উত্তরপ্রদেশের কানপুরে পালিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হল না। মোবাইল টাওয়ার লোকেশন দেখে ধাওয়া করে দু’জনকে পাকড়াও করে আনল পুলিশ। তবে চাকদহে শান্তনু শীল খুনে ফেরার আরও দুই অভিযুক্ত এখনও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি জলসার মঞ্চে শান্তনুকে গুলি করার পরের দিনই গ্রেফতার হয় মূল অভিযুক্ত অমন রায় ওরফে কালু। বাকি চার অভিযুক্তের নাগাল কিন্তু পাচ্ছিল না পুলিশ। তবে বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া জানান, বিশ্বজিৎ ঘোষ ওরফে ছ্যাঁকা বিশু এবং গৌতম মণ্ডল ওরফে পুচু পাকড়াও হয়েছে। তাদের দু’দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে জেলায় আনা হচ্ছে।
শান্তনুর স্ত্রী সোমা এই দু’জন ছাড়াও বিশ্বনাথ দেবনাথ এবং কালুর দাদা সুমন রায় ওরফে হাম্পির নাম লিখিত অভিযোগে দিয়েছিলেন। তারা এখনও অধরা। মঙ্গলবার কল্যাণী আদালতে তুলে কালুকে ফের তিন দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ও আরও কিছু জায়গায় হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে।
এর আগে ‘প্রতিবাদ সভা’ করে চাকদহের পুরপ্রধান তথা শহর তৃণমূল সভাপতি দীপক চক্রবর্তী দাবি করেছিলেন, অভিযোগে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তারা সকলেই এই খুনের সঙ্গে জড়িত নয়। শান্তনুর বাড়ি তাঁর নিজের ওয়ার্ডে হওয়া সত্ত্বেও পরিবারটির সঙ্গে দেখা করার সৌজন্য দেখাননি তিনি। চাকদহের বাসিন্দাদের একাংশের ধারণা, তোলাবাজ কালু ও তার সঙ্গীরা পুরপ্রধানের ছত্রচ্ছায়ায় লালিতপালিত বলেই তাদের আড়াল করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
এ দিন ফের সভা করে কার্যত আত্মপক্ষ সমর্থনে নামেন দীপক। সন্ধ্যায় চাকদহ বসন্তকুমারী বালিকা বিদ্যাপীঠের সামনে তিনি বলেন, ‘‘আমি কাউকে আড়াল করতে চাইছি না। আমি সব সময় বলেছি, প্রকৃত অপরাধী গ্রেফতার হোক।’’ অর্থাৎ, সোমা যাঁদের নাম দিয়েছেন, সকলেই ‘প্রকৃত অপরাধী’ না-ও হতে পারেন। সোমার নাম না করেও তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এক জন খালি দেখল, সে দিন কী ঘটেছে, আর কেউ কিছু দেখল না!’’
কেন তিনি শান্তনুদের বাড়ি যাননি, তারও ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন দীপক। তাঁর দাবি, “আমি গেলেই চক্রান্ত হবে। হয়তো বলবে, ভয় দেখিয়ে গেল, কেস তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে গেল!’’ তিনি ওই পরিবারটিকে হুমকি দিতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথা অবশ্য আর কেউ প্রকাশ্যে বলেননি।
মোবাইলের দোকানি শান্তনুর জন্য সকালে স্মরণসভার আয়োজন করে চাকদহ ব্যবসায়ী সমিতি। ছেলে সৌম্যজিৎকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোমা। পঞ্চায়েত সমিতি ও পুরসভার সোমার কাজের ব্যবস্থা করা উচিত বলে দাবি ওঠে। সারাক্ষণ বসে চোখের জল ফেলেছেন সোমা। রাতে দীপকের কথা শুনে তিনি বলেন, “এখন সবাই যখন ছি-ছি করছে, উনি এ সব বলছেন। ওঁকে আমাদের বাড়িতে আসতে হবে না!”