Advertisement
E-Paper

ভাঙনের মুখে স্কুলবাড়ি, পড়ুয়াদের ভরসা গাছতলা

বছর খানেক আগেও নদী ছিল প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। এখন দোরগড়ায় চলে এসেছে। যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে দোতলা স্কুল বাড়িটি। তাই ভরাডুবিতে মুষ্টি-লাভ মেনে যেটুকু ধরে রাখা যায় তাই বাঁচানোর জন্য হাত লাগিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক থেকে গ্রামের বাসিন্দারা।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৮
চর জোত বিশ্বনাথ গ্রামে ছবিটি তুলেছেন অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

চর জোত বিশ্বনাথ গ্রামে ছবিটি তুলেছেন অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বছর খানেক আগেও নদী ছিল প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। এখন দোরগড়ায় চলে এসেছে। যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে দোতলা স্কুল বাড়িটি। তাই ভরাডুবিতে মুষ্টি-লাভ মেনে যেটুকু ধরে রাখা যায় তাই বাঁচানোর জন্য হাত লাগিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক থেকে গ্রামের বাসিন্দারা। অন্য দিকে, দিন কয়েক পর স্কুল বাড়িটা আর থাকবে না ভেবে মন খারাপ খুদে পড়ুয়াদেরও। নিশ্চিত আশ্রয় থেকে পড়ুয়াদের এ ভাবেই গাছতলায় টেনে এনেছে সর্বগ্রাসী পদ্মা।

১৯৮৬ সালে রঘুনাথগঞ্জ পূর্ব চক্রের ৭৮ নম্বর চর জোত বিশ্বনাথ গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য অনুমোদন মঞ্জুর করা হয়। তারপর বহু দিন পর্যন্ত গাছতলায় চলত পঠনপাঠন। ২০০৭ সালে তৈরি হয় পাঁচ রুমের একটি পাকা দোতালা বাড়ি। বতর্মানে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫৪ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রাণাশিস বন্দোপাধ্যায় জানান, স্কুলবাড়িটি যখন তৈরি হয় তখন নজরেই আসত না পদ্মা। বৃহস্পতিবার সেই পদ্মা এসে দাঁড়িয়েছে স্কুল থেকে মাত্র ফুট সাতেক দূরে। ঢেউয়ের ধাক্কায় দুলছে পুরো বাড়ি। তাই স্কুলে আসতে মানা করেছেন পড়ুয়াদের। বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে যাবতীয় আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলার কাজ। প্রাণাশিসবাবু জানান, জুন মাসে গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়ে স্কুলে গিয়েই আতঙ্কে শিউরে ওঠেন তিনি। দেখেন দেড় কিলোমিটারের দূরের পদ্মা মাত্র দেড়শো মিটার দূরে এসে দাঁড়িয়েছে। গত ৩ জুলাই শিক্ষক ও গ্রামবাসীরা মিলে বিডিও এবং শিক্ষা দফতরের কর্তাদের লিখিত ভাবে স্কুল ভবনের বিপদের কথা জানান। তারপরেও মাস দুয়েক কেটে গিয়েছে। টনক নড়েনি কারওই। তাঁর আক্ষেপ “এখন স্কুল থেকেই ৩০০ মিটার দূরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দেখতে পাওয়া যায়। কাঁটাতার নেই এখানে। পদ্মাই এখন কাঁটাতারের বেড়া।”

গ্রামবাসীরা জানালেন, চর নারুখাকি, চর জোত বিশ্বনাথ, চর গোঠা ও হঠাত পাড়া এই ৪ গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার মানুষের ভরসা ছিল ওই একমাত্র স্কুল। কিন্তু বড় জোর আর দু’দিন, তারপর স্কুল ভবন চলে যাবে পদ্মা গর্ভে। তাই ভিবনের সব নতুন কাঠের জানালা দরজা পাকা দেওয়াল ভেঙে যা পাওয়া যায় গ্রামেই কোথাও তা রেখে দেওয়ার জন্য শিক্ষক ও কয়েকজন অভিভাবকই হাত লাগিয়েছেন স্কুল ভাঙ্গার কাজে।

গ্রামেরই পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের সায়েরা বিবি বলেন, “বহু কষ্টে বহুদিন পরে স্কুলের পাকা ভবন গড়া হয়েছিল এই সীমান্ত গ্রামে। এত তাড়াতাড়ি এভাবে স্কুল ভবন চলে গেলে দ্বিতীয়বার তা তৈরি করা কার্যত অসম্ভব। কিন্তু কিছু করারও তো নেই। স্পার বাঁধিয়ে পদ্মাকে ঠেকানো যাবে না এখানে।” স্কুলের উপদেষ্টা কমিটির সম্পাদক নুরসাদ আলি বলেন, “৪টি গ্রামে স্কুল বলতে এই একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর পাশেই চর গোঠা গ্রামে একটি আইসিডিএস কেন্দ্র। খুব যত্ন করে স্কুল ভবনটা গড়েছিলেন গ্রামবাসীরা। স্কুলের শৌচাগার দেখেই গ্রামের অনেকে বাড়িতেই শৌচাগার গড়ে উঠেছিল। সব শেষ হয়ে গেল।” স্কুলবাড়িটা থাকবেনা ভেবে মুখ ভার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সারমিনা খাতুনের। তার কথায়, “মাষ্টারমশাই বলে দিয়েছেন স্কুল পদ্মায় ডুবে যাবে। খুব কষ্ট হচ্ছে।” সামনে স্যারকে পেয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ আসিফের প্রশ্ন, “স্কুল নদীতে ধসে গেলে বৃষ্টিতে কোথায় ক্লাস হবে স্যার?”

বড়শিমুল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কাইজার হোসেন বলেন, “ভাগীরথী -পদ্মা দুই দিক থেকে গিলে খাচ্ছে গ্রামগুলিকে।” জানালেন, নারুখাকিতে বিএসএফের চৌকি তলিয়ে যাওয়ার পর সে চৌকি সরে এসেছে পাশের গ্রাম চর গোঠাতে। স্কুলটাও সেই দশায় পৌঁচেছে। তাই বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ১০০ মিটার দূরে একটি আমবাগানে তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রঘুনাথগঞ্জ -২ ব্লকের বিডিও বিরাজকৃষ্ণ পাল বলেন, “পদ্মার এখন যা অবস্থা তাতে ভাঙন ঠেকানো কোনও মতেই সম্ভব নয়। স্কুলটিকে তাই অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। পরে নতুন ভবন তৈরির চিন্তা করা যাবে।” প্রাণাশিসবাবু বলেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রদের জুটিয়ে এনে পাশেই এক বাগানে ক্লাস শুরুর চেষ্টা চলছে। বিডিওকে বলা হয়েছে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কয়েকটি ত্রিপল দেওয়ার জন্য।”

river bank erosion biman hazra raghunathgunj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy