Advertisement
১৯ মে ২০২৪
CAA NRC PLASSEY

গাঁ থেকে রসদ, ছবি-স্লোগানে মুখর ধর্না

শুক্রবার চোদ্দো দিন পূর্ণ করল পলাশির সিএএ-এনআরসি বিরোধী ধর্নামঞ্চ। দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেল জেলা সদর থেকে অনেক দূরে সংগঠিত এই আন্দোলন। এই ধর্না-অবস্থান এখন আর শুধু এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নানা জায়গা থেকে উদারপন্থী শিল্পী ও সংস্কৃতিমনস্ক লোকজন এসে যোগ দিচ্ছেন। ধর্নায় বসা মানুষদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও এসে যোগদান করছে। 

ধর্নার ফাঁকে দুপুরের খাওয়া। শুক্রবার পলাশিতে। নিজস্ব চিত্র

ধর্নার ফাঁকে দুপুরের খাওয়া। শুক্রবার পলাশিতে। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপ পাল 
পলাশি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪৮
Share: Save:

এক শিল্পী ছবি আঁকায় মগ্ন। তাঁর আশপাশে কৌতূহলী চোখ।

ধর্নামঞ্চের দিকে এগো‌লেই ফ্লেক্সে বড়-বড় করে লেখা কাজী নজরুল ইসলামের ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতার পঙ‌্ক্তি— ‘‘ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর! উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার’। পাশেই বড় করে নেতাজি ধর্নামঞ্চের ফ্লেক্স। মঞ্চের এক দিকে মহাত্মা গাঁধী, অন্য দিকে অম্বেডকরের ছবি।

শুক্রবার চোদ্দো দিন পূর্ণ করল পলাশির সিএএ-এনআরসি বিরোধী ধর্নামঞ্চ। দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেল জেলা সদর থেকে অনেক দূরে সংগঠিত এই আন্দোলন। এই ধর্না-অবস্থান এখন আর শুধু এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নানা জায়গা থেকে উদারপন্থী শিল্পী ও সংস্কৃতিমনস্ক লোকজন এসে যোগ দিচ্ছেন। ধর্নায় বসা মানুষদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও এসে যোগদান করছে।

কালীগঞ্চের ছোটকুলবেড়িয়া থেকে এ দিন এসেছিলেন চিত্রকর কলিমউদ্দিন শেখ। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে তিনি নানা ছবি আঁকেন। প্রতিটি ছবিই মঞ্চের সামনে টাঙিয়ে রাখা হয়। কলিমউদ্দিনের মতে, ‘‘প্রত্যেকের এখানে এসে এই কালা আইনের বিরোধিতা করা দরকার। আমি শিল্পী হিসেবে আমার ভাষায় আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি চাই, নানা শিল্পীরা এসে এঁদের মনোবল বাড়িয়ে তুলুন।’’ এর আগে স্থানীয় বাচিক শিল্পী মধুমিতা গঙ্গোপাধ্যায় এসে মঞ্চে আবৃত্তি করে গিয়েছেন বলে স্থানীয় মানুষজনই জানান।

এ দিন একটু বেলা গড়াতেই আকাশ তার মধ্যেও ভিড় জমছিল ধর্নামঞ্চে। পলাশিপাড়ার শ্যামনগর থেকে জন ষাটেক লোক এসে ধর্নায় বসা আন্দোলনকারীদের জন্য খাবার তৈরির আয়োজন শুরু করে দেন। সাতসকালে পলাশির বাজার থেকে কেনাকাটা করে মঞ্চের পাশে একটা বড় ছাদের এক কোণে রান্নার ব্যবস্থা করে ফেলা হয়। ভাত, ডাল, সব্জি, মাংস আর চাটনি দিয়ে দুপুরের খাওয়া সারেন শ’দুয়েক মানুষ।

মঞ্চ সূত্রে জানা যায়, ভিড়ের একটা আন্দাজ বুঝে প্রতিদিনই রান্না হয়। সাধারণত খাবারের তালিকায় থাকে ভাত, ডাল, ডিমের ঝোল। এ দিনের এই খাওয়া-দাওয়ার পুরো খরচ দিয়েছেন শ্যামনগর গ্রামের মানুষ। সেখানকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘এই আন্দোলন সকলের জন্য। আমাদের ভাইয়েরা চোদ্দো দিন ধরে সকলের জন্য আন্দোলন করছেন আর সেখানে আমরা আসব না, এটা হয়? ওঁদের পাশে দাঁড়াতেই আমাদের গ্রামের পক্ষ থেকে এই ছোট্ট ব্যবস্থা।’’

ধর্নামঞ্চের আহ্বায়ক ওয়াদ্দেস আলি বলেন, ‘‘দিনভর ধর্নায় বসা মানুষজনের খাবার-দাবার কী ভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে প্রথম দিকে একটু চিন্তা ছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, মানুষ নিজে থেকেই টাকা দিয়ে যাচ্ছে। নানা গ্রাম থেকে টাকা তুলে তা মঞ্চে পাঠানো হচ্ছে। আবার এক-এক দিন খাওয়া-দাওয়ার গোটা খরচই কোনও গ্রাম বহন করছে। যেমন আজ শ্যামনগর করল।’’ আনিসুর বলেন, ‘‘এর পরেও আমরা আবার আসব।’’

বিকেল গড়াতেই জানকীনগর থেকে কয়েকশো লোকজন মিছিল করে ধর্নামঞ্চে এসে যোগদান করেন। তার কিছু ক্ষণ পরে কালীগঞ্জের ছোটকুলবেড়িয়া গ্রাম থেকে কয়েক হাজার লোক চলে আসে। ধর্নামঞ্চে ভিড় উপচে পড়ে। মুহুর্মুহু স্লোগান উঠতে থাকে। ভিড়ের চোটে মঞ্চের পাশে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়িঘোড়া আটকে যায়। পরে পুলিশ এসে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

ওই ভিড়ের মধ্যেই ছিলেন বেগুন মল্লিক, দেড় বছরের শিশু কোলে এসেছেন। আবার ছোটকুলবেড়িয়া থেকে এসেছিলেন জিন্নুর রহমান নামে সত্তর ছুঁই-ছুঁই এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘‘গাঁয়ের সকলে আসছে শুনে নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না, ওদের সঙ্গে চলে এলাম। এ লড়াইতে তো যোগ দিতেই হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAA NRC PLASSEY
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE