Advertisement
E-Paper

আত্মহনন নয়, শুনল ছাত্রছাত্রীরা

রাতে খাবার সময়ে মেয়ের আর সাড়া মেলেনি। ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায় মায়ের শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে মেয়ে। বিছানার উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বই-খাতা। তেহট্টের ওই কিশোরীর মা শুধু বলতে পেরেছিলেন, ‘‘ওইটুকু মেয়ে যে এই সামান্য কারণে নিজেকে শেষ করে দেবে, ভাবতেই পারিনি।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০১
সতর্ক: স্কুলে গিয়ে সচেতনতার পাঠ। রানিনগরে। —নিজস্ব চিত্র।

সতর্ক: স্কুলে গিয়ে সচেতনতার পাঠ। রানিনগরে। —নিজস্ব চিত্র।

ভরসন্ধেয় পাশের বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়েছিল বছর চোদ্দোর মেয়েটা। অনেকক্ষণ ডেকেও মেয়ের সাড়া পাননি মা। বাড়ি ফেরার পরে মেয়ের পিঠে দু’ঘা বসিয়ে দেন মা।

রাতে খাবার সময়ে মেয়ের আর সাড়া মেলেনি। ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায় মায়ের শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে মেয়ে। বিছানার উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বই-খাতা। তেহট্টের ওই কিশোরীর মা শুধু বলতে পেরেছিলেন, ‘‘ওইটুকু মেয়ে যে এই সামান্য কারণে নিজেকে শেষ করে দেবে, ভাবতেই পারিনি।’’

যেমন ভাবতে পারেননি নবদ্বীপ বকুলতলা গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা সুপর্ণা সরকারও। জয়েন্টে এন্ট্রান্সে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েও তার অবসাদ কাটেনি। র‌্যাঙ্ক হয়নি মনের মতো। নিজেকে শেষ করে দিয়েছিল মেয়েটা। তার অভিঘাতে মনের গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলেন সুপর্ণাও। দীর্ঘদিন কাউন্সেলিং করিয়ে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছেন।

সুপর্ণার নিজের অভিজ্ঞতা বলছে, আত্মহত্যার প্রবণতা সাধারণত তীব্র হয় বয়ঃসন্ধির টালমাটাল সময়টায়। বুকের মধ্যে জমে পাহাড় হতে থাকা গোপন ব্যথা আর অভিমান কখন যে তাদের পায়ের নীচ থেকে মাটি সরিয়ে নেয়, টেরও পান না কাছের মানুষেরা। ওই সময়টায় তাদের দরকার এমন কেউ, যিনি তাদের মন বুঝতে পারেন, একবগ্গা জ্ঞান না দিয়ে বন্ধুর মতো বোঝাতেও পারেন ভালমন্দ।

তাই শুক্রবার দুপুরে কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে জেলার সর্বশিক্ষা মিশন যখন কর্মশালার আয়োজন করে, সুপর্ণাও সেখানে হাজির হয়ে যান। ছিলেন কৃষ্ণনগর ক্যাথিড্রাল চার্চের ফাদার, মনোবিদ জেমস কুলিকলও। কৃষ্ণনগর ও তার আশপাশের ২৪টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সেখানে ডাকা হয়েছিল। বিভিন্ন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়ে তাদের বোঝানো হয়, প্রতিকূলতার সামনে দুমড়ে না গিয়ে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই দিতে হয়।

দেখে-শুনে অনেকটাই চোখ খুলে গিয়েছে মহারানি জ্যোতির্ময়ী গার্লস হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অঙ্কিতা ঘোষ বা কৃষ্ণনগর এ ভি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সিদ্ধার্থ পালেদের। তাদের কথায়, ‘‘এই প্রথম বুঝলাম, জীবন কতটা দামি। আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়। বন্ধুদের কেউ অবসাদে ভুগলেও সতর্ক করব।’’ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এসেছিলেন অভিভাবকেরাও। কঠিন সময়ে কী ভাবে সন্তানদের পাশে থাকতে হবে, তা তো তাঁদেরও বুঝে নিতে হবে। কথা প্রসঙ্গে ওঠে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ গেমের কথাও। ৫০ ধাপের যে গেমের শেষ ধাপ আত্মহত্যা। যার পাল্লায় পড়ে ১৩০টি ছেলেমেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অনুমান। এ দেশেও বেশ কয়েকটি এ রকম মৃত্যুর কথা শোনা গিয়েছে, যদিও ব্লু হোয়েলের প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু সাবধানের মার নেই। সুপর্ণার মতে, “নানা জটিলতা থেকে বেরোতে না পেরেই মারণ খেলা বেছে নিচ্ছে ছেলেমেয়েরা। এই সময়ে তাদের পাশে থাকাটা খুবই জরুরি।”

বহরমপুরের হিকমপুর হাইস্কুল বা কৃষ্ণনগরের দোগাছি হাইস্কুলে সম্প্রতি পড়ুয়াদের বলা হয়েছে, তারা যেন কোনও অপরিচিত গ্রুপে না ঢোকে, ঢুকলেও যেন সতর্ক থাকে। রানিনগর কাতলামারি হাইস্কুলেও পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মিলে শিবির করেছে। বহরমপুরের জেএন অ্যাকাডেমি বা লালবাগেপ নবাব বাহাদূর’স ইনস্টিটিউশনও শিবির করছে।

নদিয়ার সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প আধিকারিক সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পড়ুয়াদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা এবং ব্লু হোয়েল, দুই নিয়েই আমরা চিন্তিত। তাই এই কর্মশালা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও করা হবে।”

Suicide Awareness Programme
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy