Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নয়া ইনিংসে ধীর মুকুল, জল্পনা তুঙ্গে

মাসের পর মাস যাচ্ছে। মুকুল রায়ের নতুন দল বা মঞ্চ আর ভূমিষ্ঠ হচ্ছে না! এখনও তৃণমূলে থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্বের জেরে মুকুল দলে সব পদ হারিয়েছেন।

সঞ্জয় সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৭
Share: Save:

মাসের পর মাস যাচ্ছে। মুকুল রায়ের নতুন দল বা মঞ্চ আর ভূমিষ্ঠ হচ্ছে না!

এখনও তৃণমূলে থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্বের জেরে মুকুল দলে সব পদ হারিয়েছেন। সে-ও বেশ কয়েক মাস আগের কথা। দলের কোনও অনুষ্ঠান বা কর্মসূচি থেকে শুরু করে সংসদের অধিবেশনেও তৃণমূলে তিনি ব্রাত্য। জোর জল্পনা ছিল, নতুন দল বা মঞ্চ গড়ে তিনি তৃণমূলকে ধাক্কা দেবেন। অথচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস দূরে দাঁড়িয়ে মুকুল-চর্চা এখন নিস্তরঙ্গ!

সারদা-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল তৃণমূলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। সিবিআই তাঁকে জেরা করেছিল। সেই সময় থেকেই দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা আগে সারদা-কাণ্ডের যে তৃতীয় চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই, তাতে মুকুলের নাম নেই। এই নিয়ে তিনটি অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ হল মুকুলের নাম ছাড়াই। ফলে, শনিবার দেশের ৬৯তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে মুকুল ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। নিজাম প্যালেসের চত্বরে ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন রাজ্যসভার এই সাংসদ। কিন্তু তাঁর নতুন দল বা মঞ্চ তৈরি কত দূর? হাসতে হাসতে মুকুলের মন্তব্য, ‘‘আমি তো কোনও দিন বলিনি নতুন দল করছি! তা হলে এই প্রশ্ন উঠছে কেন?’’ তাঁর অনুগামীরাই অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, গত জুলাই মাসেই মুকুলের নতুন দল আত্মপ্রকাশ করবে। সে জন্যই মুকুলকে ঘিরে প্রশ্নটা উঠছে। এবং মুকুল তা উড়িয়ে দিচ্ছেন!

ঘটনাপ্রবাহের ধীর গতি দেখেই এখন মুকুল অনুগামীদের একান্ত আলোচনায় উঠে আসছে, নতুন দল গড়ার ব্যাপারে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছেন তাঁরা। কারণ, তাঁদের কাছে খবর আসছে, মুকুলের বদলে তৃণমূল নেত্রী দলের নেতৃত্ব যাঁদের হাতে দিয়েছেন, তাঁদের উপরে তিনি বিশেষ আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই আবার মুকুলকে পুরনো অবস্থানেই ফিরিয়ে নেওয়ার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে বলে হাল্কা ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা। মুকুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘শুনেছি দলনেত্রী কয়েক জনকে বলেছেন, ‘মুকুল তো আমার বাড়িতে আসতেই পারে! আমার দরজা তো খোলাই আছে।’ অবশ্য এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে সরাসরি কালীঘাট থেকে কোনও বার্তা আসেনি।’’ মুকুলের বিষয়ে তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেবেন, সেটাও অবশ্য বড় প্রশ্ন।

এই অবস্থায় স্বয়ং মুকুল বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করছেন না।

তবে মুকুল অনুগামীদের অনেকেরই ধারণা, ঘড়ির কাঁটা আবার উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। কারণ, মুকুল-পুত্র, বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু এখনও স্বমহিমায় তৃণমূলেই রয়েছেন। মুকুল ইদানীং প্রকাশ্যে দলনেত্রী বা তৃণমূল নেতৃত্বকে কোনও কটাক্ষ করেননি। আবার মুকুল-ঘনিষ্ঠ দুই বিধায়ক ব্যারাকপুরের শীলভদ্র দত্ত এবং হলদিয়ার শিউলি সাহাকে দল সাসপেন্ড ঘোষণা করলেও তাঁদের সাসপেন্ড করার চিঠি দেওয়া হয়নি। তবে তৃণমূলের পরিষদীয় নেতৃত্বের দাবি মেনে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দুই বিধায়কের আসন বদল করে দিয়েছেন। নিজাম প্যালেসে মুকুলের দেওয়া ইফতার পার্টিতে শীলভদ্র এবং শিউলি সক্রিয় ভাবে অংশ নেওয়াতেই তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে শিউলিকে নিয়ে। শিউলি ইতিমধ্যেই তাঁর শাস্তি মুকুবের জন্য দলীয় নেতৃত্বের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এমনকী, কয়েক দিন আগে বিধানসভার কমিটি বৈঠকে যোগ দিয়ে শিউলি দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখাও করেছেন। এই ব্যাপারে শিউলি বা পার্থবাবু কোনও মন্তব্য না করলেও মুকুল-অনুগামীদের অনেকেরই ধারণা, বরফ গলতে শুরু করেছে। মুকুল অবশ্য যথারীতি বিষয়টিকে লঘু করতে চেয়ে বলছেন, ‘‘আরে শিউলি তো দলেরই মেয়ে! সে যদি দলীয় নেতৃত্বকে চিঠি দেয় বা দলের কোনও নেতার সঙ্গে দেখা করে, তাতে অন্যায়ের কী আছে!’’

দল বা মঞ্চ গড়ার প্রশ্ন হলে মুকুল সব ধামাচাপা দিতে চাইছেন। স্বাধীনতা দিবসে খোশ মেজাজে পতাকা উত্তোলন করছেন। তার পরে তাঁর স্বল্প বক্তৃতায় ভারতের গণতন্ত্রের জয়গান গাইছেন! নিজাম প্যালেসে পতাকা তুলে মুকুল এ দিন বলেছেন, ‘‘ভারতের স্বাধীনতার আগে সোভিয়েত রাশিয়া স্বাধীন হয়েছিল। সেখানকার শাসকেরা তখন বলেছিলেন, দেশ চালাবে কমিউনিস্ট পার্টি। তার পরে চিন স্বাধীন হয়। তারাও বলেছিল, দেশ চালাবে সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু ৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন দেশনেতারা বলেছিলেন, কংগ্রেস নয়, দেশ চালাবে ভারতের জনগণ। তাই ভারতের গণতন্ত্রের ভিত শক্ত। মাঝে মাঝে সেই গণতন্ত্র আড়ালে চলে গেলেও আবার স্বমহিমায় ফিরে আসে।’’

সবই তো হল। কিন্তু তাঁর এক অনুগামীই যে মাসখানেক আগে বলেছিলেন, মুকুলের নেতৃত্বে নতুন দল গড়ার জন্য গঠনতন্ত্র লেখার কাজও শেষ! সে সবে আর গতি নেই! যদিও দলের কোনও অনুষ্ঠানে এখনও তাঁকে বা তাঁর অনুগামীদের দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের আমন্ত্রণই জানানো হচ্ছে না। তা হলে এখন তিনি করছেন কী? হাসতে হাসতেই মুকুল শুধু বলছেন, ‘‘আমি আমার মতো আছি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE