Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিজের বিয়ে রুখে পড়ায় মন দিচ্ছে রুমি

কয়েক বছর আগে নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জুলেখা খাতুনের বিয়ে ঠিক করেছিলেন পরিবারের লোকজন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

বহরমপুর থেকে খড়গ্রামের দূরত্ব জানে না নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে শোনেনি জুলেখা খাতুনের কথাও। কিন্তু শনিবার নিজের বিয়ে নিজে ভেস্তে দিয়ে জুলেখার সঙ্গে তার নামও শোনা যাচ্ছে। কোথাও যেন জুলেখার আচরণের সঙ্গে মিল রয়েছে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীরও!

কয়েক বছর আগে নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জুলেখা খাতুনের বিয়ে ঠিক করেছিলেন পরিবারের লোকজন। সেই সময়ে জুলেখা পড়াশোনার করার কথা জানিয়ে বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার আর্জি জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলের কাছে। পরে নবগ্রাম ব্লক প্রশাসনের সহায়তায় ভেস্তে যায় সেই বিয়ে। এর পরে ভূগোলের ল্যাবরেটরীতে জুলেখার থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার থাকা-খাওয়ার যাবতীয় ভার বহণ করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ব্লক প্রশাসন। সেখানে থেকে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে জুলেখা ভর্তি হন বহরমপুরের মহারানি কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। তার আগে পরিবার-আত্মীয় সকলের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে বহরমপুরে সরকারি একটি হোমে থেকে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ভাল নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

খড়গ্রােমর শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির রুমি খাতুনও শনিবার স্কুলের শিক্ষিকা শ্যামলী বাগচীকে বাড়ি থেকে জোর করে তার বিয়ে দেওয়ার কথা জানায়। এর পরেই স্কুলের তরফে যোগাযোগ করা হয় খড়গ্রামের বিডিও সৌরভ ধল্লের সঙ্গে। বিডিও ওই বিয়ে বন্ধ করে দেন।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলছেন, ‘‘ওই পরিবারের পক্ষে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব নয়। নয় ছেলেমেয়ের মধ্যে রুমি ছোট। বাকি সকলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই রুমির বিয়ের ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করেন তার বাবা-মা। কিন্তু রুমি পড়াশোনা করবে বলে গোঁ ধরে। তার ইচ্ছে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের হাল ফেরানোর। কিন্তু সে কথা শুনতে চাননি তার বাবা-মা। রুমিকে না জানিয়ে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছিল তার পরিবার।’’

রুমির বাবা পেশায় দিনমজুর শেরাফত শেখ বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে সংসার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা। এখন সং‌সার চালাব না মেয়ের পড়াশোনার খরচ মেটাব! তাই মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলাম।”

পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা জানতে পেরে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “এক জন ছাত্রী পড়াশোনা করতে চাইছে আর তার পরিবার আর্থিক সঙ্গতির জন্য বিয়ে দিচ্ছে, এটা ঠিক নয়। ওই ছাত্রীর পড়াশোনার জন্য যাবতীয় দায়িত্ব আমরা নেব।” বিডিও সৌরভ ধল্ল বলেন, “ওই ছাত্রীর পড়াশোনার ব্যাপারে প্রশাসন তার পাশে আছে। ওই ছাত্রীকে কন্যাশ্রী ও সংখ্যালঘু বৃত্তি দেওয়ার ব্যাপারেও চেষ্টা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teenage Marriage Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE