Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

ন’মাস মেলেনি ভাতা, প্রবীণদের বিক্ষোভ ব্যাঙ্কে

ন’মাস ধরে মিলছে না বিধবা, বার্ধক্য ও প্রতিবন্ধী ভাতা। ব্যাঙ্কে গিয়ে চড়া গলায় বারবার শুনতে হয়েছে‘টাকা না এলে কি আকাশ থেকে দেব?’ এই হয়রানির প্রতিবাদে রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের প্রায় ছ’শো প্রবীণ নাগরিক সোমবার জঙ্গিপুর লাগোয়া মিঠিপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় বিক্ষোভ দেখালেন। ব্যাঙ্কের মূল ফটকের সামনে ওই বিক্ষোভ চলায় ভিতরে ঢুকতে পারেননি ব্যাঙ্ককর্মীরা।

রঘুনাথপুরে ব্যাঙ্কের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

রঘুনাথপুরে ব্যাঙ্কের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

ন’মাস ধরে মিলছে না বিধবা, বার্ধক্য ও প্রতিবন্ধী ভাতা। ব্যাঙ্কে গিয়ে চড়া গলায় বারবার শুনতে হয়েছে‘টাকা না এলে কি আকাশ থেকে দেব?’ এই হয়রানির প্রতিবাদে রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের প্রায় ছ’শো প্রবীণ নাগরিক সোমবার জঙ্গিপুর লাগোয়া মিঠিপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় বিক্ষোভ দেখালেন। ব্যাঙ্কের মূল ফটকের সামনে ওই বিক্ষোভ চলায় ভিতরে ঢুকতে পারেননি ব্যাঙ্ককর্মীরা। পরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ চার দিনের মধ্যে বকেয়া টাকা দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ অবরোধ ওঠে।

Advertisement

এদিনের ওই বিক্ষোভ-অবরোধে সামিল হয়েছিলেন মিঠিপুরের মর্জিনা বিবি। ৮০ বছরের দৃষ্টিহীন ওই বৃদ্ধা মাসে এক হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তাঁর অভিযোগ, “আজ ন’মাস ধরে ব্যাঙ্ক, বাড়ি আর ব্লক অফিস ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে গেলাম। কিন্তু ভাতা মিলল না। ব্যাঙ্কে এলে ওরা বলে, টাকা আসেনি। আর ব্লকে গেলে শুনতে হয়, টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্ধ মানুষকে এভাবে হেনস্থা করলে কোথায় যাই বলুন তো?”

বার্ধক্য ভাতার জন্য মাসে ৪০০ টাকা করে পাওয়ার কথা স্থানীয় বাসিন্দা তেলকর বেওয়ারও। তিনিও ন’মাস ধরে ব্যাঙ্কে এসেছেন আর খালি হাতে ফিরে গিয়েছেন। তাঁর ক্ষোভ, “শুনেছিলাম ব্যাঙ্কে টাকা এসেছিল। কিন্তু ব্যাঙ্ক সে টাকা আমাদের না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে আমার ওষুধ কেনার পয়সাটুকু পর্যন্ত নেই।”

মিঠিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের মিঠু হালদার বলেন, “এলাকার প্রায় ছ’শো মানুষ এই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভাতা পান। দীর্ঘদিন ধরে সেই ভাতা না পাওয়ায় এদিন তাঁরা বাধ্য হয়ে ব্যাঙ্কের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।”

Advertisement

রঘুনাথগঞ্জ ২-এর বিডিও বিরাজকৃষ্ণ পাল জানান, ভাতার টাকা প্রথমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রঘুনাথগঞ্জের একটি রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কে। সেখান থেকে একটা নির্দিষ্ট সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে সে টাকা যায় ১৩ টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়। এবারও ৬ মাসের মোট ১৭ লক্ষ ৪১ হাজার ২০০ টাকা ওই সব ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১২টি ব্যাঙ্ক থেকে সে টাকা গ্রাহকেরা হাতেও পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মিঠিপুরের ওই ব্যাঙ্ক টাকা ফেরত পাঠিয়ে জানিয়ে দেয় যে ভাতা প্রাপকদের নামের সঙ্গে অ্যাকাউন্ট নম্বর মিলছে না। তাই তারা টাকা বণ্টন করতে পারেনি। বিডিও বলেন, “এ ব্যাপারে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ব্লকের কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের গাফিলতিতেই ভাতা প্রাপকেরা সময়ে টাকা পাননি।”

মিঠিপুর শাখার ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অনুজকুমার গুপ্ত অবশ্য বলেন, “বারবার বলা সত্ত্বেও প্রাপকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভাতার টাকা পাঠানো হয়নি। আর সেই কারণেই টাকা বন্টন করা সম্ভব হয়নি বলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি।”

রঘুনাথগঞ্জ শহরের যে মাস্টার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ব্লক অফিস থেকে ভাতার টাকা পাঠানো হয় সেই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অভিষেক সিংহ জানান, দীর্ঘ দিন এভাবেই টাকা পাঠানো হচ্ছে। এবারও বেনিফিসিয়ারিদের নাম ও অ্যাকাউন্ট নম্বর সহ টাকা গিয়েছে ওই ব্যাঙ্কগুলোতে। সঙ্গে পাঠানো হয়েছে সিডি। অভিষেকবাবু বলেন, “সব ব্যাঙ্ক সঠিক ভাবে টাকা পেয়ে তা বিলিও করে দিয়েছে। অথচ মিঠিপুরের বেলায় অ্যাকাউন্ট ‘মিস ম্যাচ’ হয়ে গেল! এটা কখনও সম্ভব নয়। তাহলে এত দিন সেখান থেকে ওই ভাতা প্রাপকরা টাকা পেলেন কী ভাবে?” তিনি বলেন, “আসলে সরকারি টাকা বিলির ক্ষেত্রে কখনও কখনও একটু বেশি পরিশ্রম হয়ে যায়। মিঠিপুর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একটু মানবিক ভাবে ব্যাপারটি দেখলে এতজন অসহায়কে হয়রান হতে হত না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.