Advertisement
E-Paper

স্কুলে ফিরবে পনেরো কিশোরী, স্কুলছুটদের ফেরাতে নজরদারি

গত সপ্তাহে নজরে আসে সুতি ২ ব্লকের বাজিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫ জন কিশোরীর, যারা সকলেই স্কুল ছেড়ে দিয়েছে চতুর্থ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতেই। তাদের বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। এই ১৫ জন স্কুলছুট কিশোরীর ১২ জনই রঘুনাথপুর গ্রামের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৬
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নজরদারিতেই ফল মিলল সুতির গ্রামে। স্কুলছুট ১৫ কিশোরীকে ফের স্কুলে ফেরাতে উদ্যোগ নিল পঞ্চায়েত ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। জেলার ২৬টি ব্লকে সাত মাস থেকে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাম বাছাই করে কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাময় কিশোরীদের পরিবারগুলির উপর নজরদারি চালাচ্ছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ২৯০টি গ্রামের ১৬৬৯টি পরিবারকে এই নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে। সুতির দুই ব্লকে এই কিশোরীর সংখ্যা ২১৫। প্রতি সপ্তাহে তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে তাদের না জানিয়েই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, গ্রামের কোনো ঘটনা ইত্যাদি নিয়ে কৌশলে জানার চেষ্টা হচ্ছে চিহ্নিত কিশোরী বাড়িতে রয়েছে কিনা, তারা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে কিনা। এর মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে ওই পরিবারের মতিগতি।

আর সেই মতিগতির আঁচ পেতে গিয়েই গত সপ্তাহে নজরে আসে সুতি ২ ব্লকের বাজিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫ জন কিশোরীর, যারা সকলেই স্কুল ছেড়ে দিয়েছে চতুর্থ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতেই। তাদের বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। এই ১৫ জন স্কুলছুট কিশোরীর ১২ জনই রঘুনাথপুর গ্রামের। দু’জনের বাড়ি সুলতানপুর ও এক জন মালোপাড়ার বাসিন্দা। বুধবার ওই ১৫ স্কুলছুট কিশোরীকে নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পঞ্চায়েত সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা আলোচনায় বসেন গ্রামের স্কুলেই।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বাজিতপুর পঞ্চায়েতের কমিউনিটি ফেসিলেটর বিপ্লব দাস এলাকার ১৮টি গ্রাম সংসদে নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক কিশোরীর সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলা হয়। স্কুলছুটের কারণ খোঁজার চেষ্টা হয় তাদের কাছ থেকে। তাদের আগ্রহে সকলকেই সুবিধে মত স্থানীয় তিনটি হাইস্কুল ও মাদ্রাসায় ভর্তি করা হচ্ছে।’’ মালোপাড়ার সাহানাজ কাজলের বয়স ১৫ বছর। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত ছাবঘাটি হাইস্কুলে। ৮ ভাইবোন তাদের। বাবার অসুস্থতার কারণে পড়া ছাড়তে হয় তাকে। আর এক কিশোরী সুলতানপুরের লিলি খাতুনের বয়স ১৪ বছর। ৬ ভাই বোন তারা। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেই স্কুল যাওয়া বন্ধ হয় তার। মূলত আর্থিক অভাবে জড়িয়ে পড়ে বিড়ি বাঁধা ও সাংসারিক কাজে। আর তাতেই স্কুল ছুট। সুলতানপুরের এক কিশোরী মাসতারা খাতুনের বয়স ১৩ বছর। ৬ বোন। মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেই এক বছর স্কুল যাওয়া বন্ধ। কিশোরীর কথায়, “বাড়ি থেকে খিদিরপুর মধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে। তাই আর যাওয়া হয়নি।” তার মা মমতাজ বিবি বলছেন, “ কাছের কোনও স্কুলে যদি ভর্তি হতে পারে তাহলে মেয়ে পড়বে। সেই ব্যবস্থাটা করে দিক পঞ্চায়েত।”

একই ভাবে স্কুল ছেড়েছে রঘুনাথপুরের ১২ জন কিশোরী। ১৫ বছরের দিপীকা সিংহ স্কুল ছেড়েছে পঞ্চম শ্রেণিতে , ১৫ বছরের চামেলি খাতুন স্কুলছুট ষষ্ঠ শ্রেণিতে, তাসমিরা খাতুন সপ্তম শ্রেণিতে, ১৪ বছরের রিম্পা খাতুন চতুর্থ শ্রেণিতেই স্কুল ছুট। সুস্মিতা সিংহ,গোলাপী খাতুন, চুমকি খাতুন, হালেমা খাতুন, রেখা খাতুন, রুমকি খাতুন, আমিনা খাতুন, সাঞ্জিনা খাতুনেরাও স্কুল ছেড়েছে কেউ পঞ্চমে কেউ সপ্তমে। সকলেই আবার স্কুলে ভর্তি হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। সংস্থার সুতি ব্লকের সুপারভাইজর বিজয় হাজরা জানান, যেহেতু সুতি বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত সংখ্যালঘু এলাকা, তাই স্কুলের পড়াশুনো বন্ধ করে কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। শিশু সুরক্ষা কমিটি, কন্যাশ্রী ও বালিকা বধুদের সাধারণ নজরদারি তো আছেই। এর বাইরেও রয়েছে সংস্থার বিশেষ খোঁজ খবরের আওতায় বহু কিশোরীর পরিবার। তিনি বলেন, “স্কুলছুট মানেই বাল্য বিবাহের চেষ্টা থাকে পরিবারের। সুতির দুটি ব্লকে এ পর্যন্ত সাত মাসে বন্ধ করা হয়েছে এ রকম ৮৫টি বাল্য বিবাহ। সেটা আটকাতেই স্কুলছুটদের ফের স্কুলে পাঠানোর চেষ্টা।” রঘুনাথপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ তৈরুল ইসলাম বলছেন, “ দীর্ঘক্ষণ কিশোরীদের সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদের। তাতে বুঝেছি এই স্কুল ছাড়ার পিছনে পরিবারের আর্থিক সঙ্কট ও সচেতনতার অভাবটাই মূল। সকলেই ফের স্কুলে যেতে চেয়েছে। সেই মতই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য আনারুল হক বলছেন, “ ওই কিশোরীদের আগ্রহ রয়েছে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। সবরকম সাহায্য করবে পঞ্চায়েত।”

School Teenage Girl Surveillance NGO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy