E-Paper

রাস্তায় মৃতদেহ রেখে অবরোধ

রবিবার রাতে শিশুটির মৃতদেহ আড়ংসরিষার বাড়িতে এনে বরফ দিয়ে রেখে দেওয়া হয়। বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হওয়ার পরেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৫৩
চাপড়ার আরংসরিষায় মৃত বালকের দেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ এলাকাবাসীর । নদিয়ার চাপড়ায়।

চাপড়ার আরংসরিষায় মৃত বালকের দেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ এলাকাবাসীর । নদিয়ার চাপড়ায়। ছবি : সংগৃহীত।

আট বছরের ছেলে খুন হওয়ার পর থেকেই তার মাকে দোষারোপ করছিলেন পরিবার ও গ্রামের কিছু লোকজন। যদিও প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন মা আসমনি বিবি। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যার সঙ্গে তিনি থাকতে গিয়েছিলেন, সেই হেদায়াতুল্লা শেখের ‘স্বরূপ’ বুঝতে তাঁর দেরি হয়েছে এবং তার জন্য চরম মূল্য চোকাতে হয়েছে।

রবিবার হাওড়ায় ছেলের দেহের ময়নাতদন্তের পরে তিনি আর আড়ংসরিষা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে পারেননি। বাপের বাড়িতে রয়েছেন। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে হেদায়াতুল্লা তাঁকেও বেধড়ক মারধর করে। শরীর ও শোকের আঘাতে তিনি জর্জরিত বলে তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন সোমবার জানিয়েছেন।

রবিবার রাতে শিশুটির মৃতদেহ আড়ংসরিষার বাড়িতে এনে বরফ দিয়ে রেখে দেওয়া হয়। বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হওয়ার পরেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হেদায়াতুল্লার কঠিন শাস্তি দাবি করতে থাকে গোটা গ্রাম। সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ বালকের মৃতদেহ করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কে রেখে অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বালকটির বাবা সিপাত শেখের সঙ্গে মা আসমনি বিবির সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ ছিল না। বেশ কিছু বছর ধরে সিপাত বাইরে নানা জায়গায় কাজ করছেন। কখনও মুর্শিদাবাদের বহরমপুর তো কখনও কলকাতার হোটেলে কাজ করেছেন তিনি। বছরখানেক আগে তিনি বাড়়ি ফেরেন। সেই সময়ে তিনি স্ত্রীর নামে পৈতৃক ভিটেবাড়ির জমি লিখেও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। প্রায় আট মাস আগে সিপাত আবার বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তিনি ফের বিয়েও করেছেন বলে আসমনির দাবি। তাঁর সঙ্গে বর্তমানে বাড়ির কারও কোনও যোগাযোগ নেই।

স্বামী চলে যাওয়ার পর আসমনি বাড়ির কাছেই একটি নার্সিং হোমে আয়ার কাজ নেন। সেখানেই তিনি কাজ করছিলেন এত দিন। কিন্তু তাঁর দাবি, মাস দুয়েক আগে শ্বশুরবাড়িতেও সমস্যা শুরু হয়। কারণ সিপাত যে তাঁর জমি আসমনির নামে লিখে দিয়েছেন তা জানাজানি হয়ে যায়। সিপাতের ভাই থাকেন দুবাইয়ে। আসমনি তাঁর ঘরেই থাকতেন। জমির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তাঁকে সেই ঘর ছাড়তে হয়। তার পর থেকে আসমনি মালিপ্রতাপ গ্রামে বাপের বাড়িতেই থাকছিলেন। সেখান থেকেই নার্সিং হোমে কাজ করছিলেন।

এরই মধ্যে আসমনির ছেলেকে গ্রামের মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেওয়া হয়। ছেলেকে সেখানে দেওয়া-নেওয়া করতে গিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক হেদায়াতুল্লার সঙ্গে তাঁর আলাপ ও ক্রমে ঘনিষ্ঠতা হয়। বিষয়টি জানার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ হেদায়াতুল্লাকে বরখাস্ত করেন। তার পরেও দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ থেকেই গিয়েছিল। সিপাত শেখের কাকা সুরজ শেখ বলেন,“আমাদের ছেলে যখন চলে গিয়েছে তখন আসমনি বিয়ে করতেই পারে। আমাদের তাতে কোনও অপত্তি ছিল না। কিন্তু ছেলেটা তো আমাদের। ওকে আমরা মানুষ করব বলেছিলাম। ওকে তো আমাদের কাছে রেখে যেতে পারত। তা হলে তার এই ভয়ঙ্কর মৃত্যু হত না।” আসমনি জানিয়েছেন, স্নেহের বশেই তিনি ছেলেকে কারও কাছে ছেড়ে যেতে চাননি। তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। হেদায়াতুল্লাই তাঁর ছেলেকে খুন করেছে বলে এ দিনও তিনি দাবি করেছেন। বর্ধমানের খানা জংশন থেকে ফিরে এক দিন তিনি চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আসমনির দাদা রফিকুল শেখ বলেন, “বোনের অবস্থা খুবই খারাপ। তেমন হলে ওকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।” তাঁর কথায়, “বোনের মুখে সব শুনে আমরা লিলুয়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছি। আশা করছি, তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

chapra Road Block

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy