Advertisement
E-Paper

এনআইএ-র লোক এসেছে, ভিড় জহিরুলের বাড়িতে

গ্রামের ছেলে জহিরুল শেখের নাম জড়িয়েছে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে। দু’দিন আগেই, শুক্রবার এলাকায় ঘুরে গিয়েছে সিআইডি। সে দিন সিআইডি-র গোয়েন্দারা পা রাখতেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল নদিয়ার থানারপাড়া থানার গমাখালি গ্রাম। পরে এ সব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেও বাইরের লোক দেখলেই মুখে কুলুপ পড়ছিল পড়শিদের। সংবাদমাধ্যমের কাছেও মুখ খুলতে নারাজ ছিলেন তাঁরা।

গৌরব বিশ্বাস ও কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৬
থানারপাড়ায় জহিরুল শেখের বাড়িতে এনআইএ-র তদন্তকারীরা। নিজস্ব চিত্র

থানারপাড়ায় জহিরুল শেখের বাড়িতে এনআইএ-র তদন্তকারীরা। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের ছেলে জহিরুল শেখের নাম জড়িয়েছে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে। দু’দিন আগেই, শুক্রবার এলাকায় ঘুরে গিয়েছে সিআইডি। সে দিন সিআইডি-র গোয়েন্দারা পা রাখতেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল নদিয়ার থানারপাড়া থানার গমাখালি গ্রাম। পরে এ সব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেও বাইরের লোক দেখলেই মুখে কুলুপ পড়ছিল পড়শিদের। সংবাদমাধ্যমের কাছেও মুখ খুলতে নারাজ ছিলেন তাঁরা। অথচ, রবিবার সেই গ্রামে তদন্তে যাওয়া জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) গোয়েন্দাদের কাছ থেকে দেখতে জহিরুলের বাড়ি ঘিরে জমে উঠল ভিড়।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হওয়া রাজিয়াবিবির এক আত্মীয়ের সূত্রে গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে বছর ছাব্বিশের জহিরুলের নাম। তার দরমার বেড়া ও টালির চালের বাড়ি থেকে ৪১টি জিলেটিন স্টিকও উদ্ধার হয়েছে। এলাকায় ‘শান্ত ও লাজুক’ স্বভাবের যুবক বলে পরিচিত জহিরুলের খোঁজে শুক্রবার গিয়েছিলেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা। সেই রাত থেকেই এলাকায় শুরু হয়েছে ফিসফাস। পাড়ার মোড়ে, মাচায়, চায়ের দোকানে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু জহিরুলের সঙ্গে কি সত্যিই জঙ্গি-যোগ রয়েছে?

এনআইএ-এর দুই গোয়েন্দা এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ থানারপাড়া থানায় যান। সেখানে বাজেয়াপ্ত করা ৪১টি জিলেটিন স্টিক দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন যে, সেগুলো ঝাড়খণ্ডে তৈরি। পুলিশের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সেখান থেকে বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ তাঁরা যান জহিরুলের বাড়িতে। সঙ্গে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক। জহিরুলের বাবা জুয়াদ আলি শেখ এবং দাদা জিয়ারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তাঁরা। জহিরুলের কাজকর্ম, বর্তমান ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানতে চান। জহিরুলের বাবা ও দাদা তাঁদের জানান, জহিরুল স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে বেশ কয়েক বছর থেকে বাইরে থাকে। কিন্তু কোথায় থাকে বা তার ফোন নম্বর তাঁরা বলতে পারেননি। জুয়াদ আলির কথায়, “জহিরুল আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখে না। শেষ বাড়ি এসেছিল ঈদের আগে। তারপরে সে কোথায় আছে, তা জানি না।”

শিমুলিয়া গ্রামে ঢুকছেন এনআইএ কর্তারা। রবিবার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

এই সব কথাবার্তা যখন বাড়ির অন্দরে চলছে, তখন পড়শিদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ‘এনআইএ-র লোক’ এসেছে শুনে একটু একটু করে বাড়িটির বাইরে ভিড় জমতে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়শি বলেন, “এনআইএ-এর কথা সংবাদমাধ্যমে শুনেছি। এই প্রথম দেখলাম। পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে ভয় করে। কিন্তু এরা তো একেবারে অন্য রকম!” পাশ থেকে আর একজনের মন্তব্য, “ওই জন্যই তো ওদের আনা হয়েছে। কথাবার্তায় মনে হবে মাটির মানুষ। পরে লোকজনের সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়ে বার করে আনবে ভিতরের খবর।”

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এনআইএ-এর আধিকারিকদের সঙ্গে জহিরুলের বাড়ির লোকজনও অনেকটাই স্বচ্ছন্দে কথা বলেছেন। সিআইডি-র গোয়েন্দারা যখন জেরা করছেন, তখন এক সময় জ্ঞাল হারান জুয়াদ। এ দিন তেমন কিছু হয়নি। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “দিল্লি থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা বাংলা ভাল বলতে পারেন না। কিন্তু ভাঙা বাংলায় এমন আন্তরিক ভাবে কথা বলছিলেন, মনে হচ্ছিল, যেন কত দিনের চেনা!”

জিজ্ঞাসাবাদ মিটতে এনআইএ-র গোয়েন্দারা জহিরুলের দরমার বেড়া দেওয়া ঘরটি খুলেও দেখেন। ওই ঘরের যে বাক্স থেকে সিআইডি জিলেটিন স্টিক, জহিরুলের ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট উদ্ধার করেছিল সেই বাক্সটিও তাঁরা নাড়াচাড়া করেন। তবে কোনও কিছুই তাঁরা নিয়ে যাননি। গোয়েন্দারা গমাখালি ছেড়ে বেরিয়ে যান বিকেল ৪টে নাগাদ। জহিরুলের বাড়ি থেকে গাড়িতে করিমপুরের বারবাকপুরে (খাগড়াগড় বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদ এই গ্রামে এসেই বিয়ে করেছিল রাজিয়াকে) পৌঁছতে সময় লাগে বড়জোর মিনিট দশেক। এনআইএ প্রতিনিধিরা এ দিন সেখানে যাননি।

তবে গমাখালির বাসিন্দাদের জল্পনা, “এ বার কি ওঁদের পরবর্তী মিশন বারবাকপুরে?”

khagragarh blast kallol pramanick gaurab biswas NIA zahirul sekh officers zahirul sekh house state news online state news burdwan blast case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy