Advertisement
E-Paper

স্কুল গেটেই থেমে গেল প্রতিমার মাধ্যমিক

হাতে ধরা দুমড়ানো কাগজে একটা রোল নম্বর। স্কুল গেটের সামনে ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল মেয়েটি।পরীক্ষা শুরু হয়েছে খানিক আগে। কিন্তু তার যে অ্যাডমিট কার্ড নেই! গেট পেরিয়ে মাধ্যমিকে বসার ইচ্ছেটা গেটের ওপারেই থমকে গিয়েছে তার।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৩
প্রতিমা বিশ্বাস।নিজস্ব চিত্র

প্রতিমা বিশ্বাস।নিজস্ব চিত্র

হাতে ধরা দুমড়ানো কাগজে একটা রোল নম্বর। স্কুল গেটের সামনে ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল মেয়েটি।

পরীক্ষা শুরু হয়েছে খানিক আগে। কিন্তু তার যে অ্যাডমিট কার্ড নেই! গেট পেরিয়ে মাধ্যমিকে বসার ইচ্ছেটা গেটের ওপারেই থমকে গিয়েছে তার।

অথচ, অ্যাডমিট কার্ড না আসায় সাত কিলোমিটার দূরের গাঁ উজিয়ে কত বার যে স্কুলে এসেছে প্রতিমা বিশ্বাস। তার বাবা বলছেন, ‘‘সাত বার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছি, প্রতি বারই শুনেছি, এই এল বলে!’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্বিকার গলায় জুগিয়ে গিয়েছেন ভরসা, ‘আসবে আসবে, তাড়ার কী আছে!’

তা আর আসেনি। আর তাই, কম ভোল্টেজের আলোয় রাতভর পড়াশোনা চালিয়েও এ বার মাধ্যমিকটা ঝাপসাই থেকে গেল তার কাছে। চোখটা ভিজে হয়ে আসছে প্রতিমার।

রেজিনগরের রামপাড়া-মাঙ্গনপাড়া হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীমান গায়েনের দায়সারা জবাব, ‘‘অনেক সময় মেয়েদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে ওরা আর ফর্মে সই করে না। আমি ভাবলাম এ ক্ষেত্রেও সেই রকম কিছু হয়েছে।’’ তাই আর গা করেননি?

সেই চিরকুট।নিজস্ব চিত্র

স্কুলের এই গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্যই এ বার আর পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে না তার।

বাড়ির হাত কয়েক তফাতেই বিদ্যুতের খুঁটি। তবে, তার আলো এত কম যে অনেক সময়েই কুপির আলোয় রাত জেগে অঙ্ক কষেছে সে। প্রতিমা বলছে, ‘‘আমি ঠিক পাশ করে যেতাম জানেন।’’ এক চিকিৎসকের গাড়ি চালিয়ে সামান্য আয় ছাত্রীর বাবা মিলন বিশ্বাসের। তিনি বলেন, ‘‘কোনওক্রমে মেয়েটাকে পড়াচ্ছিলাম। স্কুলের গাফিলতিতেই মেয়েটার একটা বছর নষ্ট হয়ে গেল!’’

প্রতিমা জানায়, ফর্ম ফিল-ইনের জন্য স্কুলে গিয়ে এক করণিকের হাতে ২৫০ টাকা জমা দিয়েছিল সে। ওই করণিক তাকে ফর্মে সই করার কথা বলেননি। তাই সই না করেই বাড়ি ফিরে আসে। অ্যাডমিট কার্ড আর তাই আসেনি। ব্যাপারটা খেয়াল করেনি স্কুল কর্তপক্ষও। এখন প্রশ্ন, ওই ছাত্রী সই না করলেও স্কুল কেন তা পরীক্ষা করে নেয়নি, কার্ড না আসায় স্কুলে তো বার কয়েক ছুটে এসেছিল সে? ধীমানবাবু বলছেন, ‘‘ওই ছাত্রীরও দেখে নেওয়া উচিত ছিল ব্যাপারটা।’’

প্রতিমা বলছে, ‘‘কত বার যে স্কুলে গিয়েছি, ওঁরা বলতেই পারেননি কেন আসেনি। স্যার বলেছিলেন, ‘আসবে আসবে, তাড়া কিসের!’’

পরীক্ষার দু’দিন আগে, স্কুলের এক কর্মী একটা চিরকুটে তার রোল নম্বর লিখে দিয়েছিলেন, ব্যাস।

চিরকুটে তা হলে কার রোল নম্বর লেখা ছিল? প্রধানশিক্ষক বলছেন, ‘‘ওই চিরকুটে তো গত বছরের একটা রোল নম্বর লেখা।’’ তা হলে ছেলেখেলা করে তাকে ওই নম্বরই বা লিখে দেওয়া হল কেন? এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তরই অবশ্য স্কুল দেয়নি। মেলেনি স্কুল পরিদর্শক পূরবী বিশ্বাস দে’র কোনও সদুত্তরও। তিনি বলেন, ‘‘কই স্কুল বা ওই ছাত্রী তো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি!’’

এর দায় কী ধীমানবাবু নিচ্ছেন?

ফোনের ওপারে চুপ করে থেকেছেন তিনি। গেটের ওপারে যেমন স্তব্ধ হয়ে থেকেছে প্রতিমা।

Madhyamik Pariksha Admit Card
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy