দিবালোক: নবগ্রামের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
সবে নতুন মোটরবাইকটা রাস্তায় বের করে স্টার্ট দিয়েছেন ডোমকলের কুপিলা গ্রামের রাজা বিশ্বাস। মা হাঁ-হাঁ করে উঠলেন, ‘‘ওরে খোকা! বাতিটা নেভা!’’
কোন লায়েক ছেলেই বা মায়ের কথায় আমল দেয়? রাজাও দেননি। কিন্তু দু’চাকা গড়াতেই মাতব্বরদের মাচা থেকে উড়ে এল— ‘‘আজকাল দিনেও কম দেখছ নাকি বাবা?’’ শুধু কি এই? একটু করে যাচ্ছেন আর হাত দিয়ে ইশারা করে লোকে দেখাচ্ছে ‘হেডলাইট অন’।
মাথায় হেডলাইট দপদপ করতে থাকে রাজার। আচ্ছা ফ্যাচাং হল নতুন বাইক কিনে! স্টার্ট দিলে নিজেই জ্বলে উঠছে হেডলাইট, দিন নেই রাত নেই, সুইচের বালাই নেই। স্টার্ট বন্ধ করলে তবেই গিয়ে সে নিভবে! কৃষ্ণনগরের গঙ্গাবাসের সাবির শেখও মাথার চুল ছিঁড়ছেন। ‘‘রোজ কথা শুনতে-শুনতে পাগল হয়ে যাচ্ছি মশাই! মনে হচ্ছে, এটা বিক্রি করে একটা পুরনো বাইক কিনে ফেলি!’’ কিন্তু তা-ই বা কী করে হবে? শো-রুমে গিয়ে শুনে এসেছেন, এখন থেকে এই বাইকই চলবে। আইন হয়ে গিয়েছে।
পুরো মিথ্যে নয়। সেন্ট্রাল মোটর ভেহিকেলস রুল বলছে, আজ, ১ এপ্রিল থেকে দেশে যত মোটরবাইক তৈরি হবে, ‘অটোম্যাটিক হেডল্যাম্প অন’ (এএইচও) ব্যবস্থা থাকতে হবে তাতে। অর্থাৎ বাইক স্টার্ট তো লাইট স্টার্ট। ২০০৩ সালেই ইউরোপে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছে। এতে নাকি অনেক আগেই থেকেই বাইক এগিয়ে আসতে দেখা যায়। দুর্ঘটনা কমে। আর রোজ যত দুর্ঘটনা ঘটে, তার মধ্যে বাইকই তো বেশি। সারা পৃথিবীতেই।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুক্রবারই পুরনো প্রযুক্তির (বিএস৩) বাইক-স্কুটি বিক্রি শেষ হয়ে গেল। শনিবার থেকে শুধু নতুন প্রযুক্তির (বিএস৪) বাইককেই রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। পুরনো বাইক বিক্রি করতে প্রায় চৈত্র সেলের ঢঙে মুড়িমুড়কির মতো ছাড় দিল যত শো-রুম। কিন্তু তার মধ্যেও হেডলাইট নিয়ে ঘ্যানঘ্যানানির শেষ নেই। কৃষ্ণনগরের শোরুম মালিক সমীর পাল থেকে ডোমকলের ডিলার সাজ্জাদ হোসেন খদ্দেরদের বুঝিয়ে ক্লান্ত। সাজ্জাদ বলেন, ‘‘এক জন তো দু’দিনের মধ্যে নতুন বাইক ফিরিয়ে পুরনো মডেল নিয়ে গেলেন!’’
দোষ নেই। সেই কবে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার লিখে গিয়েছিলেন, ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি/ আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি।’ তার ভাবসম্প্রসারণ লিখে-লিখে বাঙালি বড় হল। এখন প্রযুক্তির দোহাই দিলে চলবে? ডোমকল মাঠপাড়ার জাকির বিশ্বাস তাই বাইক কিনেই মেকানিক দিয়ে হেডলাইটের সুইচ বানিয়ে নিয়েছেন। ‘‘দিব্যি আগের মতোই অফ-অন হচ্ছে,’’ হাসছেন জাকির।
কিন্তু পুরনো বাইকের মালিকেরা অনেকে পড়েছেন মহা ফাঁপরে। এই যদি আইন হয়ে থাকে, তাঁদের বাইক কি এপ্রিল ফুলের দিন থেকেই অচল? নাকি রাস্তায় বেরোতে গেলে সুইচ টিপে জ্বেলে রাখতে হবে হেডলাইট? না হলে কি পুলিশ ধরে ফাইন করবে? এ হেন আশঙ্কায় কেউ কেউ ইতিমধ্যে হেডলাইট জ্বেলেই ঘুরছেন।
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর অবশ্য বলছে, হেডলাইট জ্বেলেই চলতে হবে এমন নির্দেশ এখনও তাঁদের কাছে আসেনি। কাজেই ধরপাকড়েরও প্রশ্ন আসে না। পুলিশও তাই বলছে।
আর যদ্দিন তা না আসে, ‘যে জন দিবসে’ মেনে চলা যেতেই পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy