এই রেলিং ভেঙে বিলে পড়ল বাস।
নীল-সাদা ডুরে বাসটার হরেক নাম, ভোরের আড়মোড়া ভাঙা ডোমকল তাকে চেনে ‘উল্কা’। নিত্য বহরমপুর থেকে ট্রেন ধরতে যান যে ব্যবসায়ীরা তাঁরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, ‘ও আমাদের রকেটের কথা বলছেন!’ আর হপ্তান্তে মালদহের স্কুলে পড়াতে যাওয়া মাস্টারমশাই ভারী মিষ্টি একটা নাম রেখেছিলেন তার, ‘ও আমাদের পরী, এক্কেবারে উড়ে চলে!’
সেই উড়তে উড়তেই সোমবার ভোরে সে মুখ থুবড়ে পড়ল শীতের বিলে। বিকেলে সে যখন ডালডার দুমড়ে যাওয়া টিনের মতো জল থেকে উঠে এল, তার সেই চেহারার সঙ্গে পুরনো আদরের নামগুলোর কোনও মিলই নেই।
কিন্তু, কুয়াশা-কাটা, সকালে কী এমন হল যে উড়ে গিয়ে সটান ভান্ডারদহে মুখ গুঁজল সে? বাসের গুটি কয়েক প্রাণ পাওয়া যাত্রী বা বালিরঘাট সেতুর মুখে টোল প্লাজার কর্মী বলছেন, ‘‘উল্কার মতো ছুটে যেতে দেখেছি বটে, তার পরেই দেখলাম জলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে বাসটা!’’ আর, সাধন মণ্ডল? হোগলবেরিয়ার সুন্দলপুরের মাঝবয়সী মানুষটা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বলছিলেন, ‘‘সুগারে ভুগছি। তাই বহরমপুরে চিকিৎসক দেখাতে যাচ্ছিলাম। কুচুইডাঙা মোড় থেকে ৫.৫০ মিনিটে বাসে উঠে চালকের পিছনে বসে ছিলাম। বালিঘাট সেতুতেই উঠতেই চালক কানে ফোন গুঁজে কথা বলতে শুরু করলেন।’’ উল্টো দিক থেকে ছুটে আসছিল একটা গাড়ি। তা বাস না ছোট গাড়ি, তা মনে করতে পারছেন না সাধন। তবে, সেটাকে পাশ কাটাতে গিয়েই তিনটে রেলিং ভেঙে বাস সটান গিয়ে পড়েছিল জলে। এক টুকরো সূর্যের আলোর আভাস খুঁজে সাঁতরে উঠে এসে সাধন দেখেছিলেন, বিলে নৌকা ভাসিয়ে মাছ ধরছেন জনা কয়েক। উদ্ধারে তাঁরাই এসেছিলেন প্রথমে। আশপাশের গ্রাম থেকে ছুটে আসতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা।
উল্কার নিয়ন্ত্রণ হারানোর আরও একটা কারণ জানাচ্ছেন, বাসেরই জনা কয়েক যাত্রী। তাঁদের কথায়, ‘‘সামনে একটা গাড়ি ছিল, সেটাকে কাটাতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল চালক। আর তাই সটান সেতুর দেওয়াল ভেঙে নেমে গিয়েছিল বিলে।’’ বাসটি যে দিক থেকে সেতুতে উঠেছিল, সে দিকে সেতুর মুখেই চায়ের দোকান মনিরুল হকের। রোজ সকাল ৬টায় দোকান খোলেন তিনি। তাঁর সামনে দিয়েই বাসটি সেতুতে গিয়ে ওঠে। তাঁর দাবি, বাসটির সামনে আর একটি গাড়ি ছিল, সেটি বাস না লরি তা তিনি বলতে পারেননি। তবে দ্রুতগতিতে সেটিকে পাশ কাটাতে গিয়েই বাসটি ডান দিকের রেলিং ভেঙে পড়ে যায়।
ততক্ষণে পিল পিল করে গ্রামবাসীদের ভিড় জমতে শুরু করে বিলের পাড়ে। ভাঙতে শুরু করেছে ধৈর্যের বাঁধও। পুলিশ এসেছিল বটে, কিন্তু, মুষ্টিমেয় জনা কযেক কনস্টেবলের পক্ষে জনতার রোষ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। লাঠি নিয়ে তারা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। উড়ে আসতে থাকল পাল্টা ইট। তপ্ত হয়ে উঠল পরিস্থিতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy