Advertisement
E-Paper

মানিকদার চোখে থেকে গিয়েছিল মুগ্ধতার রেশ

মোহহীন বাস্তব আর বর্ণময় রোম্যান্টিকতা— দু’টি বিপরীত ব্যাপারের প্রতি আকর্ষণ আমি ওই চরিত্রটার মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলাম। তাই আজও মৃণালদার এই ছবিটা আমার স্মৃতিতে ভীষণ ভাবে উজ্জ্বল।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৫
আলাপচারিতা: সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে মৃণাল সেন। ফাইল চিত্র

আলাপচারিতা: সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে মৃণাল সেন। ফাইল চিত্র

মৃণালদার সঙ্গে প্রথম জীবনে তিনটে ছবি করেছিলাম— ‘পুনশ্চ’, ‘প্রতিনিধি’, ‘আকাশকুসুম’। এগুলির কোনওটাতেই তিনি আমার মেক-আপ রাখেননি। এর মধ্যে আকাশকুসুম-এ অভিনয় করার সময় আমায় আলাদা এক ধরনের ভাবনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। যেহেতু চরিত্রটির মধ্যে স্বপ্ন আর বাস্তব, ইনট্রোভার্ট আর এক্সট্রোভার্ট মনোবৃত্তির দ্বন্দ্ব ছিল, সেটা আমাকে খুব আকর্ষণ করেছিল। ‘আকাশকুসুম’ বাস্তবিকই সত্যিকারের আধুনিক ছবি। একটা দৃশ্যে যখন চরিত্রটা একটা বহুতল বাড়ির ছাদে উঠে বন্ধুকে বলে, ‘শালা এই কলকাতাটাকেই কিনে ফেলব’, তখন তার মানসিকতাকে ব্যক্ত করতে শারীরিক অভিব্যক্তি কী ধরনের হবে তা নিয়ে বেশ মাথা ঘামাতে হয়েছিল। মোহহীন বাস্তব আর বর্ণময় রোম্যান্টিকতা— দু’টি বিপরীত ব্যাপারের প্রতি আকর্ষণ আমি ওই চরিত্রটার মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলাম। তাই আজও মৃণালদার এই ছবিটা আমার স্মৃতিতে ভীষণ ভাবে উজ্জ্বল।

অনেক পরে ওঁর সঙ্গে আবার কাজ করেছি, ‘মহাপৃথিবী’তে। সব থেকে বড় জোরের জায়গাটা ছিল ওঁর চিত্রনাট্য। এত ভাল চিত্রনাট্য পাওয়া কঠিন। প্রথমে স্ক্রিপ্ট একটা থাকত, তবে সেট-এ গিয়ে সেটা নিয়ে আবার ইমপ্রোভাইজও করতেন রীতিমতো, ওটাই ছিল ওঁর কাজ করার পদ্ধতি। কিন্তু যেটা লিখতেন সেটা অসাধারণ। বিশেষ করে সংলাপ— চরিত্রগুলিকে যেন এক ঝটকায় জীবন্ত করে তুলতেন। একমাত্র সত্যজিৎ রায় ছাড়া আর কাউকেই আমি এত ভাল সংলাপ লিখতে দেখিনি।

মৃণালদাই পারতেন ‘ওকা উরি কথা’র মতো আশ্চর্য ছবি করতে। মনে আছে, সত্তর দশকের শেষাশেষি একদিন মানিকদার বাড়ি গিয়েছি, দেখি তিনি বেশ উত্তেজিত। বললেন, ‘‘জানো, মৃণালের ‘ওকা উরি কথা’ দেখলাম। খুব ভাল লাগল। একেবারে হিংসে করার মতো একটা ছবি বানিয়েছে।’’ মানিকদার চোখে তখনও মুগ্ধতার ছাপ স্পষ্ট। সত্যজিৎ রায় যাঁর ছবিকে এমন উচ্চাসনে রাখেন, তাঁর সম্পর্কে এর অধিক কিছু বলার প্রয়োজনই বোধহয় নেই।

বিদায়: অন্তিম শয্যায় পরিচালক। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

‘মাটির মনিষ’ও আমার খুব ভাল লেগেছিল। তেমনই ভাল লেগেছিল ‘আকালের সন্ধানে’, ‘একদিন প্রতিদিন’ বা ‘বাইশে শ্রাবণ’। আলাদা ভাবে নামোচ্চারণ করে আর তালিকা দীর্ঘ করতে চাই না।

আরও পড়ুন: প্রথম আয় মৃণালদার জন্যই, স্মৃতিসুধা ভাগ করে নিলেন মমতা শঙ্কর

মৃণাল সেন ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি। বরাবরই ওঁর একটা বক্তব্য ছিল জীবন সম্পর্কে, সেটাই নানা ভাবে নানা সময়ে দেখা দিয়েছে ওঁর ছবিতে। এই যে জীবনবোধ, বিশ্বদৃষ্টি, সেগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হয়। অতএব তাঁর এই চলে যাওয়াটা কেবল বাংলা নয়, ভারতীয় সিনেমার মহীরূহ পতন।

আরও পড়ুন: ‘পকেটভর্তি দশ-বারোটা দেশলাই!’

এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু আর বলতে ইচ্ছে করছে না। কত ব্যক্তিগত স্মৃতি ভিড় করে আসছে... ‘অপুর সংসার’ দেখে ওঁর খুব ভাল লেগেছিল, অপুর ভূমিকায় আমাকেও ভাল লেগেছিল বলেই কিন্তু ‘পুনশ্চ’তে নিয়েছিলেন আমাকে, সেই শুরু ওঁর সঙ্গে... ।

Death Mrinal Sen Film Director Soumitra Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy