Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইস্তফা ৪০ চিকিৎসকের, জেএনএম স্তব্ধ, হয়রান দুঃস্থ রোগীরা

জেএনএম হাসপাতালে শ’খানেক পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-চিকিৎসক আছেন। তার মধ্যে যে ৪০ জন ইস্তফা দিয়েছেন, তাঁদের ইস্তাফাপত্র এখনই গৃহীত হবে না বলে জানিয়েছেন সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।

ফাঁকা জেএনএম হাসপাতাল চত্বর। ছবি: প্রণব দেবনাথ

ফাঁকা জেএনএম হাসপাতাল চত্বর। ছবি: প্রণব দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে জেলা হাসপাতাল। সব বিভাগে পুরোদস্তুর চিকিৎসাও চলছে। কিন্তু জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে অচলাবস্থা কাটার কোনও লক্ষণই নেই। উল্টে শনিবার পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। ইস্তফা দিয়েছেন ৪০ জন চিকিৎসক।

জেএনএম হাসপাতালে শ’খানেক পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-চিকিৎসক আছেন। তার মধ্যে যে ৪০ জন ইস্তফা দিয়েছেন, তাঁদের ইস্তাফাপত্র এখনই গৃহীত হবে না বলে জানিয়েছেন সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে ওঁরা ইস্তফাপত্র পাঠাচ্ছেন। তার পরে বিষয়টি কর্মসমিতিতে উঠবে। তবে কোনও পদাধিকারী ইস্তফা দেননি। বর্তমানে হাসপাতালের সঙ্গীন অবস্থায় পদাধিকারীরা চলে যেতে পারেন না।

ইস্তাফা দেওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন মনোরোগ বিভাগের শিক্ষক কৌস্তভ চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বহু বছর ধরেই চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নেই। হাসপাতালে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ নেই। চিকিৎসকদের বদলি নিয়েও অনিয়ম হয়। জেএনএমের ক্ষেত্রে ডাক্তারেরা আরও নানা প্রশাসনিক সমস্যায় পড়েন। তবে ইস্তফার প্রত্যক্ষ কারণ, এনআরএসের ঘটনা।’’ ইন্টার্নেরা হস্টেল খালি করে কেউ বাড়ি চলে গিয়েছেন, কেউ এনআরএস গিয়েছেন আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানাতে।

শল্য চিকিৎসা বিভাগের প্রধান সুবিকাশ বিশ্বাস কিন্তু বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতি এখনই বন্ধ হওয়া দরকার। প্রতি দিন বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন। অনেক সময়ে চিকিৎসক মুমূর্ষু রোগীর হাত ধরলেও তিনি শান্তি পান। ছাগল-গরুরও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর মানুষের সেই অধিকার থাকবে না? গত কয়েক দিন ধরে বহু মানুষ সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দুই পক্ষকেই এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই হবে।’’

শুক্রবার হরিণঘাটার নারায়ণপুরের বাসিন্দা বছর সাতচল্লিশের পবিত্র পালের স্ট্রোক হয়। তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্থানীয় জাগুলি হাসপাতালে। চিকিতসকেরা জানান, রোগীকে তখনই জেএনএমে নিয়ে যেতে হবে। তাঁর বাড়ির লোকজনের আক্ষেপ, সকালে জেএনএমে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, রোগীকে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু ভর্তি নেওয়া হয়নি। অগত্যা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কল্যাণী শহরের অন্তত চারটি নার্সিংহোম ঘুরেও রোগীকে ভর্তি করানো যায়নি। বেলা ১২টা নাগাদ তাঁকে জেএনএমে ফিরিয়ে এনে কাকুতি-মিনতি করে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু মিনিট পনেরোর মধ্যেই তিনি মারা যান।

শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয় হয়রানি। কোনও রকমে জরুরি বিভাগ চললেও সব বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন না। আউটডোর ছিল তালাবন্ধ। সগুনার বাসিন্দা কল্পনা ঘোষ এসেছিলেন মাথায় আর কানে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে। হাসপাতালে চিকিৎসা মিলছে না দেখে গাছের তলায় মাথা ধরে বসে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘আমি গরীব মানুষ। তবু কী করব, বাইরে ডাক্তার দেখাতে হবে। ভিজিট আর ওষুধ মিলিয়ে অন্তত হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে।’’

উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির বাসিন্দা দিবাকর মণ্ডল এসেছিলেন পড়শি যুবক, পেশায় রাজমিস্ত্রি আব্দুর শফিউরকে নিয়ে। শফিউরের নাক দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরছে। চিকিৎসা না পেয়ে তাঁকেও পিরে যেতে হয়।

জেএনএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন অন্তত হাজার জন রোগী আউটডোরে আসেন। এখন তা বন্ধ। ওয়ার্ডের অবস্থা আরও করুণ। কোনও রোগীকেই ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। যাঁদের টাকা রয়েছে, তাঁরা রোগী নিয়ে চলে যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে। আর গরিব মানুষেরা অসুস্থতা বয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। চিকিৎসকেরা কী করে এই ভূমিকা পালন করতে পারেন, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। অবস্থা কবে স্বাভাবিক হবে, তা অবশ্য সকলেরই অজানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE