Advertisement
E-Paper

ঘাটতি মাথায় বর্ষা হাজির গাঙ্গেয় বঙ্গে

সূচনা পর্বেই কিছুটা দেরি হয়েছিল। বেশি দেরি হল পথে। দেরির উপরে দেরির ধাক্কায় ৩১ শতাংশ ঘাটতি মাথায় নিয়ে অবশেষে শুক্রবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এ বারের যাত্রা শুরু করল বর্ষা। মৌসুমি বায়রু আগামী কয়েক দিনে ওই ঘাটতির কতটা কতটা মেটাতে পারবে, সেটা নির্ভর করছে বঙ্গোপসাগরে সদ্যোজাত এক নিম্নচাপের উপরেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০৩:০২
বৃষ্টি ভেজা শহরে। শুক্রবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

বৃষ্টি ভেজা শহরে। শুক্রবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

সূচনা পর্বেই কিছুটা দেরি হয়েছিল। বেশি দেরি হল পথে। দেরির উপরে দেরির ধাক্কায় ৩১ শতাংশ ঘাটতি মাথায় নিয়ে অবশেষে শুক্রবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এ বারের যাত্রা শুরু করল বর্ষা।

মৌসুমি বায়রু আগামী কয়েক দিনে ওই ঘাটতির কতটা কতটা মেটাতে পারবে, সেটা নির্ভর করছে বঙ্গোপসাগরে সদ্যোজাত এক নিম্নচাপের উপরেই। উপগ্রহ-চিত্র দেখে আবহবিদদের অনুমান, আজ, শনিবারেই আরও জোরালো হয়ে উঠবে নিম্নচাপটি। তার প্রভাবে বৃষ্টিও মিলবে কমবেশি। কিন্তু ঘাটতির খাতা কতটা ভরবে, সেই বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় আবহাওয়া দফতর।

গত বছরের কথা আসছে স্বাভাবিক ভাবেই। আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, গত জুনে স্বাভাবিকের থেকে ২৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছিল। তার প্রভাব পড়েছিল চাষ-আবাদেও। এ বার জুনের বর্ষণ গত বারের থেকে ঘাটতি কমাতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নও ঘোরাফেরা করছে হাওয়া অফিসের অন্দরে।

ওই প্রশ্নের পিছনেও আছে সেই মৌসুমি বায়ুর পথে দেরি করার বৃত্তান্ত। নির্ঘণ্ট অনুযায়ী এ রাজ্যে বর্ষা ঢোকার কথা ৮ জুন। কিন্তু সেই সূচি মেনে এ বার সে হাজির হতে পারেনি। আবহবিদেরা বলছেন, বর্ষা কেরল দিয়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার পরে আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘আশোবা’ তাকে পশ্চিম ভারতে বেঁধে রেখেছিল। তার ফলে পূর্ব ভারতে আসতে দেরি হয়ে যায় বর্ষার।

১৩ জুন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল বর্ষা। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাংশে বৃষ্টিও হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল না-হওয়ায় দোরগোড়ায় এসেও টানা ছ’দিন থমকে দাঁড়িয়ে ছিল মৌসুমি বায়ু। বৃষ্টির অভাবে ফের ভ্যাপসা গরম বাড়তে শুরু করে। কখন একটা ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ ধাক্কা দেবে, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বর্ষা তারই অপেক্ষায় ছিল। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধা একটি নিম্নচাপই থমকে থাকা মৌসুমি বায়ুকে এ দিন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুকূল। রবিবারের মধ্যে গোটা দক্ষিণবঙ্গেই বর্ষা ছড়িয়ে পড়বে।’’

টানা গরমে বর্ষণের আশায় হাপিত্যেশ করে বসে থাকা বাঙালির মুখে শুক্রবার থেকে কিছুটা হাসি ফুটেছে। দুপুরে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামতেই দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন এক তরুণী নার্স। সহকর্মীদের ডেকে ডেকে বৃষ্টির খবর দিতে লাগলেন তিনি। আচমকা বৃষ্টি নামায় মধ্য কলকাতায় এক রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার কার্নিসের নীচে আশ্রয় নিলেন এক দল তরুণ-তরুণী।

কিন্তু বর্ষার দাক্ষিণ্য পর্যাপ্ত হবে, নাকি কৃপণতা থাকবে, হাওয়া অফিস সেই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। আবহবিদদের একাংশ বলছেন, বর্ষার বৃষ্টি কোনও বারেই একটানা চলে না। এক দফা বর্ষণের পরে দিন কতক রোদের দেখা মেলে। তাই প্রথম দফায় দক্ষিণবঙ্গে এই মেঘ-বৃষ্টির মেজাজ কত দিন থাকবে, সেই প্রশ্ন থাকছেই। তবে আলিপুরের আবহবিজ্ঞানীদের অনুমান, এই দফায় দিন তিনেক ভাল পরিমাণেই বৃষ্টি মিলবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁরা জানান, নিম্নচাপটি এ দিন ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি রয়েছে। সেটি আরও জোরালো হবে। তার জেরেই আগামী দু’তিন দিনের বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। জোরালো হয়ে নিম্নচাপটি যদি পশ্চিমবঙ্গের দিকে সরে এসে স্থলভূমিতে ঢোকে, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে দক্ষিণবঙ্গে।

নিম্নচাপের মতিগতি দেখে উপকূল এলাকায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহবিদেরা। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হতে পারে। তাই মৎস্যজীবীদের সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। উপকূলরক্ষী বাহিনীর কলকাতা আঞ্চলিক দফতর বলেছে, মৎস্যজীবীরা বিপদে পড়লে টোল ফ্রি (১৫৫৪) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। যাঁরা সাগরে গিয়েছেন, তাঁরা যেন বাহিনীর সঙ্গে বিশেষ ওয়্যারলেস লাইনে যোগাযোগ রাখেন।

South Bengal Monsoons North Bengal rain bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy