Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে ভরাভাদই, লাঠিশাল, কালচিনি

জেলার কৃষকেরা জানান, ঝিঙেশাল, লাঠিশাল, রঘুশাল, দুধকলমা, দুধচাকলা, ভরাভাদই, কালচিনির মতো ধানের জাতগুলি এখন মাঠে দেখা যায় না বললেই চলে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১০:৩৬
Share: Save:

ভাপ ওঠা গরম ভাত। বাড়ির খাঁটি সর্ষের তেল, পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি আলু সেদ্ধ। আর তা দিয়ে মাখানো দেশি জাতের মোটা চালের আঠালো ভাত যেন অমৃত সমান ছিল। আবার ভোরবেলায় মোটা চালের জল ঢালা পান্তা ভাতের সঙ্গে কাচালঙ্কা, পেঁয়াজের স্বাদই বা কম ছিল কোথায়!

কিন্তু কালের নিয়মে সে সব আজ অতীত। মুর্শিদাবাদের কৃষকেরা বলছেন, এক সময়ে মুর্শিদাবাদে ঝিঙেশাল, লাঠিশাল, রঘুশাল, দুধকলমা, দুধচাকলা, ভরাভাদই, কালচিনির মতো জাতের ধান বিঘের বিঘের পর বিঘে জমিতে চাষ হত। আর সেই সব মোটা ধানের চালের ভাত শোভা পেত মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের খাবারের থালায়। আবার পায়েস বা ক্ষীর জাতীয় খাবারের জন্য চাষিরা নিজেদের জমিতে ছোটদানাযুক্ত সুগন্ধী চালের জন্য কামিনীভোগ, গোবিন্দভোগ, বাদশাভোগ জাতের ধানও লাগাতেন। কিন্তু সে সব ধান আজ আর মুর্শিদাবাদে চাষ হয় না বললেই চলে।

কৃষি দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্যের জোগান বাড়ানোর তাদিগে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। যার জেরে কৃষকেরাও সেদিকেই ঝুঁকেছেন। যার জেরে সে সব ধান আজ অতীত বলা যায়।

পুরনো দিনের নানা ধানের জাতের কথা মনে পড়ছে কৃষকদেরও। ৮০ ঊর্ধ্ব ডোমকলের আব্দুল বারি মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের সময়ে যে সব দেশীয় জাতের ধান চাষ হত তার উৎপাদন কম হত ঠিকই কিন্তু স্বাদ ছিল খুবই ভাল। কিন্তু এখনকার উচ্চ ফলনশীল ধানের চালের ভাতে কোনও স্বাদই নেই বলে মনে হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিশেষ করে গরমকালে দেশীয় জাতের ধানের চালের পান্তা ভাতের স্বাদ ছিল অতুলনীয়। আর এখনকার চালের পান্তা ভাতের স্বাদই নেই।’’

বহরমপুরের সহ কৃষি অধিকর্তা মিঠুন সাহা বলেন, ‘‘সুবজ বিপ্লবের আগে পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে শুধুমাত্র বর্ষাকালের ধান চাষ হত। সে সময় নানা দেশীয় জাতের ধান চাষ হত। উৎপাদন কম হলেও সে সব ধানের চালের ভাতের স্বাদে ছিল অতুলনীয়। কিন্তু নানা কারণে কৃষকদেরও উচ্চ ফলনশীল ধান লাগানোর দিকে ঝোঁক বেড়ে যায়। যার জেরে সে সব ধান আজ অতীত।’’

তবে তাঁর দাবি, ‘‘নদিয়ার ফুলিযায় কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হারিয়ে যাওয়া ধানের অনেক জাতকে ফিরিয়ে আনতে নানা পরীক্ষা চলছে।’’

জেলার কৃষকেরা জানান, ঝিঙেশাল, লাঠিশাল, রঘুশাল, দুধকলমা, দুধচাকলা, ভরাভাদই, কালচিনির মতো ধানের জাতগুলি এখন মাঠে দেখা যায় না বললেই চলে। ওই সব ধানের বিঘা প্রতি ৭-৮ মন ধান উৎপাদন হত। এখনকার উচ্চ ফলনশীল ধান বিঘা প্রতি ১৪-১৬ কুই্টাল উৎপাদন হয়। ফলে কৃষকেরা উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করছেন।

ছোট দানাযুক্ত সুগন্ধী চালের জন্য. বাদশাভোগ, গোবিন্দভোগ, কামিনীভোগ জাতের ধানগুলিও একসময় মুর্শিদাবাদে ভাল পরিমাণে চাষ হত। বিশেষ করে সাগরদিঘি। নবগ্রাম, খড়গ্রাম এলাকায় সে সব চাষ হত। এ ছাড়া কৃষকেরা নিজের বাড়ির জন্য অল্প করে হলেও সে সব জাতের ধান চাষ করতেন। কিন্তু এই সব জাতের ধান থেকে চাল তৈরির জন্য আলাদা মিলের প্রয়োজন। কিন্তু সে মিলের অপ্রতুলতা এবং বাজারজাত করার সমস্যা সহ নানা কারণে চাষিরা ছোট দানা যুক্ত এই সব সুগন্ধী ধান চাষ থেকে সরে এসেছেন। তবে এবছর বহরমপুর ব্লকে ২০ একর জমিতে আত্মা প্রকল্পের মাধ্যমে গোবিন্দভোগের চাষ করানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE