বাস চালকের দেহ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। মিলল কন্ডাক্টরের দেহও। তাঁকে নিয়ে আরও ছ’জনের দেহ জল থেকে তোলা হল মঙ্গলবার।
মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে বালির ঘাট সেতু থেকে ভাণ্ডারদহ বিলে বাস পড়ে যাওয়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা এই নিয়ে ৪২ ছুঁল। আরও দেহ ভেসে গিয়ে কোথাও আটকে আছে কি না, তা জানতে তল্লাশি জারি রয়েছে। এখনও পর্যন্ত যাঁদের দেহ মিলেছে, তাঁদের এক জন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের এবং দু’জন বীরভূমের। বাকিরা নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের। তবে ঋষিকেশ শর্মা নামে জলঙ্গির বছর বাইশের এক যুবকের খোঁজ রাত পর্যন্ত মেলেনি।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে তৎপরতায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে, সোমবার রাত পর্যন্ত টানা ৩৬টি দেহের ময়নাতদন্ত করে পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, সকালে বহরমপুর সার্কিট হাউস ছাড়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রশংসা করেছেন। তাঁর নির্দেশে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও ডোমদের শাল দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কিন্তু যাঁরা এগিয়ে না গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ত, তাঁদের স্বীকৃতি দেয়নি কেউ। সোমবার সেতুর রেলিং ভেঙে বাসটি যখন জলে গিয়ে পড়ে, আশপাশেই ছিল কয়েকটি মাছ ধরা নৌকা। মৎস্যজীবী রবি হাজরা, সুকুমার হালদার, সাইদুল শেখ, হরেন হালদার, সূর্য পাহাড়িয়া, নেপাল হালদারেরা তৎক্ষণাৎ নৌকা নিয়ে এগিয়ে না গেলে যে ১৩ জন বেঁচেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই জল থেকে উঠতে পারতেন কি না সন্দেহ।
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ ইতিমধ্যে বাসের চালক সেন্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বেপরোয়া বাস চালানো, অন্যদের জখম করা ও অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করেছে। সেন্টু মারা গিয়েছেন। কিন্তু বহরমপুর পুরসভার থেকে যাঁরা চুক্তিতে ওই বাসটি নিয়েছিলেন এবং কোনও রকম বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সেন্টুদের চালাতে দেন, তাঁদের
বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের বক্তব্য, ‘‘এই দুর্ঘটনার জন্য বাসের চালক দায়ী। তাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।’’ যাঁরা বাস নিয়েছিলেন, তাঁদের কোনও দায় ছিল কি না, তা তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন।
এ দিন কলকাতা রওনা হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী সেতুর অবস্থা খতিয়ে দেখে সেটি সারাই করার নির্দেশ দিয়ে যান জেলাশাসককে। সেতুতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কথাও বলেছেন।