Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Nadia

এক বর্ণ না পড়েই এমএ পাশ, এ বার সেটেও উত্তীর্ণ তেহট্টের রাখি! শ্রুতিতেই পার বড় বড় সব পরীক্ষা

ছোট থেকে কখনওই দৃষ্টিহীনদের স্কুলে যাননি রাখি। আর পাঁচ জনের মতো সাধারণ স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। রাখির লেখাপড়া তেহট্টের শ্রীদামচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে।

রাখি ঘোষ। নিজস্ব ছবি।

রাখি ঘোষ। নিজস্ব ছবি।

প্রণয় ঘোষ
তেহট্ট শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ২২:৪৬
Share: Save:

পড়াশোনায় ‘পড়া’ ছিল না। ছিল শুধুই ‘শোনা’। সেই অর্থে কোনও দিনই বই তার পড়া হয়ে ওঠেনি। কেবল শুনেই গিয়েছেন। জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন সেই তরুণী এ বার সেট (স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট) পাশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

নদিয়ার তেহট্টের হাউলিয়া মোড়ের বাসিন্দা রাখি ঘোষ জন্ম থেকে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। কিন্তু দৃষ্টিহীনতা তাঁর স্বপ্নপূরণে কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সেটের ফল প্রকাশের পর রাখি বলেন, ‘‘আমার এই সাফল্যের পিছনে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। বাবা-মায়ের কথা আর নতুন করে কী বলব!’’

ছোট থেকে কখনওই দৃষ্টিহীনদের স্কুলে যাননি রাখি। আর পাঁচ জনের মতো সাধারণ স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। রাখির লেখাপড়া তেহট্টের শ্রীদামচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর তিনি বাংলা নিয়ে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। ২০২২ সালে সেখান থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে একটা গোটা বছর সেটের প্রস্তুতি নেন। তাতেই এল সাফল্য।

রাখিদের পরিবারে অভাব বরাবরই নিত্যসঙ্গী। বাবা দয়াল ঘোষ মাঠে চাষ করেন। মা মিনতি ঘোষ বাড়িতেই থাকেন। পরিবারে রাখির দুই দাদা ও তাঁদের স্ত্রীরাও রয়েছেন। মিনতি বলেন, ‘‘ছোট থেকেই লেখাপড়ায় আগ্রহ মেয়ের। আমি কারও কথায় কান না দিয়ে মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি। এ বার যদি কলেজে চাকরিটা পায়, আরও খুশি হব।’’

মাঝের একটা সময় মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিলেন রাখি। তিনি জানান, সেই সময় তাঁকে ভীষণ ভাবে সাহায্য করেছিলেন তেহট্টের মহকুমাশাসক মৌমিতা সাহা। রাখি বলেন, ‘‘টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। একটা সময় মনে হত, আমি চোখে দেখতে পাই না! লেখাপড়া করে কী হবে? সেই সময় মহকুমাশাসক সব দিক থেকে আমায় সাহায্য করেছেন। এমএ পড়ার সব খরচ জুগিয়েছেন।’’

মৌমিতা অবশ্য বলেন, ‘‘সব কৃতিত্ব রাখির। আমি শুধু সলতে পাকানোর কাজটুকু করেছি। আমি নই, ও-ই আমাদের অনুপ্রেরণা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE