Advertisement
E-Paper

গোর্খাল্যান্ডের দাবি উঠতেই ফের শঙ্কায় পর্যটন মহল

গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমের গোড়াতেই ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড় কিছুটা তেতে ওঠায় আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে দেশ-বিদেশের পর্যটন মহলে। তাই ট্যুর অপারেটরদের তরফে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কাছে বার্তা পাঠিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে, কোনও আন্দোলন হলেও যেন পর্যটনকে ছাড় দেওয়া হয় সেটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে। না হলে চলতি পর্যটন মরসুমে দার্জিলিং, সিকিম ও ডুয়ার্স মিলিয়ে পর্যটনে যুক্ত অন্তত ৫ লক্ষ বাসিন্দা-ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়বেন।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৯
গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম শুরু হতে না হতেই ভিড় দার্জিলিঙে। বৃহস্পতিবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম শুরু হতে না হতেই ভিড় দার্জিলিঙে। বৃহস্পতিবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমের গোড়াতেই ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড় কিছুটা তেতে ওঠায় আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে দেশ-বিদেশের পর্যটন মহলে। তাই ট্যুর অপারেটরদের তরফে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কাছে বার্তা পাঠিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে, কোনও আন্দোলন হলেও যেন পর্যটনকে ছাড় দেওয়া হয় সেটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে। না হলে চলতি পর্যটন মরসুমে দার্জিলিং, সিকিম ও ডুয়ার্স মিলিয়ে পর্যটনে যুক্ত অন্তত ৫ লক্ষ বাসিন্দা-ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়বেন।

যে বার্তা পৌঁছনোর পরে সিপিআরএম, জিএনএলএফের মতো দলগুলি জানিয়ে দিয়েছে, তারা চলতি পর্যটন মরসুমে অন্তত পাহাড় অচল করার পথে হাঁটবে না। মোর্চার একাংশও অবরোধ-বনধের বিরোধী। কিন্তু, অন্য অংশ রাস্তা নামার পক্ষে। তাই খোদ বিমল গুরুঙ্গ ‘ফেসবুক’-এর মাধ্যমে ‘করজোড়ে’ দাবি আদায় করার কথা লিখেছেন। মোর্চা প্রধানের বার্তা, ‘‘পাহাড়ে শান্তি রেখেই সব হবে। দিল্লিতে গিয়ে করজোড়ে আলাদা রাজ্যের আর্জি পেশ করে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’’ মোর্চার অন্দরের খবর, দলের একাংশ ফের আগের মতো বনধ, অবরোধে যেতে আগ্রহী। তাই দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না দার্জিলিং, সিকিম ও ডুয়ার্সের পর্যটন মহলের।

যেমন, সিকিম সরকারের পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা রাজ বসু বলেন, ‘‘আন্দোলন হতেই পারে। তা হোক। তবে দার্জিলিং পাহাড়ে যে আগামী পর্যটন মরসুমে কোনও বনধ, অবরোধ হবে না সে কথা স্পষ্ট করে বারেবারে জানাতে হবে সব দলকে।’’ তিনি জানান, পাহাড় নিয়ে অতীতে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে পর্যটকদের। তাই দার্জিলিং পাহাড়ে আন্দোলনের কথা শুনেই দেশ-বিদেশের অনেকে রাজবাবুদের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন, আবার হুটহাট বন্‌ধ, অবরোধ
হবে না তো? সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে পাহাড়ের সব দলের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, আগামী দিনে আন্দোলন হলেও পর্যটকদের যাতায়াতে কোনও বিঘ্ন ঘটবে না বলে সব দলই যেন ঘোষণা করে।

ঘটনা হল, পাহাড়ে মোর্চার উত্থানের পরে কয়েক দফায় পাঁচ বছর পর্যটন-ব্যবসা হয়নি। জিটিএ গঠনের পরে তেলেঙ্গনা হওয়ার জেরে আন্দোলনে নেমে প্রায় দু’মাস পাহাড় অচল করে রাখে মোর্চা। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় দার্জিলিঙের সঙ্গে সিকিম, ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসা মার খায়। রাজ্য কঠোর মনোভাব দেখানোয় গত দু’বছর ধরে পাহাড-ডুয়ার্সে পযর্টকদের ভিড় উপচে পড়ছে। এবারও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ঢল নামবে, ঠাসা বুকিং হয়ে গিয়েছে। এপ্রিল থেকে ৮ জুন পর্যন্ত দার্জিলিং, সিকিম, ডুয়ার্সের হোটেল, হোম স্টে, সরকারি অতিথি নিবাসে জায়গা মেলা মুশকিল।

সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে গত সাত দিন ধরে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে পাহাড়ের প্রায় সব দল। ষষ্ঠ তফসিলের দাবি থেকে সরে ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলে আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেছে জিএনএলএফ। সিপিআরএম তো আরেক ধাপ এগিয়ে মোর্চাকে জিটিএ ছেড়ে পুরোপুরি গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ করেছে। মোর্চার অন্দরের খবর, দলের একাংশও জিটিএ ছেড়ে দিল্লির উপরে চাপ বাড়িয়ে কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার থাকাকালীন আলাদা রাজ্যের দাবি আদায় নিশ্চিত করার পক্ষপাতী। তাতেই আশঙ্কায় পর্যটকেরা। ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পাহাড়ে আর বনধ হবে না বলে মোর্চা আগেই ঘোষণা করেছে। আশা করি সেই সিদ্ধান্ত এবারও বহাল থাকবে। না হলে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে।’’

বস্তুত, মোর্চা না ডাকলেও জিএনএলএফ কিংবা সিপিআরএম যদি বন্‌ধ, অবরোধে নামে তা হলে কী হতে পারে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে মোর্চা। সে জন্য মোর্চা নেতারাও পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের রাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি দেশের নানা প্রান্তের ছোট রাজ্যের দাবিদার ও প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্মেলন করেছেন। সেখানে জিএনএলএফকে ডাকা হয়নি। তবে তলে তলে জিএনএলএফের নেতা-কর্মীদের দলে সামিলের চেষ্টা করছে মোর্চা। যাতে জিএনএলএফ আচমকা বন্‌ধ, অবরোধ ডেকে শিরোনামে চলে না যায়। যদিও জিএনএলএফের একাধিক নেতা জানান, তাঁরা আন্দোলন করলেও হুটহাট জনজীবন বিপর্যস্ত করার রাস্তায় হাঁটবেন না।

জিএনএলএফ যে আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটা জানে মোর্চাও। মোর্চার সহ-সভাপতি জ্যোতিকুমার রাই বলেন, ‘‘গোর্খাল্যান্ডের দাবি পাহাড়ের সকলের। শান্তি বজায় রেখেই আমরা সকলে মিলে এগোতে চাই। আগামী গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমে কোনও বিঘ্ন ঘটতে দেওয়া হবে না। এটা সব দলকে মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের দলের তরফে সভাপতি আবারও তা বলে দেবেন।’’

এখন গুরুঙ্গ ফের কবে পর্যটন মহলকে আশ্বস্ত করেন সেটাই দেখার বিষয়।

gjmm gorkhaland movement darjeeling sikkim tour operators panicked tour operators darjeeling tourism gorkhaland tourists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy