Advertisement
E-Paper

ছেলে সেজে প্রতারণা বাবাকে, পরিচয় ঢাকতে ছেলেকে খুন

পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর স্কুলছাত্র আর্শেদকে খুন করার অভিযোগে এক যুবককে ধরার পরে, এমনই দাবি করেছে পুলিশ।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২০
অভিযুক্ত জামাল শেখ। —ফাইল চিত্র

অভিযুক্ত জামাল শেখ। —ফাইল চিত্র

ছেলে জানত না কে তার বাবা। বাবাও চিনতেন না ছেলেকে। চিনতে চাওয়াই কার্যত কাল হল ছেলে আর্শেদ শেখের (১৪) পক্ষে। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর স্কুলছাত্র আর্শেদকে খুন করার অভিযোগে এক যুবককে ধরার পরে, এমনই দাবি করেছে পুলিশ।

অগ্রদ্বীপের বাসিন্দা মোর্শেদ শেখের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করে বাবুইডাঙায় বাপেরবাড়িতে চলে এসেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা কাটু বিবি। সেখানেই তিনি আর্শেদের জন্ম দেন। ছেলের যখন বছর আটেক বয়স, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় কাটুর।

দাদু-দিদিমার কাছেই মানুষ হচ্ছিল আর্শেদ। ছেলে হয়েছে জানলেও, শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে মোর্শেদের যোগাযোগ ছিল না। তিনি কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে চলে যান। দ্বিতীয় বিয়েও করেন। দ্বিতীয় পক্ষের একটি মেয়ে রয়েছে তাঁর।

৩ ডিসেম্বর স্কুল থেকে ফিরে পাশের গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে যায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আর্শেদ। রাতে বাড়ি ফেরেনি। পরদিন গ্রামের সর্ষেখেতে তার দেহ মেলে। কে বা কারা কেন তাকে খুন করল, ধন্দে পড়েন আত্মীয়েরা ও গ্রামবাসী। পুলিশ অন্য কোনও সূত্র না পেয়ে আর্শেদের আত্মীয়-পরিজনের ফোনের কল-রেকর্ড পরীক্ষা করে। দেখা যায়, ঘটনার মাস দেড়েক আগে থেকে বাবুইডাঙার বছর আটত্রিশের জামাল শেখের সঙ্গে মোর্শেদের ফোনে কয়েক বার কথা হয়েছে।

পুলিশকে মোর্শেদ জানান, হঠাৎ এক দিন তাঁকে ফোন করে অপরিচিত কণ্ঠ ‘ছেলে’ বলে পরিচয় দিয়ে পড়াশোনার জন্য টাকা চেয়েছিল এক জন। তিনি অবিশ্বাস করেননি। বরং খুশি হন। তাই ‘ছেলের’ দাবি অনুযায়ী দু’দফায় টাকা পাঠান। কিন্তু চাহিদা বাড়ছিল। তাতেই সন্দেহ হয় তাঁর। জলদি গ্রামে ফিরে ‘ছেলের’ সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান তিনি।

পুলিশের দাবি, জেরায় জামাল তাদের জানিয়েছে, কেরলে কাজে যাওয়া এক পরিচিতের মাধ্যমে মোর্শেদের ফোন নম্বর তার হাতে এসেছিল। বাবা-ছেলের পরিচয় না থাকার কথাও তার জানা ছিল। সেই সুযোগ নিয়ে টাকা হাতানোর ছক কষে সে। কমবয়সী ছেলের গলা নকল করে মোর্শেদকে ফোন করে। অর্থাভাবে পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে শুনে ‘ছেলের’ কথামতো একটি অ্যাকাউন্টে দু’দফায় ১৩ হাজার টাকা পাঠান মোর্শেদ। এর পরে একটি মোটরবাইকের ‘আব্দার’ করে বসে জামাল। কিন্তু মোর্শেদ তখন গ্রামে আসার কথা বলায়, প্রমাদ গনে সে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেরায় জানা গিয়েছে, গ্রামে এসে আসল ছেলের সঙ্গে কথা বলে মোর্শেদ প্রতারণা ধরে ফেলবেন, এই ভয়ে আর্শেদকে খুনের ছক কষে জামাল। রাতে রাস্তায় একা পেয়ে প্রথমে মাথায় ইটের আঘাত, তার পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় আর্শেদকে। ছেলে মারা গিয়েছে জানলে মোর্শেদ আর তার খোঁজ করবেন না, এমনই ধারণা ছিল জামালের।’’ সোমবার বাবুইডাঙা গ্রাম থেকেই ধরা হয় পেশায় খেতমজুর জামালকে।

মঙ্গলবার কালনা আদালত চত্বরে জামাল অবশ্য দাবি করে, ‘‘আমি খুন করিনি।’’ বিচারক তাকে আট দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতারণার প্রমাণ লোপাটে স্কুলছাত্রকে খুন করা হয়েছে বলে জেনেছি। বিশদে তদন্ত হচ্ছে।’’

ঘটনায় হতভম্ব আর্শেদের দাদু ইসমাইল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘বাবাকে চিনল না ছেলেটা। বাবাও দেখতে পেল না ছেলেকে। নাতিকে যে মেরেছে, সে যেন সাজা পায়।’’

Murder Purbasthali Mystery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy