Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Child Marriage

বিয়ে করব না! রুখে দাঁড়াচ্ছে নাবালিকারা

মেয়েটি মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে কন্যাশ্রী ক্লাবেরও সদস্যা। নিজেরও বিয়ে যে ভাবে রুখল, তা অন্যদেরও সাহস জোগাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ১৬:০৮
Share: Save:

মেয়েকে কিছু না জানিয়েই বাবা-মা বিয়ে ঠিক করেছেন। সোমবার বিকেলে বা়ড়ি ফিরে সে কথা জানতে পারে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। আজ, বুধবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার মাদ্রাসায় এসেই শিক্ষককে এ কথা জানায় সে। তাকে হস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। না হলে বাড়ি ফিরলেই বিয়ে দেওয়া হবে।

ওই শিক্ষক সঙ্গে-সঙ্গে প্রশাসনকে খবর দেন। প্রশাসনের কর্তারা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাইমাদ্রাসায় যায়। মেয়েটির বাবা-মাকে সেখানে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁদের বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করা হয়। দিন সাতেকের জন্য মেয়েটিকে হস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ওরগ্রাম চতুষ্পল্লি হাইমাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিক্ষক নিজাম আহমেদ যেমন বলেন, ‘‘মেয়েটি মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে কন্যাশ্রী ক্লাবেরও সদস্যা। নিজেরও বিয়ে যে ভাবে রুখল, তা অন্যদেরও সাহস জোগাবে।’’

আরও খবর
শিক্ষকের দ্বারস্থ, বিয়ে রুখল ছাত্রী

মেয়েটি জানায়, বিভিন্ন কন্যাশ্রী ক্লাবের সভায় গিয়ে কম বয়সে বিয়ের কুফল সম্পর্কে জেনেছে। সে কথা বাবা-মাকে জানালেও তাঁরা বিয়ে বন্ধে রাজি হননি। সে জন্যই স্কুলের শিক্ষকের দ্বারস্থ হয় সে। মেয়েটির বাবা-মা বলেন, ‘‘এই বয়সে আমাদের গ্রামের অনেক মেয়েরই বিয়ে হয়ে যায়। আমরাও বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু এর খারাপ দিক জানা ছিল না।’’

ভাতারের ওরগ্রামের এই ঘটনা আসলে বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। কাঁচা বয়সে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলাটা গ্রাম বাংলায় আজও যেন একটা রেওয়াজ। যেমন, মাসখানেক আগে লালপুর গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী রূপজান ঘরামি ও দশম শ্রেণির রফিজা পাইকের বিয়ের ঠিক হয়েছিল। বিয়েতে তাদের মত ছিল না। বাবা-মাকে সে কথা জানাতে পারেনি। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে সরাসরি ফোন করে তাঁকে। প্রধান শিক্ষক খবর পেয়েই মেয়ে দু’টির সহপাঠীদের নিয়ে হাজির হন দুই পরিবারের কাছে। দিনমজুর বাবা-মাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ হয়।

আরও খবর
বিয়ে রুখে সম্মানিত দুই কিশোরী

সপ্তাহখানেক আগে কালনার নান্দাইয়ের এক নাবালিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের একটি ছেলেকে। তার অভিযোগ, অভিভাবকেরা তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করছিলেন। কোনওক্রমে সে আবার শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে আসে। এই খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করলেন প্রশাসনের কর্তারা। মঙ্গলবার প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে সেখানে যান চাইল্ডলাইনের কর্তারা। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে কম বয়সে বিয়ের কুফল বোঝান তাঁরা। মেয়েটিকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান আধিকারিকেরা। তার উপরে যাতে নির্যাতন না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা হবে বলে জানান দেবলীনাদেবী।

নিজেদের বিয়ে রুখে দেওয়ায় মঙ্গলবার দুই সাহসিনীকে পুরস্কৃত করে রাজ্য মহিলা কমিশন। মঙ্গলবার দুপুরে সল্টলেকে জলসম্পদ ভবনের কমিউনিটি সেন্টারে মথুরাপুরম ১ ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দুই কিশোরীর হাতে ট্রফি ও ৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, সমাজকল্যাণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ঊর্মিমালা বসু-সহ অনেকে।

ছাত্রীরাও গর্বিত। তারা জানায়, এমন অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আনন্দ পেয়েছে খুব। আঠারো বছরের নীচে কোনও মেয়ের বিয়ের খবর পেলে তারা রুখে দেবে বলে জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE