Advertisement
E-Paper

ভিটে হারানোর শঙ্কা অতীতে ফেরাচ্ছে ওঁদের

কানাইবাবু বলছেন, “ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া খুবই কষ্টের। যাঁরা হারাননি, তাঁরা বুঝবেন না।”

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০২:২৭
নিজের বাড়িতে কৃষ্ণা পাল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের বাড়িতে কৃষ্ণা পাল। —নিজস্ব চিত্র।

এক সময়ে বরিশালের পটুয়াখালির বাউফুলের বাসিন্দা ছিলেন কানাই দাস। অষ্টাশির বৃদ্ধ জানান, দেশভাগের সময়ে বরিশাল থেকে চলে আসেন এ পারে। আশ্রয় নেন রানাঘাটের কুপার্স ক্যাম্পে। জানাচ্ছেন, নোংরার মধ্যে বাস করতে হত। সরকার থেকে দিত চাল, ডাল। নিজেদেরই রান্না করতে হত। সেখানেই মারা যায় এক ভাই আর এক বোন। কানাইবাবু বলছেন, “ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া খুবই কষ্টের। যাঁরা হারাননি, তাঁরা বুঝবেন না।”

এক সময় ছিন্নমূল হয়েছিলেন ওঁরা। বাধ্য হয়েছিলেন ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিতে। সেই ওঁরাই আজ নতুন করে ভিটে হারানোর শঙ্কায়। শান্তিপুরের ফুলিয়া টাউনশিপ গ্রাম পঞ্চায়েত এক সময়ে গড়ে উঠেছিল এই উদ্বাস্তুদের নিয়েই। আজ থেকে অর্ধ শতাব্দী আগে, এ পারে আসা ওঁদের বয়স হয়েছে। স্মৃতিও ঝাপসা হয়েছে। তবে দেশভাগের যন্ত্রণা মলিন হয়নি কারওরই।

যেমন, পালপাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণা পাল। কুড়ি বছরের তরুণী মা ছোট্ট দুই সন্তানকে বুকে আঁকড়ে এ পারে এসেছিলেন। কৃষ্ণাদেবী বলছেন, “চারদিকে তখন খুবই খারাপ অবস্থা। প্রথমে সুরেশ্বরে ননদের বাড়িতে। এর পর জলপথে গোয়ালন্দ।’’ স্টিমার ঘাটেও অগুনতি মানুষের ভিড়। বেশ ক’দিন ঘাটেই অপেক্ষা। তার পর পেয়েছিলেন স্টিমার। সেখান থেকে গোয়ালন্দ হয়ে ট্রেনে চেপে এ পারের বানপুর।

দিন কয়েক পরে পক্সে মারা যায় সাত মাসের মেয়ে। স্বামীও মারা গিয়েছেন। ফের কি ভিটে-ছাড়া হওয়ার আতঙ্ক গ্রাস করছে তাঁকে? অশীতিপর বৃদ্ধার জবাব— “এক বার ভিটে-ছাড়া হয়েছি। সেই কষ্ট যেন আর কেউ না পায়।”

তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে নদিয়ার ফুলিয়ায় এসে বসবাস শুরু করেছিলেন সব-হারানো মানুষগুলো। তবে হারাননি লড়াইয়ের শক্তি। এ পারে এসে নিজেদের মতো করে জীবন শুরু করেছিলেন ওঁরা। আজ ওঁদের অনেকেই প্রতিষ্ঠিত। তবে সাম্প্রতিক ঘটনা নতুন করে ছিন্নমূল অতীতে ফেরাচ্ছে।

পালপাড়ারই আরও এক বাসিন্দা বেবি মণ্ডল থাকতেন কুষ্টিয়ার হোগলায়। যুদ্ধের ভয়াবহতায় পাড়ি দেন এ পারে। বাবা ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁকেও মারার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এর পরই ভিটে ছাড়েন তাঁরা। চার বোন, বাবা, মা, দাদার সঙ্গে টানা দু’দিন হেঁটে এসে পৌঁছান স্টিমার ঘাটে। কৃষ্ণনগর স্টেশনে চুরি হয়ে যায় সব টাকা। বেবি বলছেন, “মায়ের সোনার টিপ বিক্রি করে খাবার কিনি।’’ নিজেই বলছেন, “আমরা তো এখানকারই নাগরিক। এখানেই থাকি।” রানাঘাটে এক টালির ঘরে আশ্রয় পাওয়া পরিবার থিতু হয়েছিল এ পারে। দুঃস্বপ্ন মুছে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন বেবি। তা-ও অতীত থিতু হতে দিচ্ছে কই!

কানাইবাবুরা জানেন, উদ্বাস্তু হওয়ার কষ্ট। সেই কষ্ট ফের দানা বাঁধছে মানুষগুলির চোখে-মুখে। ভিটে হারানোর শঙ্কায়!

Assam NRC NRC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy