পুর-প্রতিনিধিদের সঙ্গে গীতারানি সাহানা (মাঝে)। বেলডাঙায়। নিজস্ব চিত্র
এক একটা দিন বড্ড রঙিন! এই যেমন নতুন বছরের পয়লা দিনটা। বছর পঁচাশির গীতারানি সাহানার সকালটা শুরু হয়েছিল আর পাঁচটা আটপৌরে সকালের মতোই। মঙ্গলবার ফালি বারান্দার আলসে রোদ্দুরে বসে তিনি চা খাচ্ছিলেন।
ঠিক তখনই বেলডাঙা শহরের পুরনো পুরসভার গলির সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলেন কয়েক জন। তাঁদের হাতে লাল গোলাপ, জন্মদিনের কার্ড ও একটা বড় চকলেট। বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। বাধা দিলেন আগন্তুকেরাই, ‘‘না ঠাকুমা, ওঠার দরকার নেই। আমরাই আসছি তোমার কাছে।’’ গীতারানি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগন্তুকেরা জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে, ‘‘শুভ জন্মদিন ঠাকুমা। এই নাও তোমার উপহার।’’
স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে বিড়বিড় করেন বৃদ্ধা, ‘‘আমার জন্মদিন!’’ তার পরে বেশ কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা। বৃদ্ধার দু’চোখ ভিজে যায়। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে তিনি জানতে চান, ‘‘কত দিন পরে তোমরা আমার জন্মদিনটা মনে করিয়ে দিলে। আমি নিজেই তো ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাছা, তোমরা জানলে কী করে?’’ বেলডাঙা পুরসভার ওই কর্মীরা তাঁকে বলেন, ‘‘আমরা সব জানি। তোমার তো প্রেসার আছে। রোদে একটানা বসবে না কিন্তু।’’
পুরকর্মীরা রওনা দেন পরের গন্তব্যে। বৃদ্ধা অপলক তাকিয়ে থাকেন তাঁদের চলে যাওয়া পথের দিকে। যে পথ তাঁকে নিয়ে যায় দূরের কোনও অতীতে। তাঁরও মনে পড়ে যায়, এমনই এক সকালের কথা। মনে পড়ে, এমনই এক প্রাণবন্ত মুহূর্তের কথা। মনে পড়ে কোনও প্রিয় মানুষের মুখ। ‘‘আর কত দিন আছি, জানি না। তবে মরার আগে বড্ড শান্তি পেলাম। এই বয়সে কেউ যে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবিনি’’, আবেগে এলোমেলো হয়ে পড়ে বৃদ্ধার কথা।
উদ্যোগটা বেলডাঙা পুরসভার। বছরের প্রথম দিন থেকেই প্রতিটা ওয়ার্ডে গিয়ে শহরের প্রবীণদের এ ভাবেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন পুরকর্মীরা। পুরপ্রধান ভরত ঝাওর বলছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে, প্রবীণরা একটা সময় নিঃসঙ্গ বোধ করেন। তাঁরা সকলের মধ্যে থেকেও একা হয়ে যান। তাঁদের একটু আনন্দ দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ। সারা বছর ধরেই আমাদের এই কাজ চলবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলডাঙার ১৪টি ওয়ার্ডে এই কাজের প্রস্তুতি শুরু হয় মাস ছয়েক আগে। ষাট বছর ও তার উপরে যাঁদের বয়স তাঁদের জন্মদিন খুঁজে বের করা হয়। এ দিন গীতারানি ছাড়াও পুরকর্মীরা সনৎ সাহা, নিতাই দাস, বাঁকারায় মণ্ডল, দীনবন্ধু দাসের বাড়িতে গিয়েও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন।
আপ্লুত প্রবীণেরা বলছেন, ‘‘বছরের প্রথম দিনে এটা আমাদের বড় প্রাপ্তি। শুধু ২৫ ডিসেম্বর নয়, বেলডাঙায় এখন সান্টা ক্লজ় আসবে প্রতিদিন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy