Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ত্রাতা নিম্নচাপের দাপটেই উত্তর-দক্ষিণে এক দিনে বর্ষা

পশ্চিমবঙ্গে এ দিন বর্ষা সমাগমের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী বিভিন্ন জেলায় মৌসুমি বায়ু পৌঁছে গিয়েছে। সেই সঙ্গেই সে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায়।

ভরসা: বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচিয়ে ঘরমুখো জনতা। সোমবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র

ভরসা: বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচিয়ে ঘরমুখো জনতা। সোমবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০৪:১৭
Share: Save:

পশ্চিমের ছিনতাইবাজ নিম্নচাপের কবল থেকে বর্ষারানিকে উদ্ধার করে আনার জন্য বঙ্গোপসাগরে কোমর বাঁধছিল সে। সেই পাল্টা নিম্নচাপের পরাক্রমে মৌসুমি বায়ু অভিমুখ বদলে পূর্বমুখী তো হলোই। দীর্ঘকালের রেওয়াজ ভেঙে সোমবার একই সঙ্গে বর্ষা ঢুকে পড়ল দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গে।

রেওয়াজ মানে বাংলার উত্তর ও দক্ষিণে কিছু আগে-পরে মৌসুমি বায়ু পৌঁছনোর ধারা। সাধারণ ভাবে বর্ষা আগে ঢোকে উত্তরবঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গে পরে। কারণ, দুই বঙ্গে মৌসুমি বায়ু পৌঁছয় একেবারে আলাদা দু’টি পথে। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের একটি শাখা আন্দামান, মায়ানমার, উত্তর-পূর্বের পথ ধরে ক্রমে ঢুকে পড়ে উত্তরবঙ্গে। ওই বায়ুপ্রবাহের অন্য শাখাটি কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা হয়ে এগোতে থাকে দক্ষিণবঙ্গের দিকে।

কিন্তু এ বার এই প্রাকৃতিক রীতির ব্যতিক্রম ঘটেছে। মায়ানমার-পথে বর্ষা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকে পড়েছিল ৩০ মে। কিন্তু তা অসম থেকে আর নীচে নেমে আসেনি। ফলে উত্তরবঙ্গে আগেভাগে পৌঁছতে পারেনি মৌসুমি বায়ু। অন্য দিকে, কিছু আগে কেরলে বর্ষা পৌঁছে গেলেও তার অগ্রগতি থমকে যায় দাক্ষিণাত্যেই। পরে পশ্চিমের এক বর্গি-নিম্নচাপ তাকে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। বঙ্গোপসাগরের পাল্টা এক নিম্নচাপের সৌজন্যে মুক্ত বর্ষা এ দিন একসঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে ঢুকেছে।

পশ্চিমবঙ্গে এ দিন বর্ষা সমাগমের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী বিভিন্ন জেলায় মৌসুমি বায়ু পৌঁছে গিয়েছে। সেই সঙ্গেই সে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায়। ফলে আকাশ ছেয়ে গিয়েছে মেঘে। লাগাম পড়েছে তাপমাত্রাতেও।

আরও পড়ুন:ভাঙড়ে কথা চান মমতা

আবহবিদেরা জানান, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আগমনের জন্য বঙ্গোপসাগরে কোনও নিম্নচাপের অপেক্ষায় থাকতে হয়। শনিবার বঙ্গোপসাগরের উপরে তৈরি হওয়া ত্রাতা নিম্নচাপরেখাটি সোমবার এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, তা বর্ষাকে পশ্চিম ভারত থেকে টেনে এনে ঢুকিয়ে দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। ওই নিম্নচাপের টান এতটাই বেশি ছিল যে, দিঘা থেকে দার্জিলিং একসঙ্গে পেয়ে যায় মৌসুমি বায়ুর ছোঁয়া। দহনক্লান্ত বঙ্গবাসী এতে আশ্বস্ত হয়েছে ঠিকই। তবে বর্ষার এই আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা।

সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, মে মাসের শেষে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র টানে নির্দিষ্ট সময়ের দু’দিন আগেই বর্ষা ঢুকে পড়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতে। কিন্তু তার পরে সে একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি আরব সাগরের একটি নিম্নচাপ তাকে পশ্চিম ভারতে টেনে নিয়ে যায়। দুর্বল হয়ে পড়েছিল অসমের মৌসুমি বায়ুও। তাই উত্তরবঙ্গের দোরগোড়ায় গিয়েও সেখানে সে ঢুকতে পারেনি। শনিবার বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ দানা বাঁধতেই বর্ষা ফের পূর্বমুখী হয়। সেই নিম্নচাপটি জোর বাড়িয়ে পরিণত হয় অতিগভীর নিম্নচাপে। এ দিন ভোরে বাংলাদেশে ঢুকে সে উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে সরে আসে। তার টানেই বর্ষা সটান দিঘার সমুদ্রোপকূল থেকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। হাপিত্যেশ প্রতীক্ষার পরে বর্ষা ঢুকল বটে, কিন্তু তেমন বৃষ্টি কোথায়?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, উত্তরবঙ্গে আজ, মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির দাপট বাড়বে। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের কিছু জায়গায়। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাংশে বিক্ষিপ্ত ব়ৃষ্টি হতে পারে। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকাও ভারী বৃষ্টি পাবে।

দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, নিম্নচাপের এই ধাক্কায় পূর্ব ভারতের বাকি এলাকাগুলিতেও বর্ষা ছড়িয়ে পড়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু ছড়িয়ে পড়বে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE