিকিৎসা শুরু করতে দেরিও করেনি হাসপাতাল। কিন্তু স্বাতী মালিওয়াল তো অভিযোগ করেছেন, তিন দিন কার্যত বিনা চিকিৎসা ফেলে রাখা হয়েছিল নির্যাতিতাকে, তা হলে? এ প্রশ্নের উত্তরে শর্মার জবাব, এমন কিছু ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনারের আধিকারিক ও কর্মীরা এ দিনই ওই কিশোরীকে দেখতে হাসপাতালে যান। পরে তাঁরা ডেপুটি কমিশনার প্রসেনজিৎ দাসের কাছে রিপোর্ট জমা দেন। তাতে বলা হয়েছে, নির্যাতিতা চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা তাঁদের জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE