Advertisement
E-Paper

ফাটল ঈশ্বর গুপ্ত সেতুতে

দু’বছরে তৃতীয়বার ফাটল ধরল কল্যাণী এবং বাঁশবেড়িয়ার সংযোগকারী ঈশ্বর গুপ্ত সেতুতে। সেতুর মাঝ বরাবর তৈরি হওয়া ইঞ্চি দু’য়েকের ফাটল সোমবার ফের আর এক দফা আতঙ্ক তৈরি করে। এর ফলে এ দিন দুপুর থেকেই সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৯
সেতুর ফাটল ধরা অংশ

সেতুর ফাটল ধরা অংশ

বারবার তিন বার।

দু’বছরে তৃতীয়বার ফাটল ধরল কল্যাণী এবং বাঁশবেড়িয়ার সংযোগকারী ঈশ্বর গুপ্ত সেতুতে। সেতুর মাঝ বরাবর তৈরি হওয়া ইঞ্চি দু’য়েকের ফাটল সোমবার ফের আর এক দফা আতঙ্ক তৈরি করে। এর ফলে এ দিন দুপুর থেকেই সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মেরামতির জন্য গত দু’বছরে সেতু বন্ধ রাখা হয়েছে বার বার। প্রথমবার ফাটল ধরার পর থেকে বেশিরভাগ সময় সেতুতে ছোট গাড়িই চলাচল করেছে। মাত্র দু’সপ্তাহ আগে ভারী গাড়ি চলাচলে ছাড়পত্র দিয়েছিল পূর্ত (সড়ক) দফতর।

হুগলি, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার সড়ক পরিবহণের অন্যতম মাধ্যম এই সেতু। কল্যাণী এবং ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কাঁচামাল এবং পণ্য পরিবহণের জন্য এই সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ভারী গাড়ি চালু হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ দিন ফের তা বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ তাঁরা। বার বার সেতুতে ফাটল ধরা পড়ায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, কয়েকদিন কিছু ভারী গাড়ি চলাচলেই যদি সেতুতে ফাটল ধরে, তা হলে সেই সেতু কতটা নিরাপদ?

ভোগান্তির শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বরে। সেতুর কল্যাণী প্রান্তের ২ এবং ৩ নম্বর স্তম্ভের মাঝের অংশে ফাটল ধরা পড়ে। একদিন পরে একটি অংশ বসে যাওয়ায় সেতু বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইস্পাতের বেলি ব্রিজ তৈরি করে ছোট গাড়ি চলাচল শুরু হয়। মেরামতির কাজ শেষে তিন মাস পরে সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়।

তিন মাসের মধ্যে সেতুর স্তম্ভে চিড় ধরে। তার পর মেরামতির জন্য ফের বন্ধ করে দেওয়া হয় সেতু। মাস খানেক পরে সেতু চালু হলেও ভারী গাড়ি চলাচলে অনুমতি মেলেনি। দু’সপ্তাহ আগে ভারী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরেই বালি-পাথর এবং পণ্যবাহী গাড়ি চালচল শুরু হয়।

সোমবার দুপুরে সেতুর চার এবং পাঁচ নম্বর স্তম্ভের অংশের ফাটল কয়েকজন গাড়ি চালকের নজরে পড়ে। টোল প্লাজার কর্মীরা পুলিশ এবং পূর্ত দফতরে খবর দেন। দুই জেলার পুলিশ দু’পার থেকেই গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মীরা সেতু পরীক্ষা করতে পৌঁছন। সঙ্গে সঙ্গে হাইট বার বসিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকী, খালি লরিগুলিকেও সেতুতে উঠতে দেওয়া হয়নি। তবে, মালবাহী ও যাত্রীবাহী ছোটগাড়ি চলছে নির্বিঘ্নেই।

পূর্ত দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ওয়েস্টার্ন জোন) দেবব্রত চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘রবিবার রাতে ৩২ চাকার কয়েকটি ওভারলোডেড গাড়ি ওই সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ায় গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ফের সেতু মেরামতের কাজ শুরু করেছি।’’

প্রশাসন ও পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, সেতু খুলে দেওয়া হলেও ‘ওভারলোডেড’ যান চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিলই। প্রথম কয়েকদিন সবকিছু ঠিকঠাক চললেও রবিবার বেশি রাতে নদিয়ার দিক থেকে কয়েকটি ৩২ চাকার ট্রেলার সেতু দিয়ে হুগলির দিকে আসে। প্রাথমিক তদন্তে পূর্ত দফতরের কর্তাদের অনুমান, ওই বাড়তি ভার ফের মারাত্মক ক্ষতি করে সেতুটির। তার ফলে যে অংশ সারানো হয়েছে, তা কোনওক্রমে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু ক্ষতি হয়েছে সেতুর অন্য অংশ।

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেতুর রেলিংয়ের কাছে অন্তত চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি বসে গিয়েছে। সদ্য সারানো অংশটি রক্ষা পেয়েছে। তবে দ্রুত সেতু মেরামত করে তা যান চলাচলের উপযুক্ত করে দেওয়া হবে।’’

দু’পারের এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘সেতুর পরিস্থিতি যখন ভাল নয়, তখন পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি ছিল না কেন? অতি ভারী গাড়ি না উঠতে দিলে এই বিপর্যয় ঘটত না।’’

হালিশহরের বাসিন্দা অনিমা মণ্ডলের নিত্য যাতায়াত ওই সেতুর উপর দিয়ে। তাঁর ছেলের স্কুল হুগলিতে। এ দিন দুপুরে তিনি বাঁশবেড়িয়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে বলেন, ‘‘টানা দু’ বছর ধরে ভুগছি আমরা। সেতুতে ভারী যান চলাচল নতুন করে শুরু হওয়া ভেবেছিলাম বিপদ হয়তো কাটল। কিন্তু, এখন দেখছি এই সেতু দিয়ে যাতায়াত মানেই বিপদ।’’

Accident Crack Iswar Gupta Setu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy