সে দিন। পুরভোটের প্রচারে দীপালির সঙ্গে পুতুল়।—ফাইল চিত্র।
আগে তাঁকে সে ভাবে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে দেখেননি তৃণমূলের কর্মীরা। দলের মিছিলে আর পাঁচজন কর্মী-সমর্থকের মতো হাঁটা ছাড়া আর বিশেষ কোনও ভূমিকায় তাঁকে দেখাও যায়নি। মাসখানেক আগে মহিলা তৃণমূলের শহর সভানেত্রীর পদে তাঁকে বসানো হলেও অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পেটে লাথি মারার ঘটনায় নাম জড়ানোর পরে তাঁর পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তবুও সোনামুখী থানার পুলিশ সেই পুতুল গড়াইকে কেন গ্রেফতার করতে পাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলেরই একাংশের মধ্যে।
গত রবিবার সোনামুখী পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তৃণমূলের পুরপ্রধান সুরজিতবাবুর অনুগামী নিসার আলম আনসারির বাড়িতে জনা ৩৫ কর্মী নিয়ে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে পুতুলের বিরুদ্ধে। বছর খানেক আগে এলাকারতেই বিয়ে হয় নিসারের। বিয়ের পরে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে নিসারের বিরুদ্ধে। জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। রবিবার নিসারের শ্বশুরবাড়ির হয়ে বিয়েতে দেওয়া যৌতুক ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতেই পুতুল নিসারের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। মারমুখী ওই নেত্রী ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা নিসারের মা সাবিনা বেগমকে মারধর করে এবং অন্তঃসত্ত্বা দিদি সাহানা বেগমের পেটে লাথি মারেন বলে অভিযোগ। ওই দিনই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ পুতুলকে সাতদিন পরেও গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত ক’দিন ধরে সোনামুখী থানার পুলিশ দাবি করে আসছে অভিযুক্ত পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে। যদিও সুরজিতের অনুগামীদের অভিযোগ, পুতুল এলাকাতেই রয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি ফোনও ধরছিলেন। ঘটনাটি নিয়ে হইচই হওয়ায় দলেরই একাংশের চাপেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করছে না। কিন্তু পুতুলের গ্রেফতারি আটকে দল কেন বিধানসভা ভোটের মুখে ঝুঁকি নিচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না ওই তৃণমূল কর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুতুলের সে ভাবে তৃণমূলে এতদিন কোনও ভূমিকাই ছিল না। মিছিলে মাঝে মধ্যে তাঁকে হাঁটতে দেখা যেত। সে ভাবেই তিনি বিধায়ক দীপালি সাহার কাছে চলে যান। গত পুরভোটের সময় পুতুলকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দীপালিদেবীর সঙ্গে প্রচারে দেখা যায়।
তারপরেই তাঁর দলে গুরুত্ব বাড়ে। মাসখানেক আগে দীপালির ‘সুপারিশেই’ পুতুলকে সোনামুখী শহর মহিলা তৃণমূলের পদ দেওয়া হয়। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন খোদ জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী শম্পা দরিপাই। ওই ঘটনা নিয়ে হইচই হওয়ার পরে তিনি খোঁজখবর নেন। তারপরেই পুতুলের পদ কেড়ে নেওয়া হয়। যদিও দীপালিদেবী এখনও পুতুলের পাশে আছেন বলে নানা ভাবে জানিয়েছেন। সুরজিৎ অনুগামীদের অভিযোগ, বিধায়ক নিজের ঘনিষ্ঠ নেতাদের দিয়ে পুলিশের উপরে চাপ সৃষ্টি করে পুতুলকে গ্রেফতারে বাধা দিচ্ছেন। যদিও জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার ওই সব অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “তদন্ত ঠিক পথেই চলছে।”
ওই ঘটনায় পুতুলের নাম জড়ানোর পরে তাঁকে যাঁরা চিনতেন তাঁরাও অনেকে অবাক হয়ে গিয়েছেন। বিধায়কের এক ঘনিষ্ঠের কথায়, “পুতুল আমাদের মিছিলে হাঁটতেন। দীপালিদি-র নির্দেশ মতোই তিনি কাজও করতেন। কিন্তু তিনি যে এত বড় একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারেন বিশ্বাস হচ্ছে না।’’ পুতুলের শ্বশুরবাড়ি সোনামুখীর লালবাজার এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, সাধারণ গৃহবধূর মতোই ছিলেন তিনি। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ধীরে ধীরে দীপালির ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন পুতুল। তবে তাঁর স্বামী সে ভাবে সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করেন না। তাঁর ফটোকপির দোকান রয়েছে।
পুতুলকে গ্রেফতারে তিনি কি বাধা দিচ্ছেন? দীপালিদেবী অবশ্য শনিবার এ নিয়ে আর মুখ খুলতে চাননি। তাঁর একটাই কথা, “সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছুই বলব না। দলকে যা বলার বলেছি। এ বিষয়ে দল আমাকে কোনও ধরনের মন্তব্য করতে নিষেধ করেছে।” তবে একজন মহিলার উপর নির্যাতনে মহিলা তৃণমূলেরই এক নেত্রীর নাম জড়িয়ে পড়ায় স্পষ্টতই অস্বস্তিতে দলের একাংশ। তাঁদের অন্যতম জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী শম্পা দরিপা এ দিনও বলেন, “সব দিক বিবেচনা করেই পুতুলকে পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরে পুতুলকে গ্রেফতারের দাবিতে দলেরই একাংশ নিসারের পরিবারে পাশে দাঁড়িয়ে থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সেখানে যান পুরপ্রধান সুরজিৎবাবুও। তারপরেও পুলিশ পুতুলকে না ধরায় দলেরই ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অনেক তৃণমূল কর্মীর মত।
সুরজিৎবাবু এ দিনও দাবি তুলেছেন পুতুলকে গ্রেফতার করতে হবে। তিনি বলেন, “অবিলম্বে পুতুলকে গ্রেফতার করতে হবে। কারণ বিধানসভা ভোটে প্রচারে নেমে এই ঘটনাটি নিয়ে আমাদের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy