Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আট দিন পরে দেহ মিলল দীপঙ্করের

গত ১৬ মে মাকালু শৃঙ্গ ছুঁয়ে নেমে আসার সময়ে তুষারঝড়ের মুখে হারিয়ে যান ৫২ বছরের ওই পর্বতারোহী। তার পর থেকেই চরম উৎকণ্ঠায় ছিল ঘোষ পরিবার।

স্মৃতি: বালির বাড়িতে দীপঙ্কর ঘোষের পর্বতারোহণের জুতো। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

স্মৃতি: বালির বাড়িতে দীপঙ্কর ঘোষের পর্বতারোহণের জুতো। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

খোঁজ পাওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তাঁকে মৃত ঘোষণা করেনি নেপাল সরকার। তাই পরিবারের আশা ছিল, ‘মিরাক্‌ল’ ঘটিয়ে জীবিত ফিরে আসবেন বালির পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষ। কিন্তু শুক্রবার সকালে পাওয়া খবরে নিভল সেই আশার দীপও।

এ দিন ভোরে উদ্ধারকারী শেরপার দল বরফ ঢাকা পাহাড় থেকে খুঁজে পেয়েছেন দীপঙ্করের নিথর দেহ। উদ্ধার হয়েছে ভারতীয় সেনার অভিযাত্রী নারায়ণ সিংহের দেহও। সেই খবর পাওয়ার পর থেকেই বেলানগরে দীপঙ্করের বাড়ি-সহ গোটা পাড়া থমথমে। দোতলা বাড়ির একতলায়, একই ঘরে পর্বতারোহী ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমোতেন জেঠতুতো দাদা শান্তনু। তিনি বললেন, ‘‘কী আর বলব? যাওয়ার দিন ট্রেনে তুলে দিয়ে এলাম। ওর দেহ যে পাওয়া গিয়েছে, সেটাই অনেক।’’ ঘরে সাজানো অসংখ্য স্মারক, মেডেল, ছবি। এভারেস্ট, লোৎসে-সহ অন্য অভিযানের উপরে দীপঙ্করের লেখা বই ছড়ানো টেবিলে। শান্তনু জানালেন, প্রায় ৪৭টি অভিযানে সফল ভাইকে আর অভিযানে যেতে বারণ করতেন সকলে। বললেন, ‘‘এ বার আত্মীয়, বন্ধু, পারিবারিক গুরুদেবও বারণ করেছিলেন। কিন্তু ও তো কোনও বারণই শুনত না।’’

গত ১৬ মে মাকালু শৃঙ্গ ছুঁয়ে নেমে আসার সময়ে তুষারঝড়ের মুখে হারিয়ে যান ৫২ বছরের ওই পর্বতারোহী। তার পর থেকেই চরম উৎকণ্ঠায় ছিল ঘোষ পরিবার। দীপঙ্করের বন্ধু সৌম্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী হয়েছিল ক্যাম্প ৪-এর উপরে, কেউই জানেন না। সবই শোনা কথা। তবে শারীরিক ভাবে ও কিন্তু ফিট ছিল।’’ আয়োজক সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, আবহাওয়া খারাপ থাকায় ২২ মে-র আগে দীপঙ্করের খোঁজে উদ্ধারকারী শেরপার দলের যাওয়া সম্ভব নয়। সাধারণত কোনও পর্বতারোহী নিখোঁজ হলে ৭২ ঘণ্টা পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করে নেপাল সরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সময়সীমা পেরোনোর পরেও সেই ঘোষণা হয়নি। দীপঙ্করের ভাগ্নি সেমন্তী ঘোষ বলেন, ‘‘দু’বছর আগে ধৌলাগিরিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অন্যকে বাঁচিয়েছিল মামা। আর আজ সেই লোকটাই হিমালয়ে হারিয়ে গেল।’’

সূত্রের খবর, দীপঙ্করের খোঁজে তিন দিন ক্যাম্প ৪-এর উপরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল হেলিকপ্টার। কিন্তু প্রথম দু’দিন খারাপ আবহাওয়া থাকায় সেই চেষ্টা সফল হয়নি। শেষ দিন আকাশে চক্কর কাটার সময়ে ৭,৬০০ মিটার উচ্চতা থেকে বরফের বুকে কালো বিন্দু দেখতে পান পাইলট। সেই সূত্র ধরেই গত বুধবার চ্যাঙ দাওয়া শেরপা-র নেতৃত্বে ১৪ জনের উদ্ধারকারী দল ক্যাম্প ৪-এর উদ্দেশে রওনা দেয়। রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ সংক্রান্ত উপদেষ্টা দেবদাস নন্দী বলেন, ‘‘আবহাওয়া খারাপ থাকায় বৃহস্পতিবার কিছু দূর গিয়েও ফিরে আসেন শেরপারা। রাতে ফের অভিযান চালিয়ে শুক্রবার ভোরে দেহ উদ্ধার হয়েছে। শেরপারা দীপঙ্করের দেহ ক্যাম্প-৩ পর্যন্ত নামিয়ে এনেছেন। শনি বা রবিবার দেহ আনা হবে কাঠমান্ডুতে।’’ তবে উদ্ধারের মধ্যেও বিপর্যয় পিছু ছাড়েনি। বেসক্যাম্প সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধারকারী দলের এক শেরপা এ দিন বিকেলে মারা গিয়েছেন।

বন্ধুকে আনতে আগামী দু’-তিন দিনের মধ্যেই কাঠমান্ডু পৌঁছবেন সৌম্যবাবু। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এভারেস্ট জয়ের পরে ওকে আনতে গিয়েছিলাম। এ বারও যাব, তবে ওর দেহ আনতে।’’

অন্য দিকে সূত্রের খবর, কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে মৃত দু‌ই অভিযাত্রী বিপ্লব বৈদ্য ও কুন্তল কাঁড়ারের দেহ আজ, শনিবার কলকাতায় পৌঁছবে। এভারেস্টে যাওয়া চন্দননগরের পিয়ালী বসাককেও অসুস্থ অবস্থায় শুক্রবার ক্যাম্প ২ থেকে উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে কাঠমান্ডু নিয়ে আসা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Mountaineer Mount Makalu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE