Advertisement
E-Paper

জল সরতে বাসে নিথর মা-ছেলে

পাড়া-পড়শি কয়েক জনের সঙ্গে সকাল ১০টাতেই সরকার পরিবারের কয়েক জন পৌঁছন দৌলতাবাদে। তখনও ঘোলা জলের ১৫ ফুট গভীরে পলিতে গেঁথে যাত্রিবোঝাই বাসটি।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৫৬
হাহাকার: মিত্রপুর গ্রামে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

হাহাকার: মিত্রপুর গ্রামে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

ফোনটা এসেছিল সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ। সেতু ভেঙে ভাণ্ডারদহ বিলে পড়েছে করিমপুর থেকে মালদহগামী বাস— ওপারের লোকের কথা শুনে আঁতকে ওঠেন করিমপুরের হরেকৃষ্ণপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি নারায়ণ সরকার। ভোরে ওই বাসেই তো বোন আর ভাগ্নেকে উঠিয়ে এসেছেন তিনি!

পাড়া-পড়শি কয়েক জনের সঙ্গে সকাল ১০টাতেই সরকার পরিবারের কয়েক জন পৌঁছন দৌলতাবাদে। তখনও ঘোলা জলের ১৫ ফুট গভীরে পলিতে গেঁথে যাত্রিবোঝাই বাসটি। অজানা আশঙ্কা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন সরকার পরিবার। ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা। ততক্ষণে অভিশপ্ত বাসের ৭০% ক্রেনের টানে ভেসেছে জলের উপরে। তখনই বোন-ভাগ্নেকে দেখতে পেলেন নারায়ণবাবুর ভাই রতন সরকার। বাসের সিটের নীচে পড়েছিল মিনতি সরকার মিত্রের (৫৪) দেহ। জলের নীচে দমবন্ধ হয়ে আসার সময় বাঁচার তাগিদে বাসের ভাঙা যন্ত্রাংশ আঁকড়ে ধরেছিলেন তাঁর ছেলে শুভব্রত (২৮)। বাস নদী থেকে তুলে নিয়ে আসার পরও সে ভাবেই পড়েছিলেন তিনি।

মা-ছেলে বীরভূমের মুরারই থানার মিত্রপুরের বাসিন্দা। স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁরই স্কুলে করণিকের কাজে বহাল হন মিনতিদেবী। ছেলে শুভব্রতও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। কিছু দিনের জন্য করিমপুরে জয়রামপুর গ্রামে বাপের বাড়ি এসেছিলেন মিনতিদেবী ও শুভব্রত। সোমবার রাতে তাঁরা ফিরলেন বটে, কিন্তু সাদা কাপড়ে ঢেকে।

দুর্ঘটনার ছবি টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন মিত্রপুরবাসী। গ্রামের দু’জন ওই বাসের যাত্রী ছিলেন— সে কথা জেনে উৎকণ্ঠা ছিল তুঙ্গে। মঙ্গলবার ভোরেই কর্মকারপাড়ায় মিত্রবাড়িতে জমে ভিড়। উঠোনে পাশাপাশি রাখা মা-ছেলের দেহ। দিনসাতেক আগেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই গ্রামের দুই যুবকের। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের অঘটন। সম্পর্কে শুভব্রতের কাকা অমল মিত্র, বরুণ মিত্র জানান, শুভব্রত ১১ মাস আগে গ্রামের নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পান। যাতায়াতের সুবিধার জন্য ছেলেকে নিয়ে মুরারই সদরে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন মিনতিদেবী। ছোটবেলা থেকেই মিশুকে ছিলেন শুভব্রত।

বোন-ভাগ্নের দেহের পাশে ছিলেন নারায়ণবাবু ও রতনবাবু। নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ ওদের ফোন করেছিলাম। বাস তখন জলঙ্গিতে পৌঁছেছে। বুঝিনি সেটাই ওঁদের সঙ্গে শেষ কথা হবে।’’

Murshidabad bus accident Murshidabad মুর্শিদাবাদ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy