শ্মশানে জ্বলছে একের পর এক চিতা। গোরস্থানে সারি দিয়ে রাখা জানাজা।
মঙ্গলবার দিনভর জলঙ্গি, ডোমকল ও করিমপুর জুড়ে কেবলই হাহাকার আর স্বজনহারার কান্না। আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও এ দিন পথে নেমেছেন শিক্ষক, পড়ুয়া, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের অসংখ্য লোক। পাড়ার তরুণ বিসিএস অফিসার, শিক্ষক, শিক্ষিকা, ব্যবসায়ী, রাজমিস্ত্রি, পড়ুয়াকে শেষ বারের মতো দেখতে মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। ভিড় ছিল শ্মশান ও গোরস্থানেও।
পদ্মায় দাহ করা হল প্রভাতী হালদার ও কৃষ্ণ দাসের দেহ। স্কুলে যাওয়ার সময় মাকে কৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘‘পৌঁছে ফোন করব।’’ বছর দু’য়েকের ঘুমন্ত মেয়েকে চুমু খেয়ে বলেছিলেন, ‘‘একটু পরেই ফিরে আসব মা।’’ তিনি ফিরলেন। তবে কাচ দিয়ে ঘেরা শববাহী গাড়িতে। পদ্মাপাড়ের চিতা যখন দাউদাউ করে জ্বলছে, পাশের গোপালপুরের লোকজন অপেক্ষা করছেন ধুলিয়ানের জয়কৃষ্ণপুর এবিএ বিদ্যাপীঠের মৃদুভাষী শিক্ষিকা সুফিয়া মমতাজকে গোর দেওয়ার জন্য। তিনিও আট বছরের মেয়ে ও বছর দুয়েকের ছেলেকে ‘আসছি’ বলেই স্কুলে রওনা দিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরল তাঁর নিথর দেহ। বছর দুয়েকের শিশু কেবলই কাঁদছে আর খুঁজছে মাকে।
ডোমকলে আলিনগরের বিসিএস অফিসার সাফিন বিন রহমানের দেহ ঘিরে ভেঙে পড়েছিল গোটা গ্রাম। সবার মুখে একটাই কথা, ‘‘জানেন, ছেলেটা বিডিও হতে চেয়েছিল। সে ফিরল ‘বডি’ হয়ে!’’ আলিনগর থেকে কিছুটা দূরে জলঙ্গির নওদাপাড়া। গোটা গ্রামে এ দিন হাঁড়ি চড়েনি। গ্রামের রিপন শেখ, ফড়ু শেখ ও আনজুরা বিবি মারা গিয়েছেন। কবরস্থানে একসঙ্গে জানাজা হয়েছে তিন জনের। রিপনের বাবা হাসিবুল ইসলামের কথায়, ‘‘রাজমিস্ত্রির ঠিকাদার ছেলের হাতে ছিল সংসারের হাল। সব শেষ।’’ হরিশঙ্করপুর স্কুলের শিক্ষক গোলাম মোস্তফার দেহ মেলেনি সোমবার সন্ধ্যায়। মঙ্গলবার তাঁর দেহ মিলেছে। সুজয় মজুমদারেরও গ্রামের লোকজন বিশ্বাস করতে চান না, ছেলেটা নেই।
সোমবার রাতভর জেগে ছিল করিমপুর। সোমবার রাতে করিমপুরের ১২ জনের দেহ ময়নাতদন্তের পরে তুলে দেওয়া হয় বাড়ির লোকজনের হাতে। ওই রাতেই ছ’জনের দেহ দাহ করা হয় পাট্টাবুকা শ্মশানে। বাকিদের স্থানীয় এলাকার শ্মশানগুলোতে দাহ করা হয়। বেড়রামচন্দ্রপুরের আসমত শেখকে গোর দেওয়া হয় বাড়ির কাছে। মঙ্গলবার দাঁড়েরমাঠের বিকাশচন্দ্র বিশ্বাস, আনন্দপল্লির বিভূতিভূষণ কর্মকার ও নাটনার প্রদ্যোত চৌধুরীর দেহ উদ্ধার হয়। সুন্দলপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকেরা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র দেব প্রামাণিকের ছবি নিয়ে শোকমিছিল করেন। ৫ জনের মৃত্যুতে বন্ধ ছিল সুন্দলপুর বাজারও। তেহট্ট মহকুমাশাসক সুধীর কোন্তম, করিমপুর ১ বিডিও সুরজিৎ ঘোষ ও প্রশাসনের কর্তারা মৃতদের বাড়িতে যান। সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy