Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লেটলতিফ বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে হাজির, তবে চাঙ্গা হতে দেরি

প্রকৃতি-পরিবেশে উথালপাথালের অন্ত নেই! কেউ বাঁধা গতে চলছে না। ফলে তারও চালচলন নিয়ম মানেনি। পৌঁছানোর নির্দিষ্ট সময়ের পরেও নয় নয় করে পেরিয়ে গিয়েছে ন’দিন। এ বার তার দেখা মিলল। মানুষকে বিস্তর জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, ঘামিয়ে, নাইয়ে অবশেষে বর্ষা পা রাখল দক্ষিণবঙ্গে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৯:২২
Share: Save:

প্রকৃতি-পরিবেশে উথালপাথালের অন্ত নেই! কেউ বাঁধা গতে চলছে না। ফলে তারও চালচলন নিয়ম মানেনি। পৌঁছানোর নির্দিষ্ট সময়ের পরেও নয় নয় করে পেরিয়ে গিয়েছে ন’দিন। এ বার তার দেখা মিলল। মানুষকে বিস্তর জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, ঘামিয়ে, নাইয়ে অবশেষে বর্ষা পা রাখল দক্ষিণবঙ্গে।

বায়ুপ্রবাহের নানা টানাপড়েনের জেরে এ বছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আরবসাগর হয়ে কেরলে ঢুকেছে আট দিন দেরিতে। বিলম্বিত লয়ের দোসর হয়ে মাথা চাড়া দেয় একের পর এক ঘূর্ণাবর্তের বাধা। সব মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আগমন নিয়ে সংশয় দানা বেঁধেছিল। তাতে দাঁড়ি টেনে শুক্রবার আলিপুর হাওয়া অফিস দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা প্রবেশের কথা ঘোষণা করেছে। যদিও তার সক্রিয়তা সম্পর্কে খুব একটা আশার বাণী এই মুহূর্তে শোনাতে পারেনি।

উত্তরবঙ্গ অবশ্য তিন দিন আগে বর্ষার ছোঁয়া পেয়ে গিয়েছে। মায়ানমার-উত্তর পূর্বাঞ্চল রুট ধরে মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকে পড়েছে। এবং সেখানেও ‘লেট’ করেছে অন্তত দু’সপ্তাহ। তবে উত্তরবঙ্গে বর্ষার ওই শাখাটি এখন অতি সক্রিয়। ভাল বৃষ্টি হচ্ছে। সে তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে উপস্থিত শাখাটি কিছুটা দুর্বল বলেই আবহবিদদের পর্যবেক্ষণ। যে কারণে আপাতত কলকাতা-সহ তামাম দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বিক্ষিপ্ত বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর।

এ দিকে কেরল থেকে বর্ষার ঊর্ধ্বগমন শুরু হতেই উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য ভারতে হাওয়া বদল মালুম হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাতে প্রখর তাপপ্রবাহ বিদায় নিয়েছে। নয়াদিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি এ দিন ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও বিহারের একাংশেও বর্ষা এসেছে। ‘‘মৌসুমি বায়ু আরবসাগরে দীর্ঘ দিন আটকে থেকে গত সপ্তাহে ছাড়া পেয়েছে। পেয়েই হুড়মুড়িয়ে উঠে আসছে উপরে।’’— মন্তব্য এক আবহবিদের। কিন্তু সে পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে পারছে না। কেন?

মৌসম ভবনের ব্যাখ্যা: বিহার-ওড়িশায় স্থলভূমিতে এখনও বেশ কিছু ঘূর্ণাবর্ত রয়ে গিয়েছে। তাদের দেওয়ালে ঠোক্কর খেয়ে বর্ষা ঠিক দানা বাঁধতে পারছে না। আবহবিদদের আশা, ঘূর্ণাবর্তগুলো দুর্বল হয়ে গেলেই দক্ষিণবঙ্গে জোরদার বৃষ্টি নামবে।

তবে বর্ষা দেরি করলেও কৃষকদের নিরাশ হওয়ার কারণ দেখছে না রাজ্য সরকার। কৃষি দফতরের দাবি: এখনও চাষবাসে বিশেষ ক্ষতি হয়নি। কারণ, মে’র তৃতীয় সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। তখন টানা এক সপ্তাহ তাপমাত্রাও তেমন বাড়তে পারেনি। গত শনিবার থার্মোমিটারের পারা আচমকা লাফিয়ে উঠে তাপপ্রবাহের মাত্রা ছুঁয়ে ফেললেও রবিবার থেকে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি নেমেছে। পরিণামে চাষের অবস্থা মোটামুটি অনুকূলই। শুকিয়ে খটখটে জলাধারগুলোও আস্তে আস্তে ভরতে শুরু করবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন সরকারি কর্তারা।

প্রসঙ্গত, এপ্রিল ও মে’র দু’টি পূর্বাভাসে মৌসম ভবন জানিয়েছে, চলতি মরসুমে সারা দেশে স্বাভাবিকের বেশি বৃষ্টি হবে। কিন্তু বর্ষার আগমনে বিলম্বের কারণে জুনের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের ২৮% কম। আবহবিদদের আশা, বর্ষা যতো এগোবে, যত সক্রিয় হবে, তত ঘাটতি পুষিয়ে যাবে।

কিন্তু ঘটনা হল, গত ক’বছর ইস্তক বর্ষার মতিগতি বোঝা দায়। কোথাও অতিবৃষ্টি ভাসিয়ে দিয়েছে, আবার তার লাগোয়া অঞ্চল ধুঁকেছে অনাবৃষ্টিতে। পরিণামে মরসুম শেষে হিসেব কষতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়ালেও সামঞ্জস্যের অভাবে কোথাও বন্যা, কোথাও শুখা!

প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনাতেই হাওয়া অফিস চিন্তিত। ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’’— বলছেন আবহবিজ্ঞানীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Monsoon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE