Advertisement
E-Paper

কন্যাশ্রীর ভরসায় রুখেছিলেন বিয়ে, এখন আতান্তরে পুরুলিয়ার অষ্টমী

ভেবেছিল, উচ্চমাধ্যমিকের পর কন্যাশ্রী-২ এর পঁচিশ হাজার টাকা সম্বল করে পড়াশোনা চালাবে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪১
অষ্টমী রায়। —নিজস্ব চিত্র।

অষ্টমী রায়। —নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম জাহাজপুরের মেয়ের যেমন রোখ, তেমন পড়ার ইচ্ছে। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে ইতিহাসের দিদিমণি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল সে। পড়বে বলে অভিভাবকদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ২০১৫ সালে নিজের বিয়ে রুখে দিয়েছিল, বিডিও-র কাছে নালিশ করতে পিছপা হয়নি। ভেবেছিল, উচ্চমাধ্যমিকের পর কন্যাশ্রী-২ এর পঁচিশ হাজার টাকা সম্বল করে পড়াশোনা চালাবে।

কিন্তু সে লড়াই থেমে যেতে বসেছে। ২০১৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে দেড় বছর কেটে গেলেও কন্যাশ্রীর টাকা ছড়ড়া ডুমডুমি গ্রাম পঞ্চায়েতের কিশোরী অষ্টমী রায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি। যে স্কুল থেকে সে মাধ্যমিক দিয়েছিল এবং যে স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিল, সেই দুই স্কুল কর্তৃপক্ষ এ জন্য পরস্পরকে দুষছেন। এরই মধ্যে গত জুলাইয়ে বাবা বৃন্দাবন রায়ের মৃত্যু হয়েছে। বাড়ির বড় মেয়ে হিসেবে মা ও পাঁচ বোনের পেট চালাতে কলেজের পড়া বন্ধ করে দিনমজুরের কাজ ধরতে হয়েছে অষ্টমীকে। ফোনে নিস্পৃহ গলায় সে বলে, ‘‘আমি আর কন্যাশ্রী নই। আমি হতাশশ্রী। লেখাপড়া আমাদের মতো গরিবদের জন্য নয়।’’ অথচ অষ্টমীর মতো দরিদ্র মেয়েদের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতেই চালু হয়েছিল কন্যাশ্রী। তা হলে?

যে স্কুল থেকে অষ্টমী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে, সেই বড়াসিনি নন্দলাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক মণ্ডল প্রথমে বলেন, ‘‘কারও স্কুল বদল হলে তার কন্যাশ্রী আইডি নম্বর ট্রান্সফার করতে হয়। অষ্টমী যেখান থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছে, সেই বিলতোড়া হাইস্কুল আইডি ট্রান্সফার করছে না।’’

আরও পড়ুন: দু’টি জরায়ু নিয়ে মা হলেন তরুণী

বিলতোড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কার্তিক মুখোপাধ্যায়ের আবার দাবি, ত্রুটি বড়াসিনি স্কুলেরই। তাঁর কথায়, ‘‘মাধ্যমিকের পর কোনও ছাত্রী অন্য স্কুলে গেলে কন্যাশ্রীর পোর্টালেই তার আই়ডি ট্রান্সফার করা হয়। নতুন স্কুলের দায়িত্ব, সেটা যুক্ত করে নেওয়া। আমরা অষ্টমীর আই়ডি ট্রান্সফার করেছিলাম ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর। কিন্তু বড়াসিনি স্কুল তা পোর্টালে যুক্ত করেনি।’’ দীপকবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ওরা নিশ্চয়ই আগে অষ্টমীর নাম কন্যাশ্রী তালিকায় নিয়মিত রিনিউ করেনি। তাই সমস্যা হচ্ছে।’’ এ বার কার্তিকবাবুর উত্তর, ‘‘২০১৫ সালের ১৮ মার্চ অষ্টমীর নাম রিনিউ করা হয়েছে, ১৩ মে তা অনুমোদিত হয়েছে।’’

নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘২০১৬-’১৭ ও ২০১৭-’১৮ সালে পুরুলিয়ায় কন্যাশ্রী-২ এর টাকা পায়নি, এমন হাজারখানেক কিশোরীর তালিকা তৈরি হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে যাচাই করে দেখা হবে, কেন টাকা পায়নি। টাকা পাওয়ার যোগ্য হলে তৎক্ষণাৎ দেওয়া হবে। অষ্টমীর বিষয় নিশ্চয়ই তার মধ্যে উঠবে।’’

অষ্টমী অবশ্য ধরেই নিয়েছে, জনমজুর খাটাই তার ভবিষ্যৎ। তার কথায়, ‘‘৫৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলাম। রঘুনাথপুর কলেজে ইতিহাস ও সংস্কৃত নিয়ে পাস-এ ভর্তি হলাম। ‘বাংলা শিশু সুরক্ষা সমিতি’ নামে একটি সংগঠন কিছু দিন পড়ার খরচ দিয়েছিল। তার পর সব বন্ধ। রোজ ১৫ কিলোমিটার বাসে আসা-যাওয়াতেও তো পয়সা লাগে।’’

Kanyashree Purulia জাহাজপুর কন্যাশ্রী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy