Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সাঁঝ-বাদলে ৬

জোছনায় প্রাণ বাঁচান আট-বাবা

ডহর ধারে তেনারা আসেন মাঝ রাতে আর বিল পাড়ের মাঠে। সে এক নিভু নিভু আলো, রাতভর... হ্যারিকেনের আলো তেরছা করে পড়েছে, বাদল সাঁঝে এমন বৃষ্টি-ঘন গপ্পো শুনতে সেই মাঠ-পুকুর-খালপাড় ধরে হাঁটল আনন্দবাজার।ডহর ধারে তেনারা আসেন মাঝ রাতে আর বিল পাড়ের মাঠে। সে এক নিভু নিভু আলো, রাতভর... হ্যারিকেনের আলো তেরছা করে পড়েছে, বাদল সাঁঝে এমন বৃষ্টি-ঘন গপ্পো শুনতে সেই মাঠ-পুকুর-খালপাড় ধরে হাঁটল আনন্দবাজার।

শিবনাথ মাইতি
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

খেত থেকে ফিরে নাওয়া-খাওয়া সেরে খোকন সে দিন চণ্ডীমণ্ডপে যেতে পারলেন না। বাইরে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। সন্ধ্যায় কুপি জ্বালিয়ে খোকনকে ঘিরে ধরে বসেছে খোকনের তিন ছেলেমেয়ে।

—‘ও বাবা, একটা ভূতের গপ্পো বলো না!’

—‘ভূতের গপ্পো? ভয় পাবি না তো?’

খোকনের স্ত্রীও ছেলেমেয়েদের পাশে বসে আবদার করলেন, ‘সেই আট-বাবার গপ্পোটা বলো না।’ হুঁকোতে তামাক সাজতে সাজতে খোকন শুরু করেন, ‘সে বার বর্ষায় বহু লোকের ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু শত কষ্টের মধ্যে মাছের অভাব ছিল না। বিত্তি বোঝাই মাছ উঠছিল। সে দিন ছিল ভরা পূর্ণিমা। আকাশে মেঘ কেটে ফটফটে আলো। আচমকা ঘুম ভেঙে গেল। ভোর হলে বিত্তি যদি কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়! মনে হতেই বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে আসতেই বুঝলাম ভোর হয়ে গিয়েছে। হাঁটুজল আলপথ ভেঙে যাচ্ছি যেখানে বিত্তি পাতা ছিল সেই ঢালু জায়গায়। আচমকা দেখলাম, হাত পঞ্চাশেক দূরে লম্বা এক লোক বড় বড় পা ফেলে সামনের দিকে হাঁটছে। তাঁর গা থেকে লম্বা মতোন কালো চাদরটা উড়ছে পতপত করে। এ অঞ্চলে তো এমন লম্বা মানুষ কেউ নেই। তা হলে ও কে?’

হাতের হুঁকোটা দাওয়ায় রেখে একটু জিরিয়ে নিয়ে ফের খোকন বলতে থাকেন, ‘কিন্তু কিছুটা যেতেই লোকটা ক্রমশ লম্বা হয়ে উঠতে লাগল। পাল্লা দিয়ে চাদরটাও। তাহলে কি নিশি, নাকি...? ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। দরদর করে ঘামছি। ভোরে বহু লোক বিত্তি তুলতে আসে। তারাও কেউ কোথাও নেই। প্রায় আট ফুট লম্বা ওই লোকটা হঠাৎ আমার দিকে হেঁটে আসতে শুরু করল। চুলোয় যাক বিত্তি-মাছ— বলে এক দৌড়ে বাড়ি। বাড়ির দরজার কাছে এসে পড়লাম ধপাস করে। তার পর আর কিছু মনে নেই। চোখ মেলতে দেখি, ঠাকুমা পাখা দিয়ে বাতাস করছে। আর সবাই জিজ্ঞাসা করছে রাতদুপুরে আমি কোথায় গিয়েছিলাম। আসলে তখন বাজছিল রাত দু’টো। জোছনা রাতে ভুল করে ভোর বলে বেরিয়ে পড়েছিলাম। পরের দিন সকালে শুনি, যেখানে বিত্তি পাতা ছিল, নদীর বাঁধ ভেঙে সেই এলাকা বানের জলে ভেসে গিয়েছে। সেই সময় আট-ফুট ওই লোকটার ভয়ে পালিয়ে না এলে হয়তো আমিও বন্যায় ভেসে যেতাম!’

খোকনের ছোট মেয়ে বলল, ‘আচ্ছা বাবা, আট কি ভূত না ভগবান?’ খোকন হাসতে হাসতে শুধু বললেন, ‘জয়, আট-বাবার জয়।’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ghost Rainy Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE