E-Paper

বেহাল রাজ্যের কোষাগার, কোপ পূর্ত-সড়কে

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আগে পূর্ত দফতরের এমন জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত কাজের আর্থিক অনুমোদন দ্রুত হত। এখন অর্থ দফতরের কড়াকড়িতে বিস্তর ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই আর্থিক প্রস্তাবের ফাইল জমছে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৫৩

—প্রতীকী চিত্র।

বেহাল দশা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠকে রাস্তার গর্ত বোজানোর কাজ শুরু করার বার্তা জেলা প্রশাসনগুলিকে দিয়েছিল নবান্ন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বেহাল রাস্তার কারণে পথচারীরা যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তাতে পূর্ণাঙ্গ মেরামতের বদলে গর্ত বোজানোর উপর জোর পড়ায় চর্চা তৈরি হয় প্রশাসনের অন্দরেই। প্রশ্ন ওঠে, অর্থের অভাবই কি পূর্ণাঙ্গ মেরামতির অন্যতম অন্তরায়? প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, ভোটমুখী বিপুল খরচসাপেক্ষ রাজনৈতিক ঘোষণা কার্যকর করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তার আঁচ পড়ছে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের কাজেও।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আগে পূর্ত দফতরের এমন জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত কাজের আর্থিক অনুমোদন দ্রুত হত। এখন অর্থ দফতরের কড়াকড়িতে বিস্তর ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই আর্থিক প্রস্তাবের ফাইল জমছে।

তথ্য বলছে, চলতি আর্থিক বছরে (২০২৫-২৬) অগস্টের গোড়া পর্যন্ত কেন্দ্র এবং রাজ্যের অর্থ মিলিয়ে পূর্ত দফতরের বাজেট ধরা ছিল ৫৪২৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে অর্থ দফতর ১৭৫৭.৭০ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছিল। প্রশাসনিক দফতর হিসেবে পূর্তের অনুমোদন ছিল ৭২৩.৮৯ কোটি টাকা। খরচ হয়েছিল ৫৯০.৫৬ কোটি টাকা। চলতি মাসের গত সপ্তাহ পর্যন্ত এই খাতে অর্থ দফতরের অনুমোদনের অঙ্ক প্রায় ১৭৯৯ কোটি টাকা। প্রকৃত খরচের পরিমাণ প্রায় ৭৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রায় দেড় মাসে অর্থ দফতর অনুমোদন দিয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকার। যা পূর্ত দফতরের নিরিখে বেশ কম।

সরকারি কর্তাদের একাংশের দাবি, এই অর্থের বেশিরভাগ ব্যবহার হচ্ছে আগের আর্থিক বছরের খরচ মেটানোর কাজে। এক কর্তার কথায়, “রাস্তার গর্ত বোজানোর কিছু কাজ ছাড়া আর বাকি সব প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এপ্রিল থেকে নতুন আর্থিক বছর শুরুর পরে প্রায় ছ’মাস কেটে গিয়েছে। গত বছর এমন সময়ে দু’হাজার কোটি টাকার বেশি কাজ হয়ে গিয়েছিল।”

প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যায়, সড়কের নির্দিষ্ট পরিমাপের ৩ শতাংশের কম ক্ষতিতে উপরিভাগের সাধারণ সংস্কার হওয়ার কথা। ক্ষতি ৩ শতাংশ বা তার বেশি হলে রাস্তা খুঁড়ে ফেলে নতুন করে তা তৈরি করার কথা। কিন্তু এখন রাস্তার ক্ষতে ইটের বাঁধুনি বা পিচের তাপ্পি দেওয়া হচ্ছে। খরচ বাঁচানোই এর কারণ। শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চলের রাস্তাগুলির হালও সাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছে।

তবে পূর্ত দফতর সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় আট হাজার কিলোমিটার ঠিকাদারের মেরামতির চুক্তির (ডিএলপি) আওতায় আছে। বাকি রাস্তার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের খারাপ অবস্থা ভারী বর্ষা এবং জমা জলের কারণে।

১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া নতুন আর্থিক বছরের এক-দেড় মাসের মাথায় কিছু দফতরকে জানানো হয়েছিল, একান্ত জরুরি এমন প্রকল্পই গৃহীত হবে। তখনই দফতরের কর্তারা বুঝেছিলেন, বাজেট বরাদ্দ যা-ই থাকুক, আর্থিক অনুমোদন পাওয়া কঠিন হবে। আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, ভোটমুখী বিপুল খরচসাপেক্ষ ঘোষণার বাধ্যবাধকতায় কোষাগারের বেহাল দশাতেও অর্থ দফতরকেই টাকা জোগাড় করতে হবে।

একে তো রাজ্যের আয়ের পথ সঙ্কুচিত। তার উপর বিধানসভা ভোটের আগে বাড়ি তৈরির প্রকল্পের নতুন ঘোষণার খাতে (খরচের অর্ধেক ধরলে) এ বছর প্রায় ৯৬০০ কোটি টাকা জোগাড় করতে হবে। যার সংস্থান বাজেটে নেই। ভোটমুখী পাড়া কর্মসূচিতেও ঘোষণা মতো আট হাজার কোটি টাকার ব্যবস্থা করতে নাজেহাল হচ্ছে অর্থ দফতর। লক্ষ্মীর ভান্ডারে নতুন কয়েক লক্ষ উপভোক্তা নতুন করে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ভোটের আগে সেই অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা হলেও, কোষাগারের উপর আরও চাপ নামবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Poor condition of road Nabanna

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy