চন্দননগরের বসু পরিবারের রুশ পুত্রবধূ ভিক্টোরিয়া জ়িগালিনা বা তাঁর পাঁচ বছরের ছেলের কোনও খোঁজ মিলছে না বলে জানাল দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) অঙ্কিত চৌহান আজ সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, ভিক্টোরিয়ার নামে ‘লুক আউট সার্কুলার’ জারি করা হয়েছে। আইনি পথে, তাঁর নিজস্ব পাসপোর্ট কাজে লাগিয়ে তিনি এখনও দেশ ছেড়ে যাননি। দিল্লিতে তাঁর ডিফেন্স কলোনিতে ভাড়া বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, গত ৭ জুলাই দুপুর দু’টো দশ নাগাদ তিনি ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। তারপর থেকে তাঁর মোবাইল বন্ধ। ছেলেও স্কুলে যায়নি।
আজ সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি পুলিশ ও বিদেশ মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছে, রাশিয়ার দূতাবাসের কোনও অফিসারের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের মত, কোনও বিদেশি দূতাবাস সরকারি ভাবে ভিক্টোরিয়াকে সাহায্য করবে না। কিন্তু দূতাবাসের কোনও আধিকারিক ভিক্টোরিয়াকে অন্য পাসপোর্টে দেশের বাইরে যেতে সাহায্য করতে পারেন। সৈকতদের আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক বলেন, বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসারের রুশ স্ত্রী-র সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার যোগাযোগ ছিল। সেই তথ্য তাঁরা দিল্লি পুলিশকে দেবেন।
কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি আজ শীর্ষ কোর্টে জানিয়েছেন, রাশিয়ার দূতাবাসে খোঁজ নেওয়া হয়েছিল। ভারতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বিদেশ মন্ত্রককে জানিয়েছেন, ভিক্টোরিয়ার মা ওলগা জ়িগানিয়া গত ১০ জুলাই তাঁদের রাশিয়া থেকে ফোন করে জানিয়েছেন যে মেয়ের খোঁজ পাচ্ছেন না। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা মস্কোতে ওলগার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হননি। চন্দননগরের বাসিন্দা সৈকত বসুর সঙ্গে রাশিয়ার মেয়ে ভিক্টোরিয়া জ়িগালিনার বিয়ের পরে সৈকতের পরিবার জানতে পারে, ভিক্টোরিয়ার বাবা রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা এফএসবি-র অবসরপ্রাপ্ত গুপ্তচর। ভিক্টোরিয়া বিয়ের পরে কলকাতায় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়ায় পরিবারের সন্দেহ হয়, ভিক্টোরিয়া নিজেও রুশ গুপ্তচর। সৈকত-ভিক্টোরিয়ার পাঁচ বছরের ছেলে কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে বিবাদে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাবা, মার কাছে ছেলে ভাগাভাগি করে থাকত। কিন্তু ৭ জুলাই ভিক্টোরিয়া ছেলেকে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পরে সৈকতেরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
আজ দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লির সমস্ত থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। ভিক্টোরিয়া দিল্লির ডিফেন্স কলোনিতে থাকতেন। সেখানে তাঁর খোঁজে পোস্টার পড়েছে। সৈকতদের ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, ছেলেকে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার আগের দিন ভিক্টোরিয়া তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ২২০ টাকা খরচ করেছিলেন। তার পরে তাঁর অ্যাকাউন্টে শ’দেড়েক টাকা রয়েছে।
বিচারপতিরা চিন্তা প্রকাশ করেছেন, এত কম টাকায় ভিক্টোরিয়া ছেলের দেখাশোনা করছেন কী ভাবে? শীর্ষ কোর্ট দিল্লির আশেপাশে নয়ডা, গুরুগ্রাম এলাকা ও রেল, বাস টার্মিনাসে খোঁজ করার নির্দেশ দিয়েছে। সোমবার পুলিশকে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)